গাইবান্ধা জেলা: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

(Robot: Automated text replacement (-'''''তথ্যসূত্র''''' +'''তথ্যসূত্র'''))
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
৬ নং লাইন: ৬ নং লাইন:
''জলাশয়'' প্রধান নদ-নদী: ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, তিস্তা, করতোয়া, বাঙ্গালী ও ঘাঘট।
''জলাশয়'' প্রধান নদ-নদী: ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, তিস্তা, করতোয়া, বাঙ্গালী ও ঘাঘট।


''প্রশাসন'' গাইবান্ধা জেলা ১৮৫৮ সালের ২৭ আগস্ট বৃহত্তর রংপুর জেলার অধীনে ভবানীগঞ্জ নামে একটি মহকুমা গঠিত হয়। ১৮৭৫ সালে ভবানীগঞ্জ নদীগর্ভে বিলীন হলে মহকুমা সদর দপ্তর গাইবান্ধায় স্থানান্তরিত হয়। এ এলাকা এক সময় বাহরবন্দ পরগনার অন্তর্ভুক্ত ছিল। ১৯২৩ সালে গাইবান্ধা শহরটি মিউনিসিপ্যালিটিতে রূপান্তর হয়। ১৯৬০ সালে মিউনিসিপ্যালিটি বিলুপ্ত হয়ে গাইবান্ধা টাউন কমিটি গঠিত হয়। ১৯৭৩ সালে শহর এলাকা গাইবান্ধা পৌরসভায় রূপান্তরিত হয়। গাইবান্ধা জেলা গঠিত হয় ১৯৮৪ সালে। জেলার সাতটি উপজেলার মধ্যে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা সর্ববৃহৎ (৪৮১.৬৬ বর্গ কিমি) এবং এটি জেলার মোট আয়তনের ২২.১০% এলাকা জুড়ে অবস্থিত। জেলার সবচেয়ে ছোট উপজেলা পলাশবাড়ী (১৯০.৬৭ বর্গ কিমি)।
''প্রশাসন'' গাইবান্ধা জেলা ১৮৫৮ সালের ২৭ আগস্ট বৃহত্তর রংপুর জেলার অধীনে ভবানীগঞ্জ নামে একটি মহকুমা গঠিত হয়। ১৮৭৫ সালে ভবানীগঞ্জ নদীগর্ভে বিলীন হলে মহকুমা সদর দপ্তর গাইবান্ধায় স্থানান্তরিত হয়। এ এলাকা এক সময় বাহরবন্দ পরগনার অন্তর্ভুক্ত ছিল। ১৯২৩ সালে গাইবান্ধা শহরটি মিউনিসিপ্যালিটিতে রূপান্তর হয়। ১৯৬০ সালে মিউনিসিপ্যালিটি বিলুপ্ত হয়ে গাইবান্ধা টাউন কমিটি গঠিত হয়। ১৯৭৩ সালে শহর এলাকা গাইবান্ধা পৌরসভায় রূপান্তরিত হয়। গাইবান্ধা জেলা গঠিত হয় ১৯৮৪ সালে। জেলার সাতটি উপজেলার মধ্যে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা সর্ববৃহৎ (৪৮১.৬৬ বর্গ কিমি) এবং এটি জেলার মোট আয়তনের ২২.১০% এলাকা জুড়ে অবস্থিত। জেলার সবচেয়ে ছোট উপজেলা পলাশবাড়ী (১৯০.৬৭ বর্গ কিমি)।


{| class="table table-bordered table-hover"
{| class="table table-bordered table-hover"
|-
|-
! colspan= "10" | জেলা
| colspan= "10" | জেলা
|-
|-
| rowspan= "2" | আয়তন(বর্গ কিমি)  || rowspan= "2" | উপজেলা  || rowspan= "2" | পৌরসভা  || rowspan= "2" | ইউনিয়ন  || rowspan= "2" | মৌজা  || rowspan= "2" | গ্রাম  || colspan= "2" | জনসংখ্যা || rowspan= "2" | ঘনত্ব(প্রতি বর্গ কিমি)  || rowspan= "2" | শিক্ষার হার (%)
| rowspan= "2" | আয়তন (বর্গ কিমি)  || rowspan= "2" | উপজেলা  || rowspan= "2" | পৌরসভা  || rowspan= "2" | ইউনিয়ন  || rowspan= "2" | মৌজা  || rowspan= "2" | গ্রাম  || colspan= "2" | জনসংখ্যা || rowspan= "2" | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি)  || rowspan= "2" | শিক্ষার হার (%)
|-
|-
| শহর  || গ্রাম  
| শহর  || গ্রাম  
|-  
|-  
| ২১৭৯.২৭  || ৭  || ২  || ৮২  || ১১০১  || ১২৪৩  || ১৯৫১০৭  || ১৯৪৩০৭৪  || ৯৮১  || ৩৫.৭
| ২১৭৯.২৭  || ৭  || ২  || ৮২  || ১১০১  || ১২৪৩  || ১৯৫১০৭  || ১৯৪৩০৭৪  || ৯৮১  || ৩৫.৭
|}
|}
{| class="table table-bordered table-hover"
{| class="table table-bordered table-hover"
|-  
|-  
| জেলার অন্যান্য তথ্য
| colspan= "9" | জেলার অন্যান্য তথ্য
 
|-  
|-  
| উপজেলা নাম  || আয়তন(বর্গ কিমি)  || পৌরসভা  || ইউনিয়ন  || মৌজা  || গ্রাম  || জনসংখ্যা || ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি)  || শিক্ষার হার (%)
| উপজেলা নাম  || আয়তন (বর্গ কিমি)  || পৌরসভা  || ইউনিয়ন  || মৌজা  || গ্রাম  || জনসংখ্যা || ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি)  || শিক্ষার হার (%)
 
|-  
|-  
| গাইবান্ধা সদর  || ৩২০.২৫  || ১  || ১৩  || ১২৮  || ১৪০  || ৩৯২৩১১  || ১২২৫  || ৩৯.৭
| গাইবান্ধা সদর  || ৩২০.২৫  || ১  || ১৩  || ১২৮  || ১৪০  || ৩৯২৩১১  || ১২২৫  || ৩৯.৭
|-  
|-  
| গোবিন্দগঞ্জ  || ৪৮১.৬৬  || ১  || ১৭  || ৩৩৯  || ৩৭৫  || ৪৬১৪২৮  || ৯৫৮  || ৩৭.৮
| গোবিন্দগঞ্জ  || ৪৮১.৬৬  || ১  || ১৭  || ৩৩৯  || ৩৭৫  || ৪৬১৪২৮  || ৯৫৮  || ৩৭.৮
|-  
|-  
| পলাশবাড়ী  || ১৯০.৬৭  || -  || ৯  || ১৬১  || ১৬০  || ২৩১৭৫৫  || ১২১৫  || ৩৮.৯
| পলাশবাড়ী  || ১৯০.৬৭  || -  || ৯  || ১৬১  || ১৬০  || ২৩১৭৫৫  || ১২১৫  || ৩৮.৯
|-  
|-  
| ফুলছড়ি  || ৩০৬.৫৩  || -  || ৭  || ৮০  || ৮২  || ১৩৭৭৯৫  || ৪৫০  || ২৭.৭
| ফুলছড়ি  || ৩০৬.৫৩  || -  || ৭  || ৮০  || ৮২  || ১৩৭৭৯৫  || ৪৫০  || ২৭.৭
|-  
|-  
| সাঘাটা  || ২২৫.৬৭  || -  || ১০  || ১১৭  || ১৩৫  || ২৫০২৬৯  || ১১০৯  || ৩৪.৩
| সাঘাটা  || ২২৫.৬৭  || -  || ১০  || ১১৭  || ১৩৫  || ২৫০২৬৯  || ১১০৯  || ৩৪.৩
|-  
|-  
| সাদুল্লাপুর  || ২২৭.৯৭  || -  || ১১  || ১৬৬  || ১৬৮  || ২৬৬০৩৫  || ১১৬৭  || ৩৫.৭
| সাদুল্লাপুর  || ২২৭.৯৭  || -  || ১১  || ১৬৬  || ১৬৮  || ২৬৬০৩৫  || ১১৬৭  || ৩৫.৭
|-  
|-  
| সুন্দরগঞ্জ  || ৪২৬.৫২  || ১  || ১৫  || ১১০  || ১৮৩  || ৩৯৮৫৮৮  || ৯৩৫  || ৩১.১
| সুন্দরগঞ্জ  || ৪২৬.৫২  || ১  || ১৫  || ১১০  || ১৮৩  || ৩৯৮৫৮৮  || ৯৩৫  || ৩১.১
৫২ নং লাইন: ৪২ নং লাইন:
''ঐতিহাসিক ঘটনাবলি'' এ অঞ্চল বিভিন্ন সময় মৌর্য, গুপ্ত, পাল এবং কামরূপ রাজ্যের অংশ ছিল। ১৭৮৩ সালে এ জেলায় অতিরিক্ত কর আদায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলন হয়েছে। এখানে ১৯২১ সালে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন ও ১৯৪৬ সালে তেভাগা আন্দোলনের সূচনা হয়। ১৯৪৯ সালে জেলায় হাটবাজারে তোলা-আদায় বন্ধের দাবিতে আন্দোলনের সময় পুলিশের গুলিতে ফয়েজউদ্দিন ও পুটি শেখ নিহত হয়। ১৯৫৬ সালে ফুলছড়িতে মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর উদ্যোগে কৃষক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
''ঐতিহাসিক ঘটনাবলি'' এ অঞ্চল বিভিন্ন সময় মৌর্য, গুপ্ত, পাল এবং কামরূপ রাজ্যের অংশ ছিল। ১৭৮৩ সালে এ জেলায় অতিরিক্ত কর আদায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলন হয়েছে। এখানে ১৯২১ সালে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন ও ১৯৪৬ সালে তেভাগা আন্দোলনের সূচনা হয়। ১৯৪৯ সালে জেলায় হাটবাজারে তোলা-আদায় বন্ধের দাবিতে আন্দোলনের সময় পুলিশের গুলিতে ফয়েজউদ্দিন ও পুটি শেখ নিহত হয়। ১৯৫৬ সালে ফুলছড়িতে মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর উদ্যোগে কৃষক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।


[[Image:GaibandhaDistrict.jpg|thumb|400px|right|গাইবান্ধা জেলা]]
[[Image:GaibandhaDistrict.jpg|thumb|400px|right]]


মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণের পর পলাশবাড়ী উপজেলায় মুক্তিকামী জনতা রংপুর-বগুড়া মহাসড়ক অবরোধ করলে পাকবাহিনী স্থানীয় বাজারে গুলি করলে ১জন নিহত হয়। ২৭ মার্চ ছাত্রজনতা গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় কাটাখালি ব্রিজ ধ্বংস করার সময় পাকবাহিনীর গুলিবর্ষণে প্রায় ৭জন ছাত্র নিহত হয়। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকবাহিনী সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে নির্যাতন করে ১৮জন নিরীহ লোককে হত্যা করে। সাঘাটা উপজেলা সীমান্তে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে পাকসেনাদের এক লড়াইয়ে ২জন পাকসেনা নিহত হয়। একই উপজেলার ত্রিমোহনী ঘাটে এক লড়াইয়ে ২৭জন পাকসেনা নিহত এবং ১২ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। এসময় মুক্তিযোদ্ধারা ১৭জন রাজাকারকে হত্যা করে। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকসেনারা উপজেলার বাদিয়াখালী সড়ক সেতু ও সিংড়া রেলসেতু ধ্বংস করে এবং ভরতখালী পাটগুদামে অগ্নিসংযোগ করে। ১৬ এপ্রিল পীরগঞ্জ (রংপুর)-সাদুল্লাপুর সীমান্তে পাকবাহিনীর সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের এক সংঘর্ষে প্রায় ২১জন পাকসেনা নিহত হয়।
''মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলি''  ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণের পর পলাশবাড়ী উপজেলায় মুক্তিকামী জনতা রংপুর-বগুড়া মহাসড়ক অবরোধ করলে পাকবাহিনী স্থানীয় বাজারে গুলি করলে ১জন নিহত হয়। ২৭ মার্চ ছাত্রজনতা গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় কাটাখালি ব্রিজ ধ্বংস করার সময় পাকবাহিনীর গুলিবর্ষণে প্রায় ৭জন ছাত্র নিহত হয়। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকবাহিনী সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে নির্যাতন করে ১৮জন নিরীহ লোককে হত্যা করে। সাঘাটা উপজেলা সীমান্তে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে পাকসেনাদের এক লড়াইয়ে ২জন পাকসেনা নিহত হয়। একই উপজেলার ত্রিমোহনী ঘাটে এক লড়াইয়ে ২৭জন পাকসেনা নিহত এবং ১২ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। এসময় মুক্তিযোদ্ধারা ১৭জন রাজাকারকে হত্যা করে। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকসেনারা উপজেলার বাদিয়াখালী সড়ক সেতু ও সিংড়া রেলসেতু ধ্বংস করে এবং ভরতখালী পাটগুদামে অগ্নিসংযোগ করে। ১৬ এপ্রিল পীরগঞ্জ (রংপুর)-সাদুল্লাপুর সীমান্তে পাকবাহিনীর সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের এক সংঘর্ষে প্রায় ২১জন পাকসেনা নিহত হয়।


''মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন'' বধ্যভূমি ৬; গণকবর ৬; স্মৃতিস্তম্ভ ১০; শহীদ সমাধি ৩; শহীদ মিনার ৩। গাইবান্ধা শহরে হেলাল পার্কের বধ্যভূমি, গোবিন্দগঞ্জের কাটাখালি পার্কের বধ্যভূমি, পাখেয়া গ্রামের গণকবর, পলাশবাড়ির কাশিয়া বাড়ির গণকবর, ফুলছড়ির বধ্যভূমি, সুন্দরগঞ্জের কাইয়ার হাট গণকবর, গাইবান্ধা পৌর পার্কের মুক্তিযুদ্ধ বিজয় স্তম্ভ, সাঘাটা দলদলিয়ার শহীদের কবর ও স্মৃতিফলক উল্লেখযোগ্য।
''মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন'' বধ্যভূমি ৬; গণকবর ৬; স্মৃতিস্তম্ভ ১০; শহীদ সমাধি ৩; শহীদ মিনার ৩। গাইবান্ধা শহরে হেলাল পার্কের বধ্যভূমি, গোবিন্দগঞ্জের কাটাখালি পার্কের বধ্যভূমি, পাখেয়া গ্রামের গণকবর, পলাশবাড়ির কাশিয়া বাড়ির গণকবর, ফুলছড়ির বধ্যভূমি, সুন্দরগঞ্জের কাইয়ার হাট গণকবর, গাইবান্ধা পৌর পার্কের মুক্তিযুদ্ধ বিজয় স্তম্ভ, সাঘাটা দলদলিয়ার শহীদের কবর ও স্মৃতিফলক উল্লেখযোগ্য।
৬৬ নং লাইন: ৫৬ নং লাইন:
''লোকসংস্কৃতি'' এ উপজেলায় পল্লীগীতি, ভাওয়াইয়া, জারীগান, সারিগান, বিয়ের গীত, ছড়া গান প্রভৃতি প্রচলিত রয়েছে। এছাড়া আদিবাসী জনগোষ্ঠী বিয়ে, সন্তান জন্ম এবং শোক প্রভৃতি উপলক্ষে নৃত্য-গীতের আয়োজন করে।
''লোকসংস্কৃতি'' এ উপজেলায় পল্লীগীতি, ভাওয়াইয়া, জারীগান, সারিগান, বিয়ের গীত, ছড়া গান প্রভৃতি প্রচলিত রয়েছে। এছাড়া আদিবাসী জনগোষ্ঠী বিয়ে, সন্তান জন্ম এবং শোক প্রভৃতি উপলক্ষে নৃত্য-গীতের আয়োজন করে।


গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা বা দর্শণীয় স্থান  গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার বর্ধনকুঠি (সপ্তদশ শতক), নলডাঙ্গার জমিদার বাড়ি, বামনডাঙ্গার জমিদার বাড়ি (১২৫৯), ভরতখালীর কাষ্ঠকালি মন্দির, গোবিন্দগঞ্জে রাজা বিরাটের প্রাসাদ (৭৪৩-৮০০ খ্রি:), গাইবান্ধা সদরের মীরের বাগান শাহ সুলতান গাজীর মসজিদ।
''গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা বা দর্শণীয় স্থান''  গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার বর্ধনকুঠি (সপ্তদশ শতক), নলডাঙ্গার জমিদার বাড়ি, বামনডাঙ্গার জমিদার বাড়ি (১২৫৯), ভরতখালীর কাষ্ঠকালি মন্দির, গোবিন্দগঞ্জে রাজা বিরাটের প্রাসাদ (৭৪৩-৮০০ খ্রি:), গাইবান্ধা সদরের মীরের বাগান শাহ সুলতান গাজীর মসজিদ। [জহুরুল কাইয়ুম]
 
[জহুরুল কাইয়ুম]


''আরও দেখুন'' সংশ্লিষ্ট উপজেলা।
''আরও দেখুন'' সংশ্লিষ্ট উপজেলা।


'''তথ্যসূত্র'''   আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; গাইবান্ধা জেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭; গাইবান্ধা জেলার উপজেলাসমূহের সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।
'''তথ্যসূত্র'''  আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; গাইবান্ধা জেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭; গাইবান্ধা জেলার উপজেলাসমূহের সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।


[[en:Gaibandha District]]
[[en:Gaibandha District]]

১০:৫৩, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

গাইবান্ধা জেলা (রংপুর বিভাগ)  আয়তন: ২১৭৯.২৭ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৫°০২´ থেকে ২৫°৩৯´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°১১´ থেকে ৮৯°৪৬´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে কুড়িগ্রাম ও রংপুর জেলা, দক্ষিণে বগুড়া জেলা, পূর্বে জামালপুর ও কুড়িগ্রাম জেলা ও ব্রহ্মপুত্র নদ, পশ্চিমে দিনাজপুর, জয়পুরহাট ও রংপুর জেলা।

জনসংখ্যা ২১৩৮১৮১; পুরুষ ১০৮৫০৯৭, মহিলা ১০৫৩০৮৪। মুসলিম ১৯৭৭৭৭৮, হিন্দু ১৫৩৬১৪, বৌদ্ধ ২২০৯, খ্রিস্টান ৩০৪ এবং অন্যান্য ৪২৭৬। এ উপজেলায় সাঁওতাল, ওরাও প্রভৃতি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর  বসবাস রয়েছে।

জলাশয় প্রধান নদ-নদী: ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, তিস্তা, করতোয়া, বাঙ্গালী ও ঘাঘট।

প্রশাসন গাইবান্ধা জেলা ১৮৫৮ সালের ২৭ আগস্ট বৃহত্তর রংপুর জেলার অধীনে ভবানীগঞ্জ নামে একটি মহকুমা গঠিত হয়। ১৮৭৫ সালে ভবানীগঞ্জ নদীগর্ভে বিলীন হলে মহকুমা সদর দপ্তর গাইবান্ধায় স্থানান্তরিত হয়। এ এলাকা এক সময় বাহরবন্দ পরগনার অন্তর্ভুক্ত ছিল। ১৯২৩ সালে গাইবান্ধা শহরটি মিউনিসিপ্যালিটিতে রূপান্তর হয়। ১৯৬০ সালে মিউনিসিপ্যালিটি বিলুপ্ত হয়ে গাইবান্ধা টাউন কমিটি গঠিত হয়। ১৯৭৩ সালে শহর এলাকা গাইবান্ধা পৌরসভায় রূপান্তরিত হয়। গাইবান্ধা জেলা গঠিত হয় ১৯৮৪ সালে। জেলার সাতটি উপজেলার মধ্যে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা সর্ববৃহৎ (৪৮১.৬৬ বর্গ কিমি) এবং এটি জেলার মোট আয়তনের ২২.১০% এলাকা জুড়ে অবস্থিত। জেলার সবচেয়ে ছোট উপজেলা পলাশবাড়ী (১৯০.৬৭ বর্গ কিমি)।

জেলা
আয়তন (বর্গ কিমি) উপজেলা পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম
২১৭৯.২৭ ৮২ ১১০১ ১২৪৩ ১৯৫১০৭ ১৯৪৩০৭৪ ৯৮১ ৩৫.৭
জেলার অন্যান্য তথ্য
উপজেলা নাম আয়তন (বর্গ কিমি) পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
গাইবান্ধা সদর ৩২০.২৫ ১৩ ১২৮ ১৪০ ৩৯২৩১১ ১২২৫ ৩৯.৭
গোবিন্দগঞ্জ ৪৮১.৬৬ ১৭ ৩৩৯ ৩৭৫ ৪৬১৪২৮ ৯৫৮ ৩৭.৮
পলাশবাড়ী ১৯০.৬৭ - ১৬১ ১৬০ ২৩১৭৫৫ ১২১৫ ৩৮.৯
ফুলছড়ি ৩০৬.৫৩ - ৮০ ৮২ ১৩৭৭৯৫ ৪৫০ ২৭.৭
সাঘাটা ২২৫.৬৭ - ১০ ১১৭ ১৩৫ ২৫০২৬৯ ১১০৯ ৩৪.৩
সাদুল্লাপুর ২২৭.৯৭ - ১১ ১৬৬ ১৬৮ ২৬৬০৩৫ ১১৬৭ ৩৫.৭
সুন্দরগঞ্জ ৪২৬.৫২ ১৫ ১১০ ১৮৩ ৩৯৮৫৮৮ ৯৩৫ ৩১.১

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

ঐতিহাসিক ঘটনাবলি এ অঞ্চল বিভিন্ন সময় মৌর্য, গুপ্ত, পাল এবং কামরূপ রাজ্যের অংশ ছিল। ১৭৮৩ সালে এ জেলায় অতিরিক্ত কর আদায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলন হয়েছে। এখানে ১৯২১ সালে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন ও ১৯৪৬ সালে তেভাগা আন্দোলনের সূচনা হয়। ১৯৪৯ সালে জেলায় হাটবাজারে তোলা-আদায় বন্ধের দাবিতে আন্দোলনের সময় পুলিশের গুলিতে ফয়েজউদ্দিন ও পুটি শেখ নিহত হয়। ১৯৫৬ সালে ফুলছড়িতে মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর উদ্যোগে কৃষক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণের পর পলাশবাড়ী উপজেলায় মুক্তিকামী জনতা রংপুর-বগুড়া মহাসড়ক অবরোধ করলে পাকবাহিনী স্থানীয় বাজারে গুলি করলে ১জন নিহত হয়। ২৭ মার্চ ছাত্রজনতা গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় কাটাখালি ব্রিজ ধ্বংস করার সময় পাকবাহিনীর গুলিবর্ষণে প্রায় ৭জন ছাত্র নিহত হয়। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকবাহিনী সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে নির্যাতন করে ১৮জন নিরীহ লোককে হত্যা করে। সাঘাটা উপজেলা সীমান্তে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে পাকসেনাদের এক লড়াইয়ে ২জন পাকসেনা নিহত হয়। একই উপজেলার ত্রিমোহনী ঘাটে এক লড়াইয়ে ২৭জন পাকসেনা নিহত এবং ১২ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। এসময় মুক্তিযোদ্ধারা ১৭জন রাজাকারকে হত্যা করে। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকসেনারা উপজেলার বাদিয়াখালী সড়ক সেতু ও সিংড়া রেলসেতু ধ্বংস করে এবং ভরতখালী পাটগুদামে অগ্নিসংযোগ করে। ১৬ এপ্রিল পীরগঞ্জ (রংপুর)-সাদুল্লাপুর সীমান্তে পাকবাহিনীর সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের এক সংঘর্ষে প্রায় ২১জন পাকসেনা নিহত হয়।

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন বধ্যভূমি ৬; গণকবর ৬; স্মৃতিস্তম্ভ ১০; শহীদ সমাধি ৩; শহীদ মিনার ৩। গাইবান্ধা শহরে হেলাল পার্কের বধ্যভূমি, গোবিন্দগঞ্জের কাটাখালি পার্কের বধ্যভূমি, পাখেয়া গ্রামের গণকবর, পলাশবাড়ির কাশিয়া বাড়ির গণকবর, ফুলছড়ির বধ্যভূমি, সুন্দরগঞ্জের কাইয়ার হাট গণকবর, গাইবান্ধা পৌর পার্কের মুক্তিযুদ্ধ বিজয় স্তম্ভ, সাঘাটা দলদলিয়ার শহীদের কবর ও স্মৃতিফলক উল্লেখযোগ্য।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৩৫.৭%; পুরুষ ৪০.৯%, মহিলা ৩০.৫%।  কলেজ ১০৪, স্কুল ও কলেজ ১১, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৩৪১, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৩১৭,  কমিউনিটি স্কুল ৯০, কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (ভিটিআই) ১, প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান (পিটিআই) ১, কৃষি প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান ১, পশু সম্পদ প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান ১, বিপিএড কলেজ ১, বিএড কলেজ ১, আইন কলেজ ১, হোমিও কলেজ ১, যুব উন্নয়ন প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান ১, মাদ্রাসা ৫৮২। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: গাইবান্ধা সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৮৫), জুমার বাড়ী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০৩), সাঘাটা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০৪), গোবিন্দগঞ্জ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১২), গাইবান্ধা ইসলামিয়া হাই স্কুল (১৯১৪), হরিপুর বিএসএম বালিকা বিদ্যালয় (১৯১৪), খোর্দ কোমরপুর হাই স্কুল (১৯১৫), শিবরাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯১৬), গাইবান্ধা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৬), বামনডাঙ্গা এম এন হাই স্কুল (১৯১৭), তুলশীঘাট কাশীনাথ হাই স্কুল (১৯১৭), বাসুদেবপুর চন্দ্র কিশোর স্কুল এন্ড কলেজ (১৯১৭), পিয়ারাপুর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৭), বেলকা এম.সি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৮), সাদুল্লাপুর বহুমূখী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৮), পলাশবাড়ী এস এম পাইলট হাই স্কুল (১৯১৯), কামদিয়া দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২১), চাপাদহ বি. এল উচ্চ বিদ্যালয়(১৯১৯), কাজী আজহার আলী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২০), রওশনবাগ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৬), কাটগড়া দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৭), ভরতখালী হাই স্কুল (১৯২৯)।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি  ৬৫.০৮%, অকৃষি শ্রমিক ২.৪৮%, শিল্প ০.৭৭%, ব্যবসা ১১.৮৫%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৪.২২%, চাকরি ৫.৩৭%, নির্মাণ ১.১৯%, ধর্মীয়  সেবা ০.১৯%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.২২% এবং অন্যান্য ৮.৬৩%।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী দৈনিক ঘাঘট (১৯৯১),  দৈনিক সন্ধান (১৯৯২), দৈনিক পলাশ (১৯৯৯), দৈনিক জনসংকেত (১৯৯৩), দৈনিক ভোরের সূর্য (১৯৯৮), সাপ্তাহিক গণপ্রহরী (১৯৮১), সাপ্তাহিক গাইবান্ধা (১৯৮২), সাপ্তাহিক পলাশ (১৯৮৪), সাপ্তাহিক গাঁয়ের কথা (১৯৯১), সাপ্তাহিক পান্থশালা (১৯৯১), সাপ্তাহিক গণ উত্তরণ (১৯৯২), সাপ্তাহিক কাটাখালি (২০০১), সাপ্তাহিক অনড় (২০০২)। অবলুপ্ত: সাপ্তাহিক অগ্রদূত (১৯২৮), সাপ্তাহিক গণদূত (১৯৭২), সাপ্তাহিক কণ্ঠস্বর (১৯৭৩), পাক্ষিক পূর্ব দিগন্ত (১৯৬১), মাসিক তিস্তা (১৯৬৩)।

লোকসংস্কৃতি এ উপজেলায় পল্লীগীতি, ভাওয়াইয়া, জারীগান, সারিগান, বিয়ের গীত, ছড়া গান প্রভৃতি প্রচলিত রয়েছে। এছাড়া আদিবাসী জনগোষ্ঠী বিয়ে, সন্তান জন্ম এবং শোক প্রভৃতি উপলক্ষে নৃত্য-গীতের আয়োজন করে।

গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা বা দর্শণীয় স্থান  গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার বর্ধনকুঠি (সপ্তদশ শতক), নলডাঙ্গার জমিদার বাড়ি, বামনডাঙ্গার জমিদার বাড়ি (১২৫৯), ভরতখালীর কাষ্ঠকালি মন্দির, গোবিন্দগঞ্জে রাজা বিরাটের প্রাসাদ (৭৪৩-৮০০ খ্রি:), গাইবান্ধা সদরের মীরের বাগান শাহ সুলতান গাজীর মসজিদ। [জহুরুল কাইয়ুম]

আরও দেখুন সংশ্লিষ্ট উপজেলা।

তথ্যসূত্র  আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; গাইবান্ধা জেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭; গাইবান্ধা জেলার উপজেলাসমূহের সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।