গাজীউদ্দীন হায়দার
গাজীউদ্দীন হায়দার (১৮১৫-১৮৪৩) ১৮৩৪ সালে (এস.এম তাইফুরের মতে ১৮৩৬) তার পিতা কামরুদ্দৌলার মৃত্যুর পর ঢাকার নায়েব নাজিম পদে আসীন হন। দায়িত্ব গ্রহণকালে তিনি ছিলেন নিতান্তই তরুণ। অল্প বয়স্ক হওয়ায় তিনি তার পিতার অশ্বশালার তত্বাবধায়ক মীর জিওয়ানের অশুভ প্রভাবের শিকার হন। গাজীউদ্দীন তার বৃদ্ধ শিক্ষক মীর আগা গোলাম আলীকে অসম্মানজনকভাবে বিতাড়িত করেন। সর্বদা একদল হীন মোসাহেব ও চাটুকার পরিবেষ্টিত গাজীউদ্দীন মুহম্মদ হায়দার ছিলেন সুরায় আসক্ত। তার অবসর বিনোদনের প্রিয় বিষয় ছিল ঘুড়ি উড়ানো, মহিষ ও মুরগির লড়াই এবং তার পোষা পাখি, কুকুর ও বিড়ালের বিয়ের উৎসব ও সৎকার অনুষ্ঠান। জনগণ তাকে ‘পাগলা নওয়াব’ বলত। পক্ষান্তরে তিনি ছিলেন খুবই দয়ালু এবং তার চরম শত্রুকেও তিনি ক্ষমা করতেন। দরিদ্রদের প্রতি তিনি ছিলেন খুবই দানশীল এবং বন্ধুদের হিতৈষী।
তার অনৈতিক কার্যকলাপের জন্য ইংরেজ সরকার তার ৪৫০০ টাকার ভাতা বন্ধ করে দেয়। কঠিন অর্থনৈতিক সংকট ও বড় অংকের দেনার দায়ে পড়ে তিনি তার সম্পত্তির একাংশ হিন্দু ব্যবসায়ীদের কাছে বন্ধক দিতে বাধ্য হন। তার সম্পত্তির একাংশ নিলামেও বিক্রি করা হয়। ঢাকার বসাক তাঁতিরা এ পরিবারের রূপা মোড়ানো জমকালো রাজকীয় ‘হাওদা’ কিনে নেয় (এটি তারা জন্মাষ্টমীর শোভাযাত্রায় প্রদর্শন করত)। ঢাকার তৎকালীন ধনী লোকেরা ওই পরিবারের অনেক অতুলনীয় দামী গহনাপত্র ক্রয় করে। দরিয়া-ই-নূর নামে একটি অতি মূল্যবান পান্না ঢাকার নওয়াব পরিবারের খাজা আলীমুল্লাহ ক্রয় করেন বলে কথিত আছে। অবশ্য কিছুকাল পর ইংরেজগণ গাজীউদ্দীনের ভাতা পুনর্বহাল করে।
গাজীউদ্দীন হায়দার ছিলেন অশিক্ষিত। তিনি ছিলেন চরম অমিতব্যয়ী এবং একারণে সরকার তার জমিদারি পরিচালনার দায়িত্ব একজন ‘প্রতিনিধির’ হাতে ন্যস্ত করেন। তিনি দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হন ও তার স্বাস্থ্য ভেঙ্গে পড়ে। ১৮৪৩ সালে মাত্র ২৮ বছর বয়সে নিঃসন্তান অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। তার মৃত্যুতে ‘নায়েব নাজিম’ পদবি বিলুপ্ত হয়ে যায় এবং তার সম্পত্তি অপরাপর ধনী ব্যক্তিদের হস্তগত হয়। ইংরেজগণ তাঁকে সামরিক মর্যাদায় দাফন করে তার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে। হোসেনী দালানের বহিরাঙ্গনে পিতার পাশে তাঁকে সমাহিত করা হয়। [কে.এম করিম]