চৌধুরী, গিয়াস কামাল
চৌধুরী, গিয়াস কামাল (১৯৩৯-২০১৩) প্রখ্যাত সাংবাদিক, কলামিস্ট ও সংবাদ বিশ্লেষক। গিয়াস কামাল চৌধুরীর পৈত্রিক নিবাস ফেনী জেলার সদর উপজেলার শার্শাদি গ্রামে। তাঁর জন্ম ১৯৩৯ সালের ২১শে জুলাই পিতার কর্মস্থল চট্টগ্রাম শহরের নন্দনকাননে। গিয়াস কামাল চৌধুরীর পিতার নাম রফিক উদ্দিন চৌধুরী এবং মাতা মুনীরা আখতার খাতুন।
গিয়াস কামাল চৌধুরী ফেনী হাইস্কুল (বর্তমানে সরকারি পাইলট স্কুল) থেকে মাধ্যমিক এবং কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম.এ, এল.এল.বি এবং জার্নালিজম বিষয়ে ডিপ্লোমা ডিগ্রি অর্জন করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ই তিনি ছাত্র আন্দোলনের সাথে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হন। সরকারবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেয়ার অভিযোগে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার হয়েছিলেন।
১৯৬৪ খ্রিষ্টাব্দে ইত্তেফাক গ্রুপ থেকে প্রকাশিত ঢাকা টাইমস পত্রিকার মাধ্যমে গিয়াস কামাল চৌধুরীর সাংবাদিকতা জীবন শুরু। পরবর্তীকালে তিনি ইংরেজি দৈনিক মর্নিং নিউজ পত্রিকায় যোগ দেন। অবিভক্ত পাকিস্তানের শীর্ষ দৈনিক ডন পত্রিকাতেও তিনি কাজ করেছেন। স্বাধীন বাংলাদেশে দীর্ঘসময় তিনি বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসাস)-য় কর্মরত ছিলেন এবং এ প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্বপালন করেন। ‘ভয়েস অব আমেরিকা’র ঢাকা সংবাদদাতা হিসেবে তিনি দীর্ঘদিন কাজ করেন। গত শতাব্দীর ৮০-র দশকে এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় ‘ভয়েজ অব আমেরিকা’য় তাঁর বস্তুনিষ্ঠ ও নির্ভরযোগ্য রিপোর্টের জন্য বাংলাদেশের সংগ্রামী জনতাসহ বিশ্বের বাংলাভাষী মানুষ উৎসাহ ভরে অপেক্ষায় থাকতেন। শেষ জীবনে তিনি দৈনিক খবরপত্র পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বপালন করেন। সাংবাদিকতার বাইরে তিনি লন্ডনে বাংলাদেশ হাই কমিশনের ইকোনোমিক মিনিস্টার হিসেবে কর্তব্যরত ছিলেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ও সিন্ডিকেটের সদস্য ছিলেন।
গিয়াস কামাল চৌধুরী বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে), ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) এবং জাতীয় প্রেসক্লাবের নির্বাচিত সভাপতি হিসেবে একাধিক মেয়াদে দায়িত্ব পালন করেন। সার্ক সাংবাদিক ফোরামের সঙ্গেও তিনি সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা এবং সাংবাদিক সমাজের পেশাগত অধিকার আদায়ের আন্দোলনে তিনি ছিলেন বলিষ্ঠ কণ্ঠ। বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক আন্দোলনেও তিনি সক্রিয় ভূমিকা রাখেন।
গিয়াস কামাল চৌধুরী একজন জাতীয়তাবাদী ও দেশপ্রেমিক সাংবাদিক হিসাবে সুপরিচিত ছিলেন। সক্রিয় রাজনীতির সাথে যুক্ত না থাকলেও তিনি সাম্রাজ্যবাদ ও আধিপত্যবাদ, স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে রাজনীতিবিদদের সাথে সমান তালে সংগ্রাম করেছেন। তিনি মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর একনিষ্ঠ অনুসারী হিসেবে দেশ ও জাতির স্বার্থ রক্ষার জন্য আজীবন সংগ্রাম এবং তাঁর লেখনি অব্যাহত রেখেছেন। ব্যক্তিস্বার্থের ঊর্ধ্বে সাংবাদিকতা ও সেবামূলক কাজের জন্য তিনি জীবনে বহু সম্মাননাসূচক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। ১৯৯২ সালে তিনি বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার ‘একুশে পদক’ প্রাপ্ত হন। গিয়াস কামাল চৌধুরী ২০১৩ সালের ২৬শে অক্টোবর ৭৪ বছর বয়সে ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। [মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান]