চালচিত্র
চালচিত্র দেবদেবীর প্রতিমার মাথার ওপরের কিংবা পেছনের সচিত্র ছাদ বা আচ্ছাদন। এর ব্যবহার অনেক আগেকার পাথরের মূর্তিতে দেখা যায়। তা থেকে মাটির তৈরি মূর্তিশিল্পে এ ধারা অনুসৃত হয়। বর্তমানে সাধারণত দুর্গাপ্রতিমার পেছনের চিত্রময় অর্ধবৃত্তাকার অংশই চালচিত্র নামে পরিচিত।
চালচিত্র শুধু মূর্তির সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্যই উদ্ভূত হয়নি; এর চিত্রকলার একটি নিজস্ব রূপরেখা ও শৈলীগত দৃঢ় বুনিয়াদও রয়েছে। পটে বা কাগজে চালচিত্র অাঁকার রেওয়াজ বহুকাল ধরে চলে আসছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কাপড়ের ওপর কাগজ লাগিয়ে তার ওপর মাটির প্রলেপ দিয়ে প্রথমে জমি তৈরি করা হয়। কখনও কখনও আবার জমি তৈরি করতে মাটির সঙ্গে কঞ্চি এবং দরমাও ব্যবহার করা হয়। এরপর জমির ওপর খড়িমাটির সাহায্যে বা চুনকাম করে সাদা রং লাগান হয়। এ সাদা রঙের ওপর নানা ছবি অাঁকা হয়, যেমন: শিব, শিবের অনুচর, দেবাসুরের যুদ্ধের দৃশ্য, কালীমূর্তি, রাধাকৃষ্ণ, রামচন্দ্রের অভিষেক ইত্যাদি।
পুরনো চালচিত্রের সবকটি নিদর্শনের কেন্দ্র-শীর্ষে মহাদেবের চিত্র দেখা যায়। দেবীদুর্গার চালচিত্রে পুত্রকন্যা-পরিবৃত যে মহিষাসুরমর্দিনীকে দেখা যায়, তার মূলে রয়েছে বাঙালির গৃহীমন এবং যৌথ পারিবারিক চেতনা। শিব-পরিবারের এ বিন্যাসরীতিতে বাঙালি পটুয়া শিল্পীর সামাজিক অভিজ্ঞতা আরোপিত হয়েছে।
চালচিত্র অনেক সময় লোকায়ত পটের ঢঙে অঙ্কিত হলেও মহিষমর্দিনী দুর্গার সাবেকি ঢঙের মাটির প্রতিমাতে এর উপস্থিতি সহজ ও স্বাভাবিক। দুর্গামূর্তি ছাড়াও জগদ্ধাত্রী এবং বাসন্তী-দুর্গার (বসন্তকালে আরাধ্যা দেবী) মূর্তির পেছনেও চালচিত্র দেখা যায়। গুরুসদয় সংগ্রহশালা ও আশুতোষ মিউজিয়ামে রক্ষিত চালচিত্রগুলিতে বৈচিত্র্য লক্ষ্য করা যায়। বর্তমানে বাংলার চালচিত্র দেব-ভাস্কর্যশিল্পের বিবর্তিত লৌকিক শিল্পের এক অনবদ্য চিত্ররূপ। [শীলা বসাক]