গৈরিকা

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ২০:২১, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)

গৈরিকা  পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের (বর্তমান রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলাত্রয়) প্রথম সাময়িকপত্র গৈরিকা। রাঙ্গামাটির চাকমা রাজবাড়ি থেকে এই পত্রিকা প্রকাশিত হয়েছিল। চাকমা রাণী (পরে রাজমাতা) বিনীতা রায় রাঙ্গামাটি থেকে একটি সাময়িক পত্রিকা প্রকাশের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তখন রাঙ্গামাটিতে ছাপাখানা ছিল না। তাই সাময়িকী প্রকাশ করা কঠিন ছিল। লেখকের সংখ্যাও ছিল কম। বিনীতা রায়ের পিতা ব্যারিস্টার সরলচন্দ্র সেন (ব্রাহ্মধর্ম প্রচারক কেশবচন্দ্র সেনের পুত্র) বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বন্ধু ছিলেন। সে সুবাদে বিনীতা রায় পত্রিকার নামকরণের জন্য রবীন্দ্রনাথকে চিঠি লিখেন। তিনি  পত্রিকার নাম রাখেন গৈরিকা। পত্রিকাটির প্রথম বর্ষ প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হয় ১৩৪৩ বঙ্গাব্দের বৈশাখ মাসে (এপ্রিল-মে ১৯৩৬)। চিত্রশিল্পী চুনীলাল দেওয়ানের আঁকা সুদৃশ্য প্রচ্ছদপট প্রথম সংখ্যা গৈরিকার প্রধান আকর্ষণ ছিল। প্রথম বর্ষে গৈরিকা দু’সংখ্যা প্রকাশিত হয়। সংখ্যা দুটি সম্পাদনা করেন প্রভাত কুমার দেওয়ান। দ্বিতীয় বর্ষ থেকে বৎসরে একটি করে সংখ্যা গৈরিকা প্রকাশিত হয় এবং এ সংখ্যাগুলো সম্পাদনা করেন কবি অরুণ রায়। গৈরিকার প্রচ্ছদে সম্পাদকের নামের পাশে ‘পরিচালিকা-রাণী বিনীতা রায়’ লিখা থাকত। গৈরিকার শেষ সংখ্যাটি প্রকাশিত হয় রাজা নলিনাক্ষ রায়ের মৃত্যুর (৭ অক্টোবর ১৯৫১) অব্যবহিত পরে ১৩৫৮ বঙ্গাব্দে। ১৩৪৩-১৩৫৮ এ ষোল বৎসরে পত্রিকাটির কমপক্ষে চৌদ্দটি সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছে।

গৈরিকা একটি উন্নতমানের পত্রিকা ছিল। এতে স্থানীয় লেখকদের রচনাই বেশি প্রকাশিত হত। গৈরিকায় লিখে অনেকেই হাত পাকিয়েছিলেন। এ পত্রিকাকে কেন্দ্র করে রাঙ্গামাটিতে সর্বপ্রথম একটি সাহিত্যিক গোষ্ঠীর উদ্ভব হয়। একাদশ বর্ষ দ্বাদশ সংখ্যায় প্রকাশিত চুনীলাল দেওয়ানের ‘চাকমা কবিতা’ বাংলা হরফে মুদ্রিত প্রথম চাকমা কবিতা। রাণী বিনীতা রায় কৃত বঙ্গানুবাদ কবিতাটির পাশাপাশি ছাপা হয়েছিল। পরবর্তী সংখ্যায় মুকুন্দ তালুকদারের চাকমা কবিতা ‘পুরান কদা’ প্রকাশিত হয়। সলিল রায় কৃত কবিতাটির বঙ্গানুবাদও পাশাপাশি প্রকাশিত হয়। গৈরিকা চট্টগ্রামের চিটাগাং প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং হাউজ লিমিটেড, লক্ষ্মী নারায়ণ প্রেস ও চট্টগ্রাম প্রবর্তক প্রেসে এবং শেষে মডার্ণ প্রেসে মুদ্রিত হয়েছে। প্রতি সংখ্যার মূল্য প্রথমে ছিল ছয় আনা, পরে তা আট আনায় উন্নীত হয়। গৈরিকায় ধর্ম, দর্শন, ইতিহাস, সাহিত্য, সমাজ ও শিল্প সম্বন্ধীয় প্রবন্ধ এবং ভ্রমণকাহিনী কবিতা, গল্প ও উপন্যাস প্রকাশিত হয়। গৈরিকায় কিছু বেসরকারি বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হয়েছে। গৈরিকার উল্লেখযোগ্য লেখক হলেন বিনীতা রায়, প্রভাতকুমার দেওয়ান, অরুণ রায়, বঙ্কিমকৃষ্ণ দেওয়ান, কুমার কোকনদাক্ষ রায়, ঘনশ্যাম দেওয়ান, ভগবানচন্দ্র বর্মণ, কুমার বিরূপাক্ষ রায়, গোপালচন্দ্র গুর্খা, মাধবচন্দ্র চাকমা কর্মি, বিপুলেশ্বর দেওয়ান, শরৎচন্দ্র তালুকদার, যোগেশচন্দ্র সিংহ, রাজেন্দ্রনাথ তালুকদার প্রমুখ। গৈরিকা ৪র্থ বর্ষ ৫ম সংখ্যায় (অগ্রহায়ণ ১৩৪৬) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘মহাজাতি সদন’ নামে একটি ভাষণ প্রকাশিত হয়েছিল। গৈরিকায় ইংরেজি কবিতা, গল্প ও প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।

সাহিত্যপত্রিকা হলেও গৈরিকায় কিছু কিছু সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। প্রথম সংখ্যায় ‘সাময়িক প্রসঙ্গ’ শিরোনামে পাঁচটি স্থানীয় এবং একটি আন্তর্জাতিক সংবাদ প্রকাশিত হয়। দ্বিতীয় সংখ্যা থেকে বিশ্বপ্রবাহ বিভাগে সংক্ষিপ্ত বিশ্বসংবাদ ছাপা হতে থাকে। চতুর্থ সংখ্যা থেকে বিশ্বপ্রবাহ, পার্বতীয় প্রসঙ্গ (হিলট্রেক্টস বার্তা) ছাড়া ‘ভারতীয় প্রসঙ্গ’ নামে নতুন সংবাদ কলাম খোলা হয়। ষষ্ঠ সংখ্যা থেকে বিশ্বপ্রবাহ ও ভারতীয় প্রসঙ্গ বিভাগ তুলে দেয়া হয়। নবম সংখ্যার পর হিলট্রেক্টস বার্তাও বন্ধ হয়ে যায়।

[নন্দলাল শর্মা]