গোয়াইনঘাট উপজেলা

গোয়াইনঘাট উপজেলা (সিলেট জেলা)  আয়তন: ৪৮১.১২ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°৫৫´ থেকে ২৫°১১´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১°৪৫´ থেকে ৯২°০৭´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে ভারতের মেঘালয় রাজ্য, দক্ষিণে সিলেট সদর ও জৈন্তাপুর উপজেলা, পূর্বে জৈন্তাপুর উপজেলা, পশ্চিমে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা। জাফলং পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ স্থান। তামাবিল স্থল বন্দর দিয়ে কয়লাসহ অন্যান্য পণ্য ভারত থেকে আমদানি হয়।

জনসংখ্যা ২৮৭৫১২; পুরুষ ১৪৩৮৭৭, মহিলা ১৪৩৬৩৫। মুসলিম ২৬৬৭০৮, হিন্দু ১৯৩৩১, বৌদ্ধ ২৬৯, খ্রিস্টান ৯০৫ এবং অন্যান্য ২৯৯। এ উপজেলার জাফলং এলাকায় খাসিয়া আদিবাসী বসবাস করে।

জলাশয় প্রধান নদী: শাড়ি-গোয়াইন, পিয়াইন। দমদম হাওড়, বড় দৈয়া, শিলচাঁদ, বড় ডুঙ্গাই, উনাই, বলালি ও নলকুরি বিল উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন গোয়াইনঘাট থানা গঠিত হয় ১৯০৮ সালে এবং থানাকে উজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
- ২৩৯ ২৬৬ ৬০৬৯ ২৮১৪৪৩ ৫৯৮ ৩৪.৭ ৩২.৭
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজার সংখ্যা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
৩.৫১ ৬০৬৯ ১৭২৯ ৩৪.৭
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
আলীরগাঁও ১০ ২১৬০৩ ২২৯৩৩ ২৩২৭১ ২৪.৩
তোয়াকুল ৮৪ ১২২৯০ ১২৪৩৬ ১২৬৭১ ২৮.৭
নন্দীরগাঁও ৬৩ ১১০৬২ ১১৮৫০ ১১৬২১ ২৯.৪
পশ্চিম জাফলং ৪২ ১৪৭৭২ ২১৭৭৮ ২১৯৯৮ ৩৫.৫
পূর্ব জাফলং ৩১ ১১৯০২ ২৫৬৬৩ ২৫২২৮ ৪০.৩
ফতেহপুর ২১ ১০০৭৮ ৯৮৯৪ ১০০২১ ৩৫.১
রুস্তমপুর ৭৩ ১৭১০৫ ২০২০৪ ১৯৯৫৯ ৩৬.৩
লেঙ্গুরা ৫২ ৮১৩২ ১৯১১৯ ১৮৮৬৬ ২৮.১

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালের ২৮ নভেম্বর গভীর রাতে পাকবাহিনী উপজেলার আলীরগাঁও ইউনিয়নের উজুহাত গ্রামে অতর্কিত হামলা করলে ২৫ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। গোয়াইনঘাটে পাকসেনাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের একাধিক যুদ্ধ হয়। এসবের মধ্যে রাধানগর যুদ্ধ উল্লেখযোগ্য। ২৪ অক্টোবর ও পরবর্তী কয়েকদিন গোয়াইনঘাট পাকসেনা ক্যাম্প অপারেশন পরিচালিত হয়। উপজেলায় তামাবিল জিরো পয়েন্ট, উজুহাত, আটগ্রাম, গোয়াইনঘাট সদর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এলাকা ও বীরকুলিতে ৭টি গণকবর রয়েছে; উপজেলা সদরে ১টি স্মৃতিসৌধ স্থাপিত হয়েছে।

বিস্তারিত দেখুন গোয়াইনঘাট উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৩।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৫০০, মাযার ১০, মন্দির ৮০, গির্জা ১০।

শিক্ষার হার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৩২.৭%; পুরুষ ৩৫.০%, মহিলা ৩০.৪%। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: গোয়াইনঘাট ডিগ্রি কলেজ, আলীরগাঁও উচ্চ বিদ্যালয়, গোয়াইনঘাট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৫২)।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ১, শিল্পকলা একাডেমি ১, অডিটোরিয়াম ১, কমিউনিটি সেন্টার ১, খেলার মাঠ ১০।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৫৯.৪০%, অকৃষি শ্রমিক ১৪.৪৪%, শিল্প ০.৫৫%, ব্যবসা ৯.৫৪%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ০.৬৭%, চাকরি ২.৩৬%, নির্মাণ ০.৪৯%, ধর্মীয় সেবা ০.৪২%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ১.২৪% এবং অন্যান্য ১০.৮৯%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৫৬.৩০%, ভূমিহীন ৪৩.৭০%। শহরে ৫১.৮৯% এবং গ্রামে ৫৬.৪০% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, চা, পান, সরিষা, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি তিল, তিসি, তয়কর, সাতকরা।

প্রধান ফল-ফলাদি পেঁপে, আম, কমলা, কাঁঠাল, কলা, সুপারি, আনারস, বাতাবিলেবু, কুল।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ১০, গবাদিপশু ২, হাঁস-মুরগি ২০।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ১১১ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ২৩ কিমি, কাঁচারাস্তা ৫০৭ কিমি; নৌপথ ৪০ কিমি; কালভার্ট ১৪৪, ব্রিজ ৮৪।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, গরু ও ঘোড়ার গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা পাথর ভাঙার মেশিন, রাইস মিল, ব্রিকফিল্ড, চা প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা, স’মিল।

কুটিরশিল্প বাঁশ শিল্প, বেত শিল্প।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ১৯। উল্লেখযোগ্য হাটবাজার: গোয়াইনঘাট, রাধানগর, জাফলং, বল্লাঘাট, হাদারপাড়, সালুটিকর।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য  চা, পান, কমলা, পাথর, বালি, মাছ।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসুচির আওতাধীন। তবে ৩১.২% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৪৫.৩%, ট্যাপ ০.৪% এবং অন্যান্য ৫৪.৩%। এ উপজেলার ১৩.৭% নলকূপের পানিতে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিকের উপস্থিতি প্রমাণিত হয়েছে।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ২০.৩% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৫৭.০% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ২২.৬% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র ১, পল্লী স্বাস্থ্যকেন্দ্র ১, পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ৫, দাতব্য চিকিৎসালয় ১।

এনজিও ব্র্যাক, এফআইভিডিবি, আশা, টিএমএসএস।  [আবদুল হাই আল-হাদী]

তথ্যসূত্র  আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; গোয়াইনঘাট উপজেলার মাঠ পর্যায়ের প্রতিবেদন ২০১০।