গোলাপগঞ্জ উপজেলা
গোলাপগঞ্জ উপজেলা (সিলেট জেলা) আয়তন: ২৭৮.৩৩ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°৪১´ থেকে ২৪°৫৫´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১°৫৫´ থেকে ৯২°০৬´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে সিলেট সদর, জৈন্তাপুর ও কানাইঘাট উপজেলা, দক্ষিণে ফেঞ্চুগঞ্জ ও বড়লেখা উপজেলা, পূর্বে বিয়ানীবাজার ও বড়লেখা উপজেলা, পশ্চিমে সিলেট সদর উপজেলা।
জনসংখ্যা ৩১৬১৪৯; পুরুষ ১৫৪২৪৯, মহিলা ১৬১৯০০। মুসলিম ৩০২৪৭৯, হিন্দু ১৩৬০৩, বৌদ্ধ ১১, খ্রিস্টান ২৯ এবং অন্যান্য ২৭। এ উপজেলায় মণিপুরী, ত্রিপুরা প্রভৃতি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে।
জলাশয় সুরমা, কুশিয়ারা ও সোনাই নদী এবং সিংগারি, বাঘা, ফাটামাটি, পারইয়া ও সোনাডুবি বিল উল্লেখযোগ্য।
প্রশাসন গোলাপগঞ্জ থানা গঠিত হয় ১৯২২ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে।
উপজেলা | ||||||||
পৌরসভা | ইউনিয়ন | মৌজা | গ্রাম | জনসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | ||
শহর | গ্রাম | শহর | গ্রাম | |||||
১ | ১১ | ৯৮ | ২৪৪ | ৩৭৪৫৭ | ২৭৮৬৯২ | ১১৩৬ | ৫৪.৬৮ (২০০১) | ৫৬.৩ |
পৌরসভা | ||||||||
আয়তন (বর্গ কিমি) | ওয়ার্ড | মহল্লা | লোকসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | |||
- | ৯ | ২৩ | ৩২৪৪৪ | - | ৬২.২ |
উপজেলা শহর | ||||||||
আয়তন (বর্গ কিমি) | মৌজা | লোকসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | ||||
১১.১৪ (২০০১) | ১ | ৫০১৩ | ১৬২১ (২০০১) | ৬০.৫ |
ইউনিয়ন | ||||||||
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড | আয়তন (একর) | লোকসংখ্যা | শিক্ষার হার (%) | |||||
পুরুষ | মহিলা | |||||||
আমুরা ০৬ | ৫০১০ | ৮৮৩৯ | ৯১৫১ | ৫৫.৩ | ||||
উত্তর বাদেপাশা ৭৭ | ৫৪২৮ | ১০৫৮৬ | ১১৯৫৩ | ৫৩.৬ | ||||
গোলাপগঞ্জ ৫১ | ৩১৪৭ | ৭৯৭২ | ৮৩৯২ | ৬০.৩ | ||||
ঢাকা দক্ষিণ ২৫ | ৯০৭৯ | ১৬৬৯৩ | ১৭৬৭৭ | ৬২.৬ | ||||
ফুলবাড়ী ৪৩ | ৫২৪৬ | ১৩৯৯৩ | ১৩৮৮৩ | ৫৬.৯ | ||||
বাঘা ০৮ | ৯৭৭০ | ১৬৬২৪ | ১৭৩২৭ | ৫০.৭ | ||||
বুধবারী বাজার ২০ | ২৮০৭ | ৮৪৮৩ | ৮৭৮৪ | ৫৪.০ | ||||
ভাদেশ্বর ১৭ | ৮১৩১ | ১৭৪৭২ | ১৮৮০০ | ৬১.২ | ||||
লক্ষণাবন্দ ৬৯ | ৬৮৪১ | ১৫২১৬ | ১৬১৬০ | ৫৬.৩ | ||||
লক্ষীপাশা ৬০ | ৪৩২৭ | ১১৬২৫ | ১২২৭৬ | ৫৬.৯ | ||||
শরীফগঞ্জ ৩৬ | ৪৯১৩ | ১০৩৪১ | ১১৪৫৮ | ৪৮.৫ |
সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।
প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ হযরত বাহাউদ্দিন(র) মাজার, শ্রীচৈতন্যদেবের বাড়ি ও মন্দির, কৈলাশটিলা ও দেওয়ানের পুল।
ঐতিহাসিক ঘটনা ঐতিহাসিক নানকার বিদ্রোহের অংশ হিসেবে এখানে রণিকেলী বিদ্রোহ ও ভাদেশ্বর বিদ্রোহ সংঘটিত হয়।
মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালের ১৩ এপ্রিল বইটিকরে একটি প্রতিরোধ যুদ্ধ সংঘটিত হয়। পরবর্তীতে গোলাপগঞ্জ উপজেলায় মোকামটিলা, মোল্লারকোনা, হাকালুকি, লামা মেহেরপুর প্রভৃতি স্থানে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের বেশ কয়েকটি যুদ্ধ হয়। উপজেলার সুন্দিশাইলে ১টি গণকবর রয়েছে; ১টি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মিত হয়েছে।
বিস্তারিত দেখুন গোলাপগঞ্জ উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৩।
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৪৪৫, মন্দির ৩, গির্জা ১, মাযার ৯। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: ভাদেশ্বর মোকাম বাজার জামে মসজিদ।
শিক্ষার হার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৫৭.০%; পুরুষ ৫৮.২%, মহিলা ৫৫.৯%। কলেজ ৩, কারিগরি কলেজ ১, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৩৩, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৬০, কমিউনিটি বিদ্যালয় ১৫, কিন্ডার গার্টেন ৬০, মাদ্রাসা ১৯। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: ঢাকা দক্ষিণ ডিগ্রী কলেজ, ভাদেশ্বর মহিলা ডিগ্রী কলেজ, ঢাকা দক্ষিণ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ (১৮৯৮), ভাদেশ্বর নাছির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৯), এমসি একাডেমী (১৯৩৪), ফুলবাড়ীয়া মাদ্রাসা (১৮৮২)।
পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকি সাপ্তাহিক পোলাপ, সোনার সিলেট।
সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ৫, সংগীত একাডেমি ৫, কমিউনিটি সেন্টার ১২, খেলার মাঠ ১০।
দর্শনীয় স্থান বাংলাদেশ স্কাউট সিলেট অঞ্চল, পেট্রোবাংলা, কৈলাশ টিলা, শ্রীচৈতন্যদেবের জন্মস্থান।
জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৩৪.০৫%, অকৃষি শ্রমিক ৬.০৩%, শিল্প ০.৯৪%, ব্যবসা ১৪.৬৪%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৪.০১%, চাকরি ৬.১৬%, নির্মাণ ২.৮৮%, ধর্মীয় সেবা ০.৫৮%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ১৮.৩৪% এবং অন্যান্য ১২.৩৭%।
কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৪২.৭৬%, ভূমিহীন ৫৭.২৪%। শহরে ২৭.৯৮% এবং গ্রামে ৪৩.৯১% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।
প্রধান কৃষি ফসল ধান, কচু, সুপারি, বরবটি, মিষ্টি কুমড়া, মরিচ।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি সরিষা, তিল, তিসি।
প্রধান ফল-ফলাদি কাঁঠাল, আম, লিচু, কলা, লটকন, পেয়ারা, লেবু, বাতাবিলেবু, নারিকেল।
মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার গবাদি পশু ৪০, হাঁস-মুরগি ৭০।
যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ২৫৮ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ৫৪ কিমি, কাঁচারাস্তা ৩৮২ কিমি; নৌপথ ১৮ কিমি; কালভার্ট ৩০০, ব্রিজ ৭০, সেতু ১৪।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, গরুর গাড়ি।
শিল্প ও কলকারখানা এলপি গ্যাস প্লান্ট।
কুটিরশিল্প আইসক্রিম ফ্যাক্টরি, বেকারি, পলিথিন ব্যাগ কারখানা।
হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ৩০, মেলা ১। গোলাপগঞ্জ, ঢাকা দক্ষিণ, ভাদেশ্বর ও মোকাম বাজার এবং চৈত্র সংক্রান্তি মেলা উল্লেখযোগ্য।
প্রধান রপ্তানিদ্রব্য প্রাকৃতিক গ্যাস, বরবটি, মিষ্টি কুমড়া, মরিচ।
বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসুচির আওতাধীন। তবে ৭১.৭% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।
প্রাকৃতিক সম্পদ গ্যাসক্ষেত্র ৪।
পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৮৭.৪%, ট্যাপ ৬.৩% এবং অন্যান্য ৬.২%। এ উপজেলার ১০.০৩% অগভীর নলকূপের পানিতে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিকের উপস্থিতি প্রমাণিত হয়েছে।
স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৬৭.৩% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৩০.৭% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ২.১% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।
স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থকেন্দ্র ১, ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র ১১, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৫, কমিউনিটি ক্লিনিক ১১, মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র ১, ডায়গনস্টিক সেন্টার ৩, পশু চিকিৎসা কেন্দ্র ১।
এনজিও ব্র্যাক, সীমান্তিক প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। [আজিজুল পারভেজ]
তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; গোলাপগঞ্জ উপজেলার মাঠ পর্যায়ের প্রতিবেদন ২০১০।