চরফ্যাশন উপজেলা

চরফ্যাশন উপজেলা (ভোলা জেলা)  আয়তন: ১১০৬.৩১ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২১°৫৪´ থেকে ২২°১৬´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°৩৪´ থেকে ৯০°৫০´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে লালমোহন উপজেলা, দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর, পূর্বে মনপুরা উপজেলা এবং বঙ্গোপসাগর, পশ্চিমে দশমিনা ও গলাচিপা উপজেলা। উপজেলায় শতাধিক চর রয়েছে। এদের মধ্যে চর কুকরী মুকরী, ঢালচর, চর মানিকা, চর আইচা, চর নিজাম, চর মাদ্রাজ, চর নিউটন ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

জনসংখ্যা ৪৫৬৪৩৭; পুরুষ ২২৮৬৯৩, মহিলা ২২৭৭৪৪ (আদমশুমারি ২০১১)। মুসলিম ৪০৩০৪৩, হিন্দু ১০৫০৫, বৌদ্ধ ১০, খ্রিস্টান ১৫ এবং অন্যান্য ২০ (আদমশুমারি ২০০১)।

জলাশয় প্রধান নদী: তেঁতুলিয়া, বেতুয়া, তেলাখালী এবং লেটার খাল উল্লেখযোগ্য ।

প্রশাসন থানা গঠিত হয় ১৯৭০ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৫ ডিসেম্বর ১৯৮২ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
১৯ ৬৮ ৭৭ ৪২৯১৫ ৪১৩৫২২ ৪১৩ ৫৬.১ (২০০১) ৪১.৭
পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
৫.৯৫ (২০০১) ১৯৫৯৫ ২৬৪৮ (২০০১) ৭৫.৪
পৌরসভার বাইরে উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
২৫.৭১ (২০০১) ২৩৩২০ ৯২৮ (২০০১) ৪৫.৬
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
আবদুল্লাপুর ১৩ ৭৮৬৫ ৯০৫৩ ৯৫০৯ ৪৩.৯
আবু বকরপুর ১১ ১০১০৮ ৬০৩২ ৬২৭০ ৫৬.৭
আমিনাবাদ ১৫ ৬১৪৫ ৮৫২৯ ৮৯৩২ ৬৪.৯
আসলামপুর ১৯ ৮২৮৪ ১৭৭৩১ ১৭৯৫৩ ৫৩.৭
অধ্যক্ষ নজরুল নগর ১৪ ১৭৬৩৫ ১০৩২৪ ১০৫৩৩ ২৯.৯
ওসমানগঞ্জ ৯৫ ৭১২২ ১১৪৪২ ১১৪৩৫ ৫৬.২
এওয়াজপুর ৫৩ ৫৭৩৬ ১০৩৪৫ ১০৫৮৫ ৫০.৬
চর কুকরী মুকরী ৭০ ২০৩৮৩ ৪২৭৪ ৪০৮৮ ২৮.৯
চর মনিকা ৪৭ ১০১৩৬ ১৬১২৫ ১৫৩৩১ ৩৬.০
চর মাদ্রাজ ৩৮ ১১১৪৪ ১৬৬৭৬ ১৬৫৫৩ ৪৩.৪
চরকলমি ২৮ ৮৪৪৩ ৯৫৮৮ ৯৮৩১ ৩৬.৯
জাহানপুর ৬৩ ৪৫৩৩ ১০১২৩ ১০৩৬১ ৩৫.০
জিন্নাগড় ৬৬ ৭২৩২ ১১৬৮৫ ১১৬৩৫ ৪৫.৬
ঢালচর ৫১ ৫১৮২ ৩৯১৫ ৩৫২১ ৪৪.৮
নীল কমল ৭৬ ৬৯৬৫ ১৫৮৯৮ ১৬৪৪৪ ৩২.১
নুরাবাদ ৮৫ ৮৮৩০ ২০০৪১ ১৯৬৯২ ৩১.৫
মুজিব নগর ৭৩ ৬৪৩৭ ৫৪৫৪ ৪৯৫০ ২২.১
রসুলপুর ৮৮ ১২৭১৫ ১৫৯২৩ ১৫৬৬৫ ৪১.১
হাজারীগঞ্জ ৫৭ ৭৩২৭ ১৫৪১৩ ১৪৯৮৩ ৪২.১

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

মুক্তিযুদ্ধ চরফ্যাশন উপজেলার আমিনাবাদ ও সুনামগঞ্জ ইউনিয়নের মাঝামাঝি স্থানে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাকবাহিনীর লড়াইয়ে ১১ জন মুক্তিযোদ্ধা হতাহত হয়।

বিস্তারিত দেখুন চরফ্যাশন উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৩।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৬০১, মন্দির ৫।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪৩.৫%; পুরুষ ৪৩.১%, মহিলা ৪৩.৮%। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: চরফ্যাশন মহাবিদ্যালয় (১৯৬৮), ফাতেমা মতিন মহিলা কলেজ (১৯৯৩), চরফ্যাশন বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯৬৮), চরফ্যাশন ট্যাফনল ব্যারেট (টিবি) মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯৩২), চরফ্যাশন চেয়ারম্যান হায়দার (মডেল) প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯৩২), চরফ্যাশন কারা মাতিয়া কামিল মাদ্রাসা (১৯৪৫)।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী সাপ্তাহিক: ফ্যাশন বার্তা (অবলুপ্ত), উপকূল বার্তা (অনিয়মিত), প্রথম আকাশ।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ১, ক্লাব ১৫, সিনেমা হল ৬, নাট্যদল ৪, স্টেডিয়াম ১।

জনগোষ্ঠীর প্রধান আয়ের উৎস  কৃষি ৬৮.০৯%, অকৃষি শ্রমিক ৪.৮১%, শিল্প ০.২৩%, ব্যবসা ১০.৪৪%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ১.৯৬%, চাকরি ৪.৪৫%, নির্মাণ ১.০৮%, ধর্মীয় সেবা ০.৩৪%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.২৯% এবং অন্যান্য ৮.৩১%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৫০.৬৯%, ভূমিহীন ৪৯.৩১%। শহরে ৫৩.৯৮% এবং গ্রামে ৫০.৩৫% পরিবারের  কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, গম, মরিচ, ডাল, চিনাবাদাম, সুপারি।

বিলুপ্ত ও বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি  পাট, তিল, তিসি।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, পেঁপে, কলা, সুপারি, তরমুজ।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার এ উপজেলায় মৎস্য, গবাদিপশু, হাঁস-মুরগির খামার ও হ্যাচারি রয়েছে।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ৩০৬ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ১৬ কিমি, কাঁচারাস্তা ৪৩০ কিমি; নৌপথ ৪৬ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন গয়না নৌকা, গরুর গাড়ি, পাল্কি।

কুটিরশিল্প তাঁতশিল্প, স্বর্ণশিল্প, মৃৎশিল্প, লৌহশিল্প, কাঠের কাজ, বেতের কাজ উল্লেখযোগ্য।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ৫৮। চরফ্যাশন হাট, দুলার হাট, গোলদার হাট, লেটরাগঞ্জ বাজার, চেয়ারম্যানের হাট, শশী ভূষন হাট ও বাবুর হাট এবং বৈশাখী মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য ধান, মরিচ, ডাল, চিনাবাদাম, সুপারি, ইলিশ মাছ, চিংড়ি মাছ।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড বিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ১৮.৭% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৩.৩%, ট্যাপ ০.৩% এবং অন্যান্য ৬.৪%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৪৯.৫% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৪১.৯% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ৮.৬% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র হাসপাতাল ২, উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র ১, পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ১, গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্র ১০, পশু হাসপাতাল ১।

এনজিও ব্র্যাক, আশা, অ্যাকশন এইড। [মোঃ হারুনুর রশীদ হেলালী]

তথ্যসূত্র   আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; চরফ্যাশন উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।