ঘিওর উপজেলা

ঘিওর উপজেলা (মানিকগঞ্জ জেলা)  আয়তন: ১৪৮.৯২ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৩°৪৭´ থেকে ২৩°৫৭´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°৪৯´ থেকে ৮৯°৫৯´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে দৌলতপুর (মানিকগঞ্জ) উপজেলা, দক্ষিণে শিবালয় ও হরিরামপুর উপজেলা, পূর্বে মানিকগঞ্জ সদর ও সাটুরিয়া উপজেলা, পশ্চিমে শিবালয় ও দৌলতপুর উপজেলা।

জনসংখ্যা ১৪৬২৯২; পুরুষ ৭০৯৪৫, মহিলা ৭৫৩৪৭। মুসলিম ১২৭৩৮১, হিন্দু ১৮৯০১, খ্রিস্টান ৬ এবং অন্যান্য ৪।

জলাশয় প্রধান নদী: পুরাতন ধলেশ্বরী, কালীগঙ্গা, ইছামতি ও গাঙডুবি।

প্রশাসন থানা গঠিত হয় ১৯১৯ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
- ১৬৯ ১৮৭ ৬৬৩৫ ১৩৯৬৫৭ ৯৮২ ৬৯.৫ ৫৩.৮
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
৪.২৫ ৬৬৩৫ ১৫৬১ ৬৯.৫
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
ঘিওর ৪৭ ৫০১৫ ১২০৫৭ ১২২৮৭ ৬০.৪
নলি ৫৯ ৪৮৭৭ ৭০১৩ ৭৬৬২ ৫৭.৩
পয়লা ৭১ ৫৮৪১ ৯৬৬৬ ১০১৪৪ ৪৮.১
বড়টিয়া ৩৫ ৫১৩৭ ১০২৬১ ১১১৩৮ ৫০.০
বানিয়াজুড়ি ২৩ ৪৮৪৪ ১২৩৫৮ ১৩৪৪৯ ৬০.৫
বালিয়াখোড়া ১১ ৫৫৩৬ ১০২৭৪ ১০৯২৯ ৫৯.৯
সিংজুড়ি ৮৩ ৫৫৪৯ ৯৩১৬ ৯৭৩৮ ৪২.০

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ শ্রীবাড়ী বড়টিয়া গ্রামের নীলকুঠি, পাঁচথুবির বৌদ্ধবিহার।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালের ২২ নভেম্বর এ উপজেলার তেরশ্রী গ্রামে স্থানীয় রাজাকারদের সহযোগিতায় পাকসেনারা ৪৩ জন নিরীহ লোককে হত্যা করে। মুক্তিযোদ্ধারা ২ বার ঘিওর থানা আক্রমণ করে এবং থানা থেকে প্রচুর গোলাবারুদ হস্তগত করে। এছাড়া উপজেলার কয়েকটি স্থানে তারা কয়েকটি বিচ্ছিন্ন অপারেশনও পরিচালনা করে। উপজেলায় ১টি স্মৃতিফলক ও ১টি স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপিত হয়েছে।

বিস্তারিত দেখুন ঘিওর উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৩।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ১১৮, মন্দির ৬৪, মাযার ১।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৫৪.৫%; পুরুষ ৫৮.৪%, মহিলা ৫০.৮%। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: ঘিওর ডিএন হাইস্কুল (১৯২৯), তেরশ্রী কেএন হাইস্কুল (১৯২২), বানিয়াজুড়ি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪৫), সিংজুড়ি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬৬)।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ক্লাব ৮৩, লাইব্রেরি ২, সিনেমা হল ১, নাট্যদল ২, যাত্রাপার্টি ১।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৫৪.০৩%, অকৃষি শ্রমিক ৩.০১%, শিল্প ১.৮৬%, ব্যবসা ১৬.২৪%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৩.৮৪%, চাকরি ১১.৯৪%, নির্মাণ ২.১৬%, ধর্মীয় সেবা ০.৩৪%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ১.০৪% এবং অন্যান্য ৫.৫৪%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৫৯.০৬%, ভূমিহীন ৪০.৯৪%। শহরে ৭০.১৭% এবং গ্রামে ৫৮.৫৪% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, গম, সরিষা, আলু, পিঁয়াজ, রসুন, মরিচ, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি কাউন, তিসি, তিল, পায়রা, নীল।

প্রধান ফল-ফলাদি  লেবু, আম, কাঁঠাল, পেঁপে, কলা, পেয়ারা, কামরাঙা।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার গবাদিপশু ১৫, হাঁস-মুরগি ২৫০।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকা রাস্তা ৫২ কিমি, আধাপাকা রাস্তা ১২ কিমি, কাঁচা রাস্তা ২২০ কিমি, ব্রিজ ৪৭, কালভার্ট ৪২।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, গরু ও মহিষের গাড়ী।

শিল্প ও কলকারখানা আটা কল, পার্টিকেল বোর্ড, বিড়ি ফ্যাক্টরি ইত্যাদি।

কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, বাঁশশিল্প, বেতশিল্প, লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, তাঁতশিল্প, কাঠের কাজ, সেলাই কাজ প্রভৃতি।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ২৪, মেলা ১১। ঘিওর হাট, ঘিওর রথমেলা, নারচীর দোলের মেলা, পুকুরিয়ার নিমাই চাঁদের মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য পিঁয়াজ, রসুন, মরিচ, শাকসবজি।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৫৩.৫% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৭.২%, ট্যাপ ০.৩% এবং অন্যান্য ২.৫%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৬৭.৯% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ২৯.৮% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ২.৩% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ৮, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৬, ক্লিনিক ৪, পশু চিকিৎসালয় ১।

এনজিও ব্র্যাক, প্রশিকা, আশা।  [মধুসূদন সাহা]

তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; ঘিওর উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।