গুরুদাসপুর উপজেলা

গুরুদাসপুর উপজেলা (নাটোর জেলা)  আয়তন: ২০৩.২০ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°১৮´ থেকে ২৪°২৭´ উত্তর অক্ষাংশ  এবং ৮৮°০৪´ থেকে ৮৯°১৯´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে সিংড়া ও তাড়াস উপজেলা, দক্ষিণে বড়াইগ্রাম উপজেলা, পূর্বে তাড়াস ও চাটমোহর উপজেলা, পশ্চিমে নাটোর সদর উপজেলা।

জনসংখ্যা ২১৪৭৮৮; পুরুষ ১০৭৫২০, মহিলা ১০৭২৬৮। মুসলিম ২০৬৫৭১, হিন্দু ৭৬৮৮, খ্রিস্টান ৬৪ এবং অন্যান্য ৪৬৫। এ উপজেলায় কৈবর্ত, সাঁওতাল, ওঁরাও, পাহান, তুরী ও বাঁশফোড় প্রভৃতি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বাস রয়েছে।

জলাশয় প্রধান নদী: আত্রাই, গুড়, নন্দকুজা।

প্রশাসন গুরুদাসপুর থানা গঠিত হয় ১৯১৭ সালের ২২ জুন এবং থানা উপজেলায় রূপান্তর হয় ১৯৮৪ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব(প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
৯৮ ১১০ ৩২৮০৭ ১৮১৯৮১ ১০৫৭ ৫৪.৬ ৩৯.৬
পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
১৩.৬১ ১৮ ৩২৮০৭ ২৪১১ ৫৪.৬
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
খুবজীপুর ৬০ ৫৫৫৯ ৯৩৪৯ ৯২২২ ৪২.৭
চাপিলা ২৭ ৮৭৬৮ ১৭৩২৯ ১৭৪৬৮ ৪১.১
ধারাবারিষা ৪০ ৮৮১৫ ১৫৬৮৫ ১৫৮১৪ ৪০.৮
নাজিরপুর ৮১ ১০৬৪১ ১৯৬২০ ১৯৬১৯ ৩৮.২
বিয়াঘাট ১৩ ৬৫১৪ ১২২৬৩ ১২১৮৮ ৩৮.৮
মশিন্দা ৬৭ ৬১৪৪ ১৬৬৬১ ১৬৭৬৩ ৩৭.২

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ খুবজীপুর গ্রামের যাদুঘর (১৯৭৮), চলনবিল জাদুঘর, পালশুরা পাটপারা গ্রামে তিনশ বছরের প্রাচীন মসজিদ, পিপলা গ্রামে মুগল আমলের মসজিদ, কুসুমহাটি মসজিদ (সুলতানি আমল), চাপিলা শাহী মসজিদ, গোপীনাথপুর জামে মসজিদ।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালের ১৯ এপ্রিল পাকবাহিনীর সংঘটিত গণহত্যায় দীলিপকুমার সরকার, ডা. মনীন্দ্রনাথ সরকার ও নবরাম মজুমদারসহ শতাধিক ব্যক্তি নিহত হন। উপজেলার বিয়াঘাটে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি যুদ্ধ হয়। এতে ৩ জন পাকসেনা নিহত হয়।

বিস্তারিত দেখুন গুরুদাসপুর উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৩।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ২৫৫, মন্দির ২৮। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: চাপিলা শাহী মসজিদ, সাহাপর রহিম সাধুর মাযার।

শিক্ষার হার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪১.৯%; পুরুষ ৪৪.৭%, মহিলা ৩৯.২%। কলেজ ৮, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৩১, প্রাথমিক বিদ্যালয় ৮১, এনজিও স্কুল ৯৫, নার্সারি স্কুল ৩, মাদ্রাসা ৭৭। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: নাজিমউদ্দিন হাইস্কুল (১৯৫৬), বিলচলন শহীদ সামসুজ্জোহা কলেজ (১৯৬৯), শিকারপুর আলিয়া মাদ্রাসা।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী চলনবিল (সাপ্তাহিক), রক্তিম (১৯৮৪), বিজয় বিনোদন (১৯৯৪), বিজয় দর্পণ (২০০১)।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ক্লাব ৪০, গ্রন্থাগার ৪, সিনেমা হল ২, নাট্যমঞ্চ ১, নাট্য সংগঠন, যাদুঘর ১।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৭০.৯৫%, অকৃষি শ্রমিক ৪.২৮%, শিল্প ১.৩২%, ব্যবসা ১০.২৩%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ২.৫১%, চাকরি ৩.৯৪%, নির্মাণ ০.৮৭%, ধর্মীয় সেবা ০.১৫%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.৩৯% এবং অন্যান্য ৫.৩৬%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৫৪.৮০%, ভূমিহীন ৪৫.২০%। শহরে ৩৫.৮২% এবং গ্রামে ৫৭.৯৯% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, গম, সরিষা, রসুন, পিঁয়াজ, খেসারি, আখ।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি তামাক, তিল ও পাট।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, পেয়ারা, তরমুজ, পেঁপে, লিচু, খেজুর, বেল ও বাতাবিলেবু।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার এ উপজেলায় মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার রয়েছে।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ১৫১ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ৯৬ কিমি, কাঁচারাস্তা ২৩০ কিমি; নৌপথ ৮৭ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, গরু ও মহিষের গাড়ি, ঘোড়ার গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা চাল কল, ইটের ভাটা।

কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, বুনন শিল্প, কাগজশিল্প, কাঠের কাজ, বেতের কাজ, চাটাই।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ১৫, মেলা ২। উল্লেখযোগ্য হাটবাজার ও মেলা: চাচকৈড় বাজার এবং চড়ক ও রথের মেলা।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য   ধান, চাল, মাছ, খেজুর গুড়, আম।

বিদ্যুৎ ব্যবহার উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৪৯.৫% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৪.২%, ট্যাপ ১.৩% এবং অন্যান্য ৪.৫%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা ৬৭.১% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ২৮.৮% অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ৪.১% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, চক্ষু হাসপাতাল ১, পরিবার পরিকল্পনা ক্লিনিক ৪, উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র ৩, ক্লিনিক ৫।

এনজিও আশা, প্রশিকা, ব্র্যাক, পিএসকেএস। [মোঃ এন্তাজ উদ্দিন]

তথ্যসূত্র   আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; গুরুদাসপুর উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।