গুপ্ত, অতুলচন্দ্র
গুপ্ত, অতুলচন্দ্র (১৮৮৪-১৯৬১) আইনজীবী, সাহিত্যিক। ১৮৮৪ সালের ১২ মার্চ টাঙ্গাইল জেলার বিল্লাইক গ্রামে তাঁর জন্ম। পিতা উমেশচন্দ্র গুপ্ত ছিলেন আইনজীবী এবং আইন ব্যবসার কারণে তিনি সপরিবারে রংপুরে বসবাস করেন।
অতুলচন্দ্রের প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন হয় রংপুরে। ১৯০১ সালে তিনি রংপুর জেলা স্কুল থেকে প্রবেশিকা পাস করে কলকাতা যান। সেখানে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ইংরেজি ও দর্শনশাস্ত্রে অনার্সসহ বিএ (১৯০৪) এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শনশাস্ত্রে এমএ (১৯০৬) ও বিএল (১৯০৭) ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর কিছুদিন তিনি রংপুর জাতীয় বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করে রংপুরেই আইন ব্যবসা শুরু করেন। অল্পকাল পরে তিনি কলকাতা হাইকোর্টে যোগ দেন (১৯১৪)। ১৯১৮-১৯২৮ পর্যন্ত তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে রোমান ল’ ও জুরিসপ্রুডেন্সের অধ্যাপক ছিলেন। তারপর অধ্যাপনা ত্যাগ করে তিনি পুনরায় আইন ব্যবসায় ফিরে যান এবং ভারতবর্ষের অন্যতম শ্রেষ্ঠ আইনজীবীরূপে স্বীকৃতি লাভ করেন।
অতুলচন্দ্র প্রধানত আইনজীবী ও রসতত্ত্বের ব্যাখ্যাকার হিসেবে প্রসিদ্ধি লাভ করলেও সমাজ, শিক্ষা, ইতিহাস, রাজনীতি প্রভৃতির আলোচনায়ও অসাধারণ মনীষার পরিচয় দেন। ১৮১৮ সালে Trading with the Enemy নামে একটি গবেষণামূলক প্রবন্ধ রচনা করে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘অনাথনাথ দেব পুরস্কার’ লাভ করেন। ১৯৫৭ সালে উক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ডিএল উপাধি লাভ করেন। রাজনৈতিক, সামাজিক ও শিক্ষামূলক প্রতিষ্ঠানে, দুঃস্থ ছাত্রদের শিক্ষাকল্পে এবং গরিব রোগীদের চিকিৎসার্থে তিনি প্রচুর অর্থ দান করেন।
ছাত্রাবস্থায় অতুলচন্দ্র কার্লাইল সার্কুলারবিরোধী আন্দোলনে (১৯০৫) অংশগ্রহণ করেন। ১৯৪৭ সালে তিনি র্যাডক্লিফ ট্রাইব্যুনালে পশ্চিমবঙ্গের বক্তব্য তৈরি করে দেন। তিনি ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের সদস্য ছিলেন। সাহিত্য, সমাজ, শিক্ষা, ইতিহাস ও রাজনীতি বিষয়ে তিনি বহু গ্রন্থ রচনা করেন। ভারতীয় অলঙ্কারশাস্ত্রে তিনি বিশেষ পারদর্শী ছিলেন। প্রমথ চৌধুরীর সবুজপত্রের সঙ্গে যুক্ত থাকায় তাঁর রচনায় যুক্তিবাদ ও মননশীলতার ছাপ পড়ে। শিক্ষা ও সভ্যতা (১৯২৭), কাব্যজিজ্ঞাসা (১৯২৮), নদীপথে (১৯৩৭), সমাজ ও বিবাহ (১৯৪৮) এবং ইতিহাসের মুক্তি (১৯৫৭) তাঁর প্রধান রচনা। এগুলির মধ্যে কাব্যজিজ্ঞাসা তাঁর শ্রেষ্ঠ কীর্তি। ১৯৬১ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি কলকাতায় তিনি মারা যান। [মানস মজুমদার]