চুক্তি আইন (১৮৭২ সালের ৯ নং আইন)
চুক্তি আইন (১৮৭২ সালের ৯ নং আইন) ১৮৭২ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে বাংলায় কার্যকর করা হয় এবং বাংলাদেশে তা কোনো প্রকার পরিবর্তন ছাড়াই পরিগ্রহণ করা হয়। এতে রয়েছে চুক্তি-সংক্রান্ত সাধারণ বিধিসমূহ এবং তার সাথে সম্পৃক্ত বিভিন্ন প্রকার চুক্তির মধ্যে পার্থক্যের বর্ণনা। আইনটিতে ১১টি অধ্যায়ের অধীন ২৩৪টি প্রধান ধারা রয়েছে। আইনটির শুরুতে রয়েছে একটি সংক্ষিপ্ত প্রস্তাবনা ও শিরোনাম, আইনটির ব্যাপ্তি ও তা কার্যকরি হওয়ার তারিখ এবং এতে ব্যবহূত পরিশব্দাবলির ব্যাখ্যা।
প্রথম অধ্যায়ে বর্ণনা করা হয়েছে যোগাযোগের পদ্ধতি, স্বীকৃতি, প্রত্যাহার এবং প্রস্তাবকে অঙ্গীকারে রূপান্তরকরণ। দ্বিতীয় অধ্যায়ে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের চুক্তি, বাতিলযোগ্য চুক্তি এবং বাতিলকৃত চুক্তির সংজ্ঞা ও ব্যাখ্যা। এ অধ্যায়ে আরও রয়েছে বিধিসম্মত ব্যাখ্যাসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় শব্দ, যেমন সম্মতি, উন্মুক্ত সম্মতি, অন্যায্য প্রভাব, প্রতারণা এবং ভ্রমাত্মক উপস্থাপনা ইত্যাদির সংজ্ঞা। চুক্তির পক্ষভুক্ত হওয়ার জন্য ব্যক্তিবিশেষের যোগ্যতা এবং চুক্তি বাতিলের শর্তাবলি এ অধ্যায়ে বিশদভাবে বর্ণিত হয়েছে। আকস্মিক চুক্তিসমূহ ও তাদের অন্তর্নিহিত ব্যাখ্যাবলি এবং তাদের প্রয়োগযোগ্যতা তৃতীয় অধ্যায়ের বিষয়বস্ত্ত। চতুর্থ অধ্যায়ে ব্যাখ্যা প্রদান করা হয়েছে চুক্তি সম্পাদনে পক্ষসমূহের আইনগত বাধ্যবাধকতা, চুক্তি সম্পাদনের প্রস্তাব গ্রহণে ও প্রতিশ্রুতি পালনে তাদের অস্বীকৃতির পরিণতি, এ ধরনের অস্বীকৃতির প্রভাব বা ফলাফল, সম্পাদনের সময় ও স্থান, পারস্পরিক অঙ্গীকার প্রতিপালন, বিধিসম্মত ব্যবস্থাসহ অর্থ প্রদানের ব্যবস্থা এবং কখন ও কার দ্বারা চুক্তিসমূহ সম্পাদিত হবে অথবা সম্পাদন করা প্রয়োজন হবে না সেসব বিষয়। এ অধ্যায়ে আরও বর্ণিত হয়েছে, চুক্তিতে নতুন কিছু প্রবর্তন, বাতিল ও পরিবর্তন, বাতিলযোগ্য চুক্তি বাতিলের ফলাফল এবং বাতিলকৃত চুক্তির ফলে যে সকল ব্যক্তি সুবিধাপ্রাপ্ত হয়েছে তাদের বাধ্যবাধকতা। চুক্তি সম্পাদনে অক্ষম ব্যক্তিদের সরবরাহকৃত অপরিহার্য দ্রব্যাদির দাবি এবং যে সকল ব্যক্তি তাদের স্বার্থ-সম্পৃক্ত বিষয়ের জন্য অন্যের পক্ষে তার প্রদেয় অর্থ প্রদান করেছে তাদের ব্যয়িত অর্থ পরিশোধকরণ সম্পর্কিত বিষয়গুলি পঞ্চম অধ্যায়ে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এ অধ্যায়ে বিশদভাবে আরও বর্ণনা করা হয়েছে দাতব্য নয় এমন কাজের জন্য সুবিধাদি ভোগকারী ব্যক্তিদের বাধ্যবাধকতা ও জিম্মাদারের দায়িত্ব এবং ভুলক্রমে টাকা প্রদান করা হয়েছে এমন সব ব্যক্তিদের টাকা ফেরত প্রদানের বিধান।
ষষ্ঠ অধ্যায়ে চুক্তি ভঙ্গ করার পরিণতি বর্ণনা করা হয়েছে। চুক্তি ভঙ্গ করার জন্য ক্ষতি বা লোকসান ও চুক্তিবলে সৃষ্ট বাধ্যবাধকতা প্রতিপালনে ব্যর্থতার জন্য ক্ষতিপূরণ এবং ক্ষতিপূরণ প্রাপ্তির অধিকার এ অধ্যায়ে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। দ্রব্যাদি বিক্রয়-সংশ্লিষ্ট সপ্তম অধ্যায়টি ১৯৩০ সালের দ্রব্যাদি বিক্রয় আইন (১৯৩০ সালের ৩ নং আইন) দ্বারা রদ করা হয়েছে। নিরাপত্তা বিধান ও অঙ্গীকার প্রদানের প্রশস্ত ক্ষেত্রের অধীনে অষ্টম অধ্যায়ে নিরাপত্তা বিধানের চুক্তি, অঙ্গীকার প্রদানের চুক্তি, জামানত বা জামিন এবং মুখ্য দেনাদার ও ঋণদাতার সংজ্ঞা প্রদান করা হয়েছে। অঙ্গীকার বিবেচনা, জামিনদারের দায়দায়িত্ব, বিদ্যমান অঙ্গীকার, বিভিন্ন অবস্থায় চলতে থাকা অঙ্গীকার প্রত্যাহার, জামিনদার ও সহ-জামিনদারের অধিকার ও বাধ্যবাধকতা সম্বন্ধে এ অধ্যায়ে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। ঋণদাতার জামিনের ওপর জামিনদারের সুবিধার অধিকার, জামিনের নিরাপত্তার প্রতিবিধান করার নিহিত অঙ্গীকার এবং বিভিন্ন অঙ্কসহ জামিনদারের দায়দায়িত্ব বিষয়গুলিও এ অধ্যায়ে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। নবম অধ্যায়ে জিম্মাদান বিষয়টি বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে। জিম্মাদারের নিকট হস্তান্তরের পদ্ধতি, জিম্মাদাতা কর্তৃক জিম্মাকৃত দ্রব্যের ত্রুটিসমূহ প্রকাশ করা এবং জিম্মাদার কর্তৃক জিম্মাকৃত দ্রব্যের দেখাশোনা করা এ অধ্যায়ে বর্ণনা করা হয়েছে। জিম্মাকৃত দ্রব্য হারিয়ে গেলে বা নষ্ট হলে জিম্মাদারের দায়িত্ব, শর্তাবলির পরিপন্থি জিম্মাদারের কাজের জন্য জিম্মা বাতিলকরণ এবং ক্ষমতা-বহির্ভূতভাবে জামিনদার কর্তৃক জামিনকৃত দ্রব্যাদি ব্যবহার সম্পর্কিত বিষয় এ অধ্যায়ের বিভিন্ন ধারায় বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। অধ্যায়টিতে আরও বিশদভাবে যে সমস্ত বিষয়াদি আলোচিত হয়েছে, সেগুলি হচ্ছে জামিনদাতার সম্মতি সাপেক্ষে অথবা ব্যতিরেকে দ্রব্যাদি সংমিশ্রণের ফল, জিম্মাদাতা কর্তৃক প্রয়োজনীয় খরচ উশুল, স্বার্থহীনভাবে ধারে প্রদত্ত দ্রব্যাদি পুনঃগুদামজাতকরণ, জিম্মাদারের প্রতি জিম্মাদাতার দায়িত্বাবলি, যৌথ মালিকদের জিম্মাদান, জিম্মাকৃত দ্রব্যের ওপর তৃতীয় পক্ষের দাবির অধিকার, জিম্মাদারের নির্দিষ্ট লিয়েন, ব্যাংকার ফড়িয়া, কর সংগ্রাহক এবং বীমা দালালদের সাধারণ লিয়েন। এ অধ্যায়ের ‘জামানতের জিম্মাদান’ উপ-শিরোনামে একটি ধারায় বন্ধক, বন্ধকদার ও বন্ধকদাতার সংজ্ঞা প্রদান করা হয়েছে এবং বিধান অমান্যকারীর বিরুদ্ধে জিম্মাদার কিংবা জিম্মাদাতা কর্তৃক মামলা দায়েরের বিধানসহ তাদের অধিকার ও দায়িত্বাবলির ব্যাখ্যা প্রদান করা হয়েছে।
দশম অধ্যায়ে এজেন্ট ও সাব এজেন্ট নিয়োগ, তাদের ক্ষমতা এবং আইনগত দিক বর্ণনা করা হয়েছে। এজেন্ট হিসেবে নিয়োগ দানের জন্য যোগ্যতা, তাদের কর্তব্য ও দায়িত্ব, সাব এজেন্টদের নিয়োগ এবং তাদের দায়িত্ব ও জবাবদিহিতা, এজেন্ট ও সাব এজেন্টদের মধ্যে সম্পর্ক এবং তাদের সাথে প্রধান পক্ষের সম্পর্ক ইত্যাদি বিষয়ের জন্য এ অধ্যায়ে বিস্তারিত বিধান রাখা হয়েছে। এতে অর্পিত ক্ষমতা প্রত্যাহারের জন্যও বিধান রাখা হয়েছে। এ অধ্যায়ে আরও ব্যাখ্যা করা হয়েছে এজেন্টের প্রতি প্রধান পক্ষের কর্তব্য এবং তৃতীয় পক্ষের সাথে চুক্তির ফলে এজেন্সির পরিণতি। একাদশ অধ্যায়ের বিষয়বস্ত্ত ছিল অংশীদারিত্ব। ১৯৩২ সালের অংশীদারিত্ব আইনবলে (১৯৩২ সালের ৯ নং আইন) এ অধ্যায়টি রদ করা হয়। চুক্তি আইনের সবশেষে ছিল কয়েকটি তফশিল। তফশিলগুলি ১৯১৩ সালের রহিতকরণ ও সংশোধনী আইন (১৯১৪ সালের ১০ নং আইন) দ্বারা রদ করা হয়েছে। [আবুল কালাম আজাদ]