গুপ্ত, যোগেন্দ্রনাথ
গুপ্ত, যোগেন্দ্রনাথ (১৮৮৩-১৯৬৫) সম্পাদক, ঐতিহাসিক ও লেখক। ১৮৮৩ সালের ২২ মার্চ ঢাকার বিক্রমপুরে মূলচর গ্রামে তাঁর জন্ম। ছাত্রবৃত্তি পাস করে দারিদ্রে্যর কারণে তিনি প্রথমে স্কুলে শিক্ষকতা করেন এবং পরে ময়মনসিংহের জমিদারিতে চাকরি নেন। পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি তিনি মাসিক পথিক (১৯০৪), ত্রৈমাসিক বিক্রমপুর (১৯০৬-১৮) ও কৈশোরক (১৯১৩-১৮) এবং মাসিক কিশোর ভারতী পত্রিকা সম্পাদনা করেন এবং এর মাধ্যমেই তাঁর লেখকজীবন শুরু হয়। ইতিহাস, জীবনী, গল্প, উপন্যাস, নাটক ও কোষগ্রন্থ মিলে তাঁর গ্রন্থসংখ্যা শতাধিক। তাঁর ইতিহাস গ্রন্থ বিক্রমপুরের ইতিহাস (১৯০৯), পৃথিবীর ইতিহাস (২১ খন্ড, ১৯১৮-২৫), বিক্রমপুরের বিবরণ (২ খন্ড, ১৯৩৯), বাঙ্গালার ইতিহাস, ভারতের ইতিহাস ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। বিক্রমপুরের বিবরণ গ্রন্থখানি এখনও বিক্রমপুর সম্পর্কে একটি প্রামাণ্য দলিল হিসেবে বিবেচিত।
যোগেন্দ্রনাথ দেশি-বিদেশি অনেক জ্ঞানী-গুণীর জীবনী রচনা করেছেন। কেদার রায়, মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিদ্যাসাগর, গান্ধীজীর জীবনযজ্ঞ, সাধক কবি রামপ্রসাদ, কান্তকবি রজনীকান্ত, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, রবীন্দ্রনাথ, তারাবাঈ, ঝাঁসীর রাণী, রাণী দুর্গাবতী, রণজিৎ সিংহ, গুরুগোবিন্দ সিংহ, ম্যাজিনি, আব্রাহাম লিঙ্কন ও গ্যারিবল্ডী তাঁর রচিত কয়েকটি বিখ্যাত জীবনীগ্রন্থ। তাঁর মৌলিক রচনা: পরশমণি (১৯২৭), মাধবী (১৯৩০), প্রিয়তমা, সুভক্ষণ, গৃহলক্ষ্মী, শান্তিলতা, রূপের আগুন, পল্লীবধূ, প্রেমের অভিষেক, আনারকলি (১৯০৯), তসবীর (১৯১২) ইত্যাদি। দশ খন্ডে সম্পাদিত শিশুভারতী কোষগ্রন্থটি যোগেন্দ্র গুপ্তের একটি বিশেষ কীর্তি।
যোগেন্দ্র গুপ্ত ছিলেন একজন অনন্যসাধারণ লেখক; মেধা, নিষ্ঠা ও শ্রমের মাধ্যমে তিনি অসাধ্য সাধন করেছেন। ইতিহাস-জীবনী-সাহিত্যের মধ্যে তিনি বিচিত্র মানবজীবনের কর্ম ও মহত্ত্বের অনুসন্ধান করেছেন। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘গিরিশ লেকচারার’ নিযুক্ত হন এবং ‘ভুবনমোহিনী পদক’ লাভ করেন। [ওয়াকিল আহমদ]