গার্ল গাইড

গার্ল গাইড  শিক্ষা ও সমাজসেবামূলক একটি আন্তর্জাতিক যুবআন্দোলন। জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকল শ্রেণির মেয়েরা এ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করতে পারে। বাংলাদেশ গার্লস গাইড অ্যাসোসিয়েশন একটি জাতীয় সংস্থা হিসেবে ১৯৭২ সালে জাতীয় সংসদের অনুমোদন লাভ করে। ১৯৭৩ সালে এ অ্যাসোসিয়েশনকে মেয়েদের শিক্ষামূলক প্রতিষ্ঠানরূপে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়া হয়, এবং ওই বছরই এ সংগঠন ওয়ার্ল্ড অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যপদ লাভ করে। বিশ্ব গার্ল গাইড ও গার্ল স্কাউট পাঁচটি অঞ্চলে বিভক্ত: এশিয়া-প্যাসিফিক, আফ্রিকা, ইউরোপ, ওয়েস্টার্ন হ্যামিসফেয়ার ও আরব। এ পাঁচটি অঞ্চলে চারটি বিশ্ব গাইড কেন্দ্র আছে। বাংলাদেশ এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত। এ অঞ্চলের বিশ্বকেন্দ্র ‘সংগম’ ভারতের পুনায় অবস্থিত।


গার্ল গাইড [ছবি: সেলিনা বেগম চৌধুরী]

বাংলাদেশে ৭টি অঞ্চলের মাধ্যমে গার্ল গাইড কর্মসূচি পরিচালিত হয়। অঞ্চলগুলো হলো ঢাকা শহর, ঢাকা, খুলনা, চট্টগ্রাম, বরিশাল, রাজশাহী ও সিলেট। গার্ল গাইড ৬ থেকে ৩০ বছর বয়সী বালিকা, কিশোরী ও তরুণীর জন্য এমন একটি সার্বজনীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেখানে যেকোন পরিস্থিতির মোকাবেলা ও পরিবর্তনশীল বিশ্বের উপযোগী নাগরিক হতে শিক্ষা দেয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সম্পূরক শিক্ষা হিসেবে গার্ল গাইড শিক্ষা কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত বিষয় হলো গণতন্ত্র, মানবাধিকার, আন্তর্জাতিকতা ও প্রতিযোগিতা।

মেয়েদের বয়সের ভিত্তিতে গার্ল গাইডের উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ৪টি শাখায় বিন্যাস করা হয়েছে: ১. হলদে পাখি (৬-১০ বছর), এর মূলমন্ত্র সাহায্য করা; ২. গার্ল গাইড (১০-১৬ বছর), এর মূলমন্ত্র সদা প্রস্ত্তত থাকা; ৩. রেঞ্জার (১৬-২৪ বছর), এর মুলমন্ত্র সমাজসেবা; ৪. যুবনেত্রী গাইড (২৪-৩০ বছর), এর মূলমন্ত্র সৃষ্টিকর্তার প্রতি ভালবাসা এবং ধর্মের একনিষ্ঠ অনুসরণ। একজন দীক্ষিত গাইড সারা জীবনই গাইড, যার ব্রত প্রতিদিন অন্তত একটি ভালো কাজ করা। এ ভাল কাজের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ গার্লস গাইড অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা সমাজ উন্নয়ন, পরিবেশ সংরক্ষণ, প্রবীণসেবা, আয়বর্ধন কর্মসূচি গ্রহণ এবং স্বাস্থ্য প্রকল্পের মাধ্যমে সমাজ ও সমষ্টির উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখে।

গার্লস গাইড অ্যাসোসিয়েশনের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য প্রকল্প হলো: ১. শিশু অধিকার সংরক্ষণ প্রকল্প : এর অন্তর্ভুক্ত প্রকল্প হলো দিবাযত্ন কেন্দ্র, সামাজিক শিক্ষা, গাইড হোম (অনাথ, ছিন্নমূল বালিকাদের আশ্রয়কেন্দ্র) ও গণশিক্ষা; ২. বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ; ৩. দূষণমুক্ত পরিবেশ (বৃক্ষ রোপন, স্যানিটেশন, বিশুদ্ধ পানি ও ধোঁয়াবিহীন চুলা ব্যবহার); ৪. স্বাস্থ্য ও পুষ্টি জ্ঞান; ৫. শান্তি ও সংস্কৃতি। এ ছাড়াও গার্ল গাইড বিভিন্ন ভলান্টারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে সমাজসেবামূলক কাজ করে থাকে।

বর্তমানে বাংলাদেশে প্রতিটি জেলায় গার্ল গাইডিং আছে। ১৯৯৯ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী দীক্ষাপ্রাপ্ত গার্ল গাইডের সংখ্যা ৪২,৭৯৪। ক্যাম্পিং বা শিবিরবাস গাইড শিক্ষা কর্মসূচির এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। গাজীপুর জেলার বারিপাড়ায় অ্যাসোসিয়েশনের নিজস্ব ক্যাম্প রয়েছে। সারা বছরে হাতে কলমে প্রশিক্ষণ গ্রহণের জন্য বিভিন্ন পর্যায়ে অনুষ্ঠিত ক্যাম্পে অংশগ্রহণ অত্যাবশ্যক। ঝাঁক অবকাশ এবং তাবুবাসের মাধ্যমে হলদে পাখি, গাইড, রেঞ্জার, গাইডার এবং কমিশনারগণ সর্বপ্রথম বুঝতে পারেন যে, দায়িত্ব লাভের সুযোগই নেতৃত্বের অভিজ্ঞতা ও গুণের পুরস্কার। গাইড শিক্ষা কার্যক্রমের প্রায়োগিক উন্নয়ন এবং প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম দৃঢ় করার লক্ষ্যে নেত্রী-সদস্যদের জন্য রয়েছে ৮ ধরনের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি : হলদে পাখি গাইডার, গাইড গাইডার, রেঞ্জার গাইডার, স্থানীয় অ্যাসোসিয়েশন সদস্যা ও কমিশনার, ক্যাম্প ক্রাফ্ট, ওয়ারেন্ট গাইড ওরিয়েন্টেশন, লোন ট্রেনার ওরিয়েন্টেশন এবং প্রয়োজনে ১ বছর মেয়াদী জুনিয়র ট্রেনিং সার্টিফিকেট কোর্স।

অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক কাঠামোর মধ্যে রয়েছে জাতীয় গাইড পরিষদ, আঞ্চলিক গাইড পরিষদ, জেলা গাইড পরিষদ এবং উপজেলা পর্যায়ে স্থানীয় গাইড পরিষদ।  [নাসিম বানু]