খান, রোকনুজ্জামান
খান, রোকনুজ্জামান দাদাভাই (১৯২৫-১৯৯৯) সাংবাদিক, শিশুসংগঠক। ফরিদপুর জেলার পাংশা উপজেলায় সাহিত্য-সংস্কৃতসমৃদ্ধ পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন এবং অনুরূপ পরিমন্ডলেই তাঁর জীবন অতিবাহিত হয়। এয়াকুব আলী চৌধুরী ও রওশন আলী চৌধুরী ছিলেন জ্ঞাতি সম্পর্কে তাঁর নানা। তিনি সওগাত সম্পাদক মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীনের কন্যা নূরজাহান বেগমকে বিয়ে করেন। নূরজাহান সাপ্তাহিক বেগম পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন।
রোকনুজ্জামান কলকাতার ইত্তেহাদ (১৯৪৭), শিশু সওগাত (১৯৪৯) ও দৈনিক মিল্লাত (১৯৫১) পত্রিকায় সাংবাদিকতা করেন। তিনি ইত্তেহাদের ‘মিতালী মজলিস’ এবং মিল্লাতের ‘কিশোর দুনিয়া’র শিশুপাতা সম্পাদনা করতেন। ১৯৫৫ সালে তিনি দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় যোগদান করে ‘দাদাভাই’ ছদ্মনামে শিশুদের পাতা ‘কচি-কাঁচার আসর’ সম্পাদনা শুরু করেন এবং আমৃত্যু এর সঙ্গে জড়িত ছিলেন। আর এ থেকেই তিনি ‘দাদাভাই’ নামে দেশব্যাপী পরিচিত হয়ে ওঠেন।
রোকনুজ্জামান নিজে অনেক কবিতা ও ছড়া লিখেছেন এবং শিশুদের লেখা সংশোধন ও সম্পাদনা করে পত্রিকায় প্রকাশ করেছেন। শিশুদের চিত্তবৃত্তির উন্মেষ ও প্রতিভার বিকাশে তিনি নিরলস প্রয়াস চালিয়েছেন। তাঁর সম্পাদিত আমার প্রথম লেখা (১৯৫৭) গ্রন্থে বিশিষ্ট শিশুসাহিত্যিক ও লেখকদের সেসব লেখা স্থান পেয়েছে, যেগুলি কচি-কাঁচার পাতায় প্রথম মুদ্রিত হয়েছে। তাঁর প্রকাশিত শিশুতোষ গ্রন্থ হচ্ছে হাট্টিমাটিম (১৯৬২), খোকন খোকন ডাক পাড়ি, আজব হলেও গুজব নয় প্রভৃতি। তাঁর সম্পাদিত ঝিকিমিকি একটি গুরুত্বপূর্ণ শিশুসংকলন। এসব রচনার মাধ্যমে তিনি কোমলমতি শিশুদের মনে নীতিজ্ঞান, দেশপ্রেম ও চারিত্রিক গুণাবলি জাগ্রত করার চেষ্টা করেন। তিনি কচি ও কাঁচা (১৯৬৫) নামে একটি মাসিক পত্রিকা সম্পাদনা ও প্রকাশ করেন।
রোকনুজ্জামানের অপর একটি বড় অবদান ‘কচি-কাঁচার মেলা’ (১৯৫৬) নামে একটি শিশুসংগঠন প্রতিষ্ঠা। তাঁর অক্লান্ত প্রচেষ্টায় এর শাখা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। ঢাকায় এর মূল কেন্দ্র অবস্থিত। সম্প্রতি নোরাডের আর্থিক সহায়তায় সেগুনবাগিচায় এর কেন্দ্রীয় ভবন নির্মিত হয়েছে। এতে শিশুদের গান, আবৃত্তি, চিত্রাঙ্কন ইত্যাদি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এছাড়াও তাদের পাঠাভ্যাস গড়ে তোলার জন্য ‘কাকলী পাঠাগার’ স্থাপিত হয়। লক্ষ্য একই দেহে ও মনে শিশুদের সৎ ও আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা। তিনি বাঙালি সংস্কৃতি লালন করতেন বলে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি সেনারা কচি-কাঁচার মেলার অফিস ভাংচুর করে এবং বইপত্র পুড়িয়ে দেয়।
রোকনুজ্জামান খান সৃজনশীল ও সাংগঠনিক কর্মের পুরস্কারস্বরূপ বাংলা একাডেমী পুরস্কার (১৯৬৮), শিশু একাডেমী পুরস্কার (১৯৯৪), একুশে পদক (১৯৯৮), জসিমউদ্দীন স্বর্ণপদক এবং রোটারি ইন্টারন্যাশনাল ও রোটারি ফাউন্ডেশন ট্রাস্টির পল হ্যারিস ফেলো সম্মানে ভূষিত হন। [ওয়াকিল আহমদ]