খালিয়াজুরী উপজেলা

খালিয়াজুরী উপজেলা (নেত্রকোনা জেলা)  আয়তন: ২৯৭.৬৩ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°৩৬´ থেকে ২৪°৫০´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°০০´ থেকে ৯০°১৬´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে মোহনগঞ্জ ও জামালগঞ্জ উপজেলা, দক্ষিণে ইটনা উপজেলা, পূর্বে সাল্লা উপজেলা, পশ্চিমে মদন উপজেলা।

জনসংখ্যা ৯৭৪৫০; পুরুষ ৪৯৭৯৫, মহিলা ৪৭৬৫৫ । মুসলিম ৬৪৭৩৩, হিন্দু ৩২৬৮৩, খ্রিস্টান ১৬ এবং অন্যান্য ১৮।

জলাশয় ধনু, পিয়াইন, সুরমা ও চিনাই নদী এবং রাহুল বিল, রুসকি বিল, পাগলা বিল, কেউরিয়া বিল ও ধ্বরাজ বিল উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন খালিয়াজুরী থানা গঠিত হয় ১৯০৬ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
- ৬৮ ৭৫ ৬১৯৩ ৯১২৫৭ ৩২৭ ২৯.০ ৩০.৫
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
১৮.২১ ৬১৯৩ ৩৪০ ২৯.০
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
কৃষ্ণপুর ৫৪ ৭০৫৩ ৭৩৯১ ৭০৫৭ ৩০.৪
খালিয়াজুরী ৪০ ১১৬২১ ৭৭৫৫ ৭০৮৪ ২৮.৫
গাজীপুর ২৭ ১১৯৬৫ ৬১১৫ ৫৭১৮ ২৩.৭
চকুয়া ১৩ ১৮৯৮৮ ১১৬৩৫ ১১০৯৭ ৩৩.২
নগর ৮১ ৯৬১৮ ৪৬৯৭ ৪৭৩১ ৩৬.৯
মেন্দিপুর ৬৭ ১৪৩০১ ১২২০২ ১১৯৬৮ ২৯.৬

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

মুক্তিযুদ্ধ মুক্তিযুদ্ধের সময় খালিয়াজুরী উপজেলায় পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের কোনো সরাসরি যুদ্ধ হয় নাই। তবে পাক হানাদার বাহিনী উপজেলার কোনো স্থানে তাদের অবস্থানও গড়ে তুলতে পারে নি। উপজেলার ৪ জন মুক্তিযোদ্ধা অন্য এলাকায় যুদ্ধ করতে গিয়ে শহীদ হন।

বিস্তারিত দেখুন খালিয়াজুরী উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৩।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৪০, মন্দির ১৭, মাযার ৫ ।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৩০.৪%; পুরুষ ৩২.২%, মহিলা ২৮.৫%। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: শালদিঘা জিজি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৫৪), খালিয়াজুরী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬৭), কুতুবপুর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬৪)।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী সাহিত্য পত্রিকা ’ধনু’ (অবলূপ্ত)।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ১, ক্লাব ১২, মহিলা সমিতি ৯২, খেলার মাঠ ৫।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৮০.৫৯%, অকৃষি শ্রমিক ৩.৭৯%, শিল্প ০.১৯%, ব্যবসা ৬.১৬%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ০.১৩%, চাকরি ২.১৮%, নির্মাণ ০.৩৫%, ধর্মীয় সেবা ০.২০%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.০৯% এবং অন্যান্য ৬.৩২%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৫৮.৫৫%, ভূমিহীন ৪১.৪৫%। শহরে ৫১.৪১% এবং গ্রামে ৫৯.১৯%  পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসল  তিল, তিসি, সরিষা, কাউন, আমন ধান।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, নারিকেল, কলা, পেঁপে।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার এ উপজেলায় মৎস্য ও হাঁস-মুরগির খামার রয়েছে।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ২৪.৫৯ কিমি, আধাপাকা রাস্তা ১১৯.০২, কাঁচারাস্তা ১৮৭.০৭ কিমি; নৌপথ ৬০ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, গরু ও ঘোড়ার গাড়ি।

কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, দারুশিল্প, সূচিশিল্প, বাঁশের কাজ, কাঠের কাজ প্রভৃতি।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ৭। লেপশিয়া বাজার, খালিয়াজুরী বাজার, কৃষ্ণপুর বাজার, ত্রিমোহনী বাজার এবং চৈত্র সংক্রান্তির মেলা (বরান্তর গ্রাম) উল্লেখযোগ্য।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৩৫.৬% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৮১.৩% এবং অন্যান্য ১৮.৭%। এ উপজেলার অগভীর নলকূপের পানিতে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিকের উপস্থিতি প্রমাণিত হয়েছে।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ২৩.৪% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৫৯.৬% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ১৭.০% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, পল্লী উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র ১, পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ১, ডিসপেনসারি ১, হাসপাতাল ১।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ১৯৮৮ ও ১৯৯৬ সালের বন্যায় এ উপজেলার গবাদিপশু ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়।

এনজিও প্রশিকা, খালিয়াজুরী ফাউন্ডেশন, কনসার্ন বাংলাদেশ, খালিয়াজুরী পল্লী উন্নয়ন ফেডারেশন।  [জীবন কুমার চন্দ]

তথ্যসূত্র   আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; খালিয়াজুরী উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন  ২০০৭।