চৌদ্দগ্রাম উপজেলা

চৌদ্দগ্রাম উপজেলা (কুমিল্লা জেলা)  আয়তন: ২৭০.৪৯ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৩°০৩´ থেকে ২৩°২২´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১°১২´ থেকে ৯১°২২´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা, দক্ষিণে ফেনী সদর ও দাগনভূঁইয়া উপজেলা, পূর্বে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য, পশ্চিমে নাঙ্গলকোট ও লাকসাম উপজেলা।

জনসংখ্যা ৪৪৩৬৪৮; পুরুষ ২০৮১৪৮, মহিলা ২৩৫৫০০। মুসলিম ৪৩৫৫৭৫, হিন্দু ৭৭৪৯, বৌদ্ধ ৩১৭, খ্রিস্টান ২ এবং অন্যান্য ৫।

জলাশয় প্রধান নদী: ডাকাতিয়া ও ছোট ফেনী; কালা গাং খাল, বালুঝুরি গাং খাল, নানহারি গাং খাল, পাপোলিয়া গাং খাল এবং জগন্নাথ দিঘি, হেনাপলি দিঘি, থানাবাড়ি দিঘি ও কাশিপুর দিঘি উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন চৌদ্দগ্রাম  থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
১৩ ৩৬৬ ৪০৩ ৩৮৩১৭ ৪০৫৩৩১ ১৬৪০ ৬৩.০ ৫৬.৩
পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
১৬.৬৪ ২৭ ৩৮৩১৭ ২৩০৩ ৬৩.০
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
আলকারা ১০ ৪৮৯৩ ১৬৬২৫ ১৮৮২১ ৫৯.৮
উজিরপুর ৯৫ ৪১২১ ১৪৪৫৬ ১৫৪৮৬ ৫৫.৮
কনকাপৈত ৫৭ ৪৭১৩ ১২৩৯৪ ১৪৮৭৬ ৫৬.০
কালিকাপুর ৫২ ৩৩৩০ ৯৩৭৩ ১০৪০৯ ৫৬.০
কাশিনগর ৬১ ৬৮৬২ ১৫৭০৫ ১৭৬২৩ ৫৬.২
গুনবতী ৪২ ৫৪৫১ ১৭২৩২ ১৯৬৭৪ ৫৯.৯
ঘোলপাশা ৩৮ ৪৬৬৭ ১২৫৭৪ ১৪৫৮৬ ৪৯.৬
চিওড়া ১৯ ৫৪৭৫ ১৫২৯২ ১৭২৭১ ৫৭.২
জগন্নাথ দিঘি ৪৭ ৩৬৫৭ ১২০৫৭ ১৩৭৯০ ৫৯.৫
বাতিসা ১৫ ৩১৬১ ১২১৪৫ ১৩৫৮০ ৫৮.৯
মুন্সীরহাট ৭১ ৫০০১ ১৫৮০৪ ১৮৫৬০ ৫৬.৫
শুভপুর ৮৫ ৬১১৯ ২১২৬২ ২৪৭৬৮ ৪৯.১
শ্রীপুর ৯০ ৫২১২ ১৪৩৯১ ১৬৫৭৭ ৫২.৫

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ চান্দিসকরা সেনবাহাদুর বাড়ী (আঠার শতক), কালীমন্দির, বর্ধনরাজার মুড়া (বর্ধনমুড়া), জগন্নাথ দিঘি, সুয়ামার দিঘি।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালের ২৮ নভেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা পাকবাহিনীর জগন্নাথ দিঘি ক্যাম্প দখল করে। পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের কয়েকটি খ- লড়াইয়ে উপজেলার ২৫ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ৭ ডিসেম্বর এ উপজেলা শত্রুমুক্ত হয়। উপজেলায় মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে ১টি স্মৃতিস্তম্ভ (বেতিয়ারা) স্থাপিত হয়েছে।

বিস্তারিত দেখুন চৌদ্দগ্রাম উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৩।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৮৫৮, মন্দির ২৮, বৌদ্ধবিহার ২, প্যাগোডা ১।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৫৬.৯%; পুরুষ ৫৭.১%, মহিলা ৫৬.৮%। কলেজ ১২, কারিগরি কলেজ ১, পালি কলেজ ১, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৫৩, প্রাথমিক বিদ্যালয় ২০৩, কিন্ডার গার্টেন ৩০, ব্রাক স্কুল ৭৯, মাদ্রাসা ৬১। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: চিওড়া সরকারি কলেজ (১৯৭২), চৌদ্দগ্রাম সরকারি কলেজ (১৯৭২), পায়েরখোলা উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৮২), বাতিসা মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯০৬), চৌদ্দগ্রাম এইচ.জে পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২১), মুন্সীরহাট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৫৪), ছুপুয়া ছফরিয়া সিনিয়র (ফাজিল) মাদ্রাসা (১৯২২), কাশিনগর ইসলামীয়া আলিম মাদ্রাসা (১৯১০)।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকি  সাপ্তাহিক: চৌদ্দগ্রাম, চৌদ্দগ্রাম সংবাদ, চৌদ্দগ্রামের আলো।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ক্লাব ৩৩, মহিলা সংস্থা ৯, নাট্যমঞ্চ ১, সিনেমা হল ১, খেলার মাঠ ১৫।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৩৮.৩৬%, অকৃষি শ্রমিক ২.৮০%, শিল্প ০.৭১%, ব্যবসা ১৪.৬০%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৪.৩৯%, চাকরি ১৬.৪২%, নির্মাণ ১.৩৩%, ধর্মীয় সেবা ০.৩০%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ১১.০৭% এবং অন্যান্য ১০.০২%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৫৯.৮৪%, ভূমিহীন ৪০.১৬%। শহরে ৫৭.৬২% এবং গ্রামে ৫৯.৯২% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, ভূট্টা, গম, সরিষা, আলু, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি কাউন, তিসি, পাট।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, নারিকেল, তাল, কুল, পেঁপে।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার হ্যাচারি ৯, নার্সারি ৩০, মৎস্য ১৮, হাঁস-মুরগি ১৫০, গবাদিপশু ৫০।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ১১৮৪ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ২৫ কিমি, কাঁচারাস্তা ৯৬০ কিমি; রেলপথ ৫ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, গরুর গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা চালকল, আটাকল, তেলকল, লবণ, চানাচুর, সাবান, জুতা ফ্যাক্টরি, এলুমিনিয়াম ফ্যাক্টরি, সিলিকা ফ্যাক্টরি ও পোশাক শিল্প প্রভৃতি।

কুটিরশিল্প  সূচিশিল্প, বুননশিল্প, কারুশিল্প, লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, বাঁশের কাজ, বেতের কাজ, প্রভৃতি।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ৫২। মিয়া বাজার, চৌদ্দগ্রাম বাজার, গুণবতী বাজার, বাতিসা বাজার, ধোরকারা বাজার, কনকাপৈত বাজার ও মুন্সীরহাট এবং মাঘ মাসের মেলা (লতিফ শিকদার মাজারের নিকট) ও কালীর-বাজার মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য তৈরি পোশাক।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৮০.৪% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

প্রাকৃতিক সম্পদ আমানডাঙ্গা শালবন।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯২.২%, ট্যাপ ২.৯% এবং অন্যান্য ৪.৯%। এ উপজেলার অগভীর নলকূপের পানিতে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিকের উপস্থিতি প্রমাণিত হয়েছে।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা উপজেলার ৭২.৫% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ২৫.০% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ২.৫% পরিবারের কোনো স্যানিটেশন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, হাসপাতাল ১১, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ৭, মাতৃসদন ১, ক্লিনিক ৭, উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র ১, পল্লীস্বাস্থ্য কেন্দ্র ১, কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্র ৪।

এনজিও ব্র্যাক, আশা, রিডো, লীড ফাউন্ডেশন। [এ.কে.এম জসিম উদ্দিন]

তথ্যসূত্র  আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; চৌদ্দগ্রাম উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন  ২০০৭।