চন্দ্রগোমী

চন্দ্রগোমী (আনু. ৭ম শতক)  বৈয়াকরণ। তিববতীয় বিবরণমতে উত্তরবঙ্গের বরেন্দ্রভূমিতে এক  ক্ষত্রিয় পরিবারে তাঁর জন্ম। পরে তিনি বৌদ্ধধর্মে দীক্ষিত হন।

চন্দ্রগোমী নালন্দা মহাবিহারের আচার্য স্থিরমতির শিষ্যত্ব গ্রহণ করে বৌদ্ধশাস্ত্র,  সংস্কৃত ব্যাকরণ, সাহিত্য, তর্কশাস্ত্র প্রভৃতি বিষয়ে পান্ডিত্য অর্জন করেন। প্রসিদ্ধি আছে যে, চন্দ্রগোমী সিংহল ও দক্ষিণ ভারত ভ্রমণ শেষে নালন্দায় ফিরে এলে নালন্দা মহাবিহারের প্রধান আচার্য চন্দ্রকীর্তি তাঁকে সম্মানের সঙ্গে গ্রহণ করেন। পরে তিনি নালন্দার আচার্য পদও অলঙ্কৃত করেন।

ব্যাকরণ ও কাব্য ছাড়াও তিনি বৌদ্ধতান্ত্রিক  বজ্রযান সাধনা বিষয়ে ৩৬টি গ্রন্থ এবং  তারা ও মঞ্জুশ্রী সম্বন্ধে কয়েকটি স্তোত্র রচনা করেন। বৈয়াকরণ, নৈয়ায়িক ও তান্ত্রিক চন্দ্রগোমী একই ব্যক্তি কিনা সে বিষয়ে বিতর্ক আছে। চন্দ্রগোমীর কালও সংশয়াতীত নয়। ভর্তৃহরির বাক্যপদীয় এবং কল্হণের রাজতরঙ্গিণীতে চন্দ্রাচার্য নামক এক বৈয়াকরণ ও তাঁর ব্যাকরণ গ্রন্থের উল্লেখ আছে। অনেকে মনে করেন, চন্দ্রাচার্য ও চন্দ্রগোমী একই ব্যক্তি। বামন-জয়াদিত্যের কাশিকা টীকায় চন্দ্রগোমীর ৩৫টি সূত্র উদ্ধৃত হয়েছে। এসব কারণে মনে করা হয়, চন্দ্রগোমী সম্ভবত সপ্তম শতক কিংবা তাঁর পূর্বেকার।

চন্দ্রগোমীর ব্যাকরণ  চান্দ্রব্যাকরণ নামে প্রসিদ্ধ। পাণিনির অষ্টাধ্যায়ীকে সংক্ষিপ্ত ও সহজ করে তিনি এ ব্যাকরণ রচনা করেন। এটি এককালে সিংহল, কাশ্মীর, তিববত ও নেপালে বহুল প্রচলিত ছিল। ন্যায়সিদ্ধ্যালোক নামক একটি তর্কশাস্ত্রের গ্রন্থও চন্দ্রগোমীর রচিত বলে মনে করা হয়।  [কানাইলাল রায়]