গ্রামদেবতা

গ্রামদেবতা  গ্রামবাংলার লোকদেবদেবী। যেকোনো বিপদ বা দুর্যোগ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এক সময় প্রতিটি গ্রামেই দেবতা ছিল। তবে গ্রামদেবতা বলতে কোনো নির্দিষ্ট দেবতাকে বোঝাত না। বিভিন্ন গ্রাম  বা অঞ্চলের বিভিন্ন দেবতা ছিল এবং তাদের পূজা-অর্চনার ধরনও ছিল আলাদা। গ্রামে  বসন্ত দেখা দিলে  শীতলা দেবীকে ডাকা হতো। বিশ শতকের মধ্যভাগ পর্যন্ত বাংলাদেশের গ্রামগুলিতে সবচেয়ে বেশি পরিচিত ছিলেন দেবী শীতলা।  কলেরা থেকে রক্ষাকারী ওলাদেবীরও পরিচিতি ছিল। গ্রামদেবতার প্রতীক হিসেবে আরও ছিল সাপ, ভূতপ্রেত, বাঘ এবং পেঁচা।

গ্রামদেবতার পূজার কোনো নির্দিষ্ট রীতিনীতি ছিল না। উনিশ শতকের শেষভাগ পর্যন্ত ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে গ্রামের সকল লোক গ্রামদেবতার পূজায় অংশগ্রহণ করত। এ পূজার নির্দিষ্ট কোনো স্থান বা সময় ছিল না। গ্রামে কলেরা, বসন্ত বা অন্য কোনো মহামারী কিংবা দুর্যোগ দেখা দিলেই লোকেরা এসব গ্রামদেবতার শরণাপন্ন হতো। গ্রামে ভালো ফসল হলেও গ্রামদেবতাকে পূজা দেওয়া হতো। শিক্ষার প্রসার, আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি এবং রোগ-মহামারীর কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে ওঠায় গ্রামে এখন আর গ্রামদেবতার প্রভাব নেই বললেই চলে। [সিরাজুল ইসলাম]