চৌধুরী, সুলতান আহমেদ
চৌধুরী, সুলতান আহমেদ (১৯১০-১৯৯৮) প্রখ্যাত শিশুবিশেষজ্ঞ, ইমেরিটাস অধ্যাপক। তিনি ১৯১০ সালে চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। সুলতান আহমেদ চৌধুরী ১৯৩৫ সালে কলকাতা মেডিকেল কলেজ থেকে মেডিসিনে ব্যাচেলর (এমবি) ডিগ্রি অর্জন করেন। পরবর্তীতে, ১৯৩৭ সালে কলকাতা স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড হাইজিন থেকে ট্রপিক্যাল মেডিসিন (DTM) ডিপ্লোমা এবং ১৯৩৮ সালে কলকাতার অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ হাইজিন অ্যান্ড পাবলিক হেলথ থেকে ডিপ্লোমা ইন পাবলিক হেলথ (DPH) ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ১৯৪৯ সাল থেকে ১৯৫১ সাল পর্যন্ত ২বছর পেডিয়াট্রিক্স এবং মেডিসিনে উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য যুক্তরাজ্যে ছিলেন। তিনি ১৯৫০ সালে লন্ডনের ইনস্টিটিউট অফ চাইল্ড হেলথ থেকে ডিপ্লোমা ইন চাইল্ড হেলথ (DCH) লাভ করেন।
ডা. আহমেদ কলকাতা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হাউস সার্জন ছিলেন। এছাড়া কলকাতার স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিন-এর ট্রপিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড ডার্মাটোলজিতে গবেষণা সহকারী, বগুড়া ও রংপুর-এর স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, কলকাতা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সিনিয়র হাউস ফিজিশিয়ান; হুগলির শ্রীরামপুরে ওয়ালশ হাসপাতাল-এর মেডিকেল অফিসার, কলকাতা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক, বগুড়ায় সিভিল সার্জন এবং ভারতে জলপাইগুড়ি জ্যাকসন মেডিকেল স্কুল-এর মেডিসিনের শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি কলকাতা মেডিকেল কলেজে তাঁর সম্পূর্ণ কর্মজীবনে মহসিন স্কলার হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। তিনি চিকিৎসা আইনশাস্ত্রে শ্রেণী সহকারী ছিলেন এবং এই বিষয়ে বিশেষ দক্ষতার জন্য স্বর্ণপদক লাভ করেন।
১৯৬১ সাল থেকে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এবং পরবর্তীতে সেখানে ক্লিনিক্যাল মেডিসিনের অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চর্ম ও ভেনেরিয়াল ডিজিজ বিভাগ-এর বহির্বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা এবং এর দায়িত্বে ছিলেন। তিনি ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে শিশুরোগ বিভাগের একজন সহযোগী অধ্যাপক ছিলেন। ১৯৭২ সালের শুরু থেকে ঢাকা শিশু হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক এবং পেডিয়াট্রিক্সের অধ্যাপক এবং একই বছর থেকে শিশু স্বাস্থ্যের ইমেরিটাস অধ্যাপক ছিলেন। তিনি হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালের কনসালটেন্ট অফ পেডিয়াট্রিশিয়ান (১৯৭২-১৯৭৮), ঢাকার আইপিজিএমআর-এর অনারারি প্রফেসর এবং কনসালটেন্ট অফ পেডিয়াট্রিশিয়ান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট এর উপদেষ্টা ছিলেন।
ডা. চৌধুরী চিকিৎসা আইনশাস্ত্রে বেশ কয়েকটি পুরস্কার এবং স্বর্ণপদক পেয়েছেন, এছাড়া চিকিৎসা বিজ্ঞান এবং শিশুরোগ ক্ষেত্রে সেবার ক্ষেত্রে তাঁর মহান অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘বাংলাদেশ পেডিয়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশন অ্যাওয়ার্ড’ (১৯৯০), ‘ইবনে সিনা ট্রাস্ট অ্যাওয়ার্ড’ (১৯৯১) অর্জন করেন। বৈজ্ঞানিক শিক্ষা ও গবেষণার অগ্রগতির জন্য তিনি তাঁর নামে বেশ কিছু পুরস্কার প্রবর্তন করেন। ডা. চৌধুরী একজন বিশিষ্ট শিশু বিশেষজ্ঞ হিসেবে বেশ কয়েকটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার যেমন জেনেভার ইন্টারন্যাশনাল কলেজ অফ পেডিয়াট্রিক্স এবং বাংলাদেশ একাডেমি অফ সায়েন্সেস (১৯৮৫)-এর ফেলো ছিলেন। ডা. সুলতান আহমেদ চৌধুরী শিশুদের শৈশবকালীন সমস্যা, বিশেষ করে পুষ্টিহীনতা, বিভিন্ন সংক্রমণজনিত রোগ এবং সাধারণ চর্মরোগের উপর বেশ কিছু বৈজ্ঞানিক গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছেন।
বিশিষ্ট এই চিকিৎসক ১০ই অক্টোবর ১৯৯৮ সালে মৃত্যুবরণ করেন। [ইয়ারুল কবীর]