গন্ডশিলা

গন্ডশিলা (Boulder)  আলগা শিলাবস্ত্ত যা খোয়ার চেয়ে বড় এবং সর্বোচ্চ ২৫৬ মিমি (৮ ফাই ইউনিট অথবা প্রায় একটি ভলিবলের মাপের) ব্যাস বিশিষ্ট। পরিবাহিত হওয়ার সুবাদে কিছুটা গোলাকার বা পরিবহণের ফলে ঘর্ষণের কারণে অন্য কোনো আকার ধারণকারী এ গন্ডশিলা পললবিদদের দ্বারা শনাক্তকৃত সবচেয়ে বড় শিলাখন্ড। অন্যভাবে বলতে গেলে হাতের মুষ্টির মধ্যে তুলে নেয়া যায় না এ ধরনের ভারী যে কোনো শিলাকেই বোঝায়। গন্ডশিলাস্তর হিমবাহ অবক্ষেপ দ্বারা সৃষ্ট গন্ডজ কনগ্লোমারেট (conglomerate) সমন্বয়ে গঠিত হয়।

বাংলাদেশের বৃহত্তর রংপুর ও দিনাজপুর জেলার গন্ডশিলাসমূহ মূলত পাললিক শিলাজাত। অপর দিকে বৃহত্তর সিলেট জেলার জৈন্তাপুর (সোনাটিলা) ও ভোলাগঞ্জ এলাকার গন্ডশিলাসমূহের উৎসশিলা হলো আগ্নেয় বা রূপান্তর শিলা। এ সব অঞ্চল ছাড়াও সংলগ্ন পর্বতমালা থেকে উৎসারিত অসংখ্য পাহাড়ি নদীর তলদেশে ও নদীর কাছাকাছি এলাকায়ও গন্ডশিলা মজুত হয়। সিলেট, চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে এসব পাহাড়ের অধিকাংশ অবস্থিত। টেকনাফের সমভূমি অঞ্চলের তিনটি স্থানে গন্ডশিলা সঞ্চিত আছে। এগুলো হচ্ছে টেকনাফের সিলবুননাপারা, খনকারপাড়া, ডেলপাড়া, ওয়ালিয়াবাদ এলাকা; বারদাইল গ্রামের কাছে মাদারবুনিয়া ছড়া ও ডাক ছড়ার মধ্যবর্তী স্থান এবং উখিয়া উপজেলার ইনানীতে (মোঃ শফি নামক গ্রামের কাছে)। এখানে কঠিন চুনযুক্ত বেলেপাথরের গন্ডশিলার মজুদ কৃষিজমি ও জনবসতিসহ সমভূমি এলাকার উপরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে গন্ডশিলাসমূহ কৃষিজমির অভ্যন্তর থেকে বাইরের দিকে বেরিয়ে আছে। চুনযুক্ত ও লৌহময় বেলেপাথরের গন্ডশিলা ছাড়াও কখনও কখনও নদীর তলদেশে পিন্ডজ গন্ডশিলা দেখতে পাওয়া যায়। টেকনাফ-কক্সবাজার সমুদ্রতীরে মাদারবুনিয়া ছড়া ও রাজার ছড়ার মধ্যবর্তী অঞ্চলে ৭টি স্থানে গন্ডশিলার আলাদা আলাদা মজুত রয়েছে। তটরেখার সমান্তরালে  জোয়ারভাটা বরাবর অঞ্চলে এগুলি শ্রেণিবদ্ধভাবে সাজানো। এ অঞ্চলের গন্ডশিলাসমূহের উপরিভাগ খুবই পরিবর্তিত এবং খোলক (shell) দ্বারা আবৃত।  [সিফাতুল কাদের চৌধুরী]