খান, মোহাম্মদ সালার
খান, মোহাম্মদ সালার (১৯২৪-২০০২) শিক্ষাবিদ ও উদ্ভিদ শ্রেণিবিন্যাস বিশারদ (Plant taxonomist)। ভারতের অন্ধ্র প্রদেশের কাকিনাদা গ্রামে ১৯২৪ সালের ২ মার্চ তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তিনি আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৪৭ সালে উদ্ভিদবিজ্ঞানে এম.এসসি ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৫০ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসেবে তৎকালীন জীববিজ্ঞান বিভাগে যোগদান করেন এবং পরবর্তীতে এই বিভাগ থেকে আলাদা হয়ে যাওয়া উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন পদে কর্মরত ছিলেন। সপুষ্পক উদ্ভিদের (Angiosperm) শ্রেণিবিন্যাসের ওপর গবেষণাকর্ম সম্পাদন করে তিনি ১৯৬২ সালে যুক্তরাজ্যের এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচ.ডি ডিগ্রি লাভ করেন। যুক্তরাজ্যে থাকাকালীন সময়ে সালার খান পশ্চিম তুরস্কের পার্বত্য অঞ্চলের উদ্ভিদের ওপর গবেষণা ও উদ্ভিদ সংগ্রহের নিমিত্তে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক আয়োজিত একটি অভিযানে অংশগ্রহণ করেন।
অধ্যাপক সালার খান সমগ্র বাংলাদেশের সপুষ্পক উদ্ভিদের তালিকা প্রণয়নের পুরোধা ছিলেন। তিনি বাংলাদেশের উদ্ভিদ সংগ্রহ ও সংরক্ষণের জাতীয় প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ জাতীয় হার্বেরিয়াম (Bangladesh National Herbarium) প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এ সমস্ত কর্মকান্ডের ফলস্বরূপ বর্তমানে বাংলাদেশের উদ্ভিদকুলের তালিকার ওপর ধারাবাহিক সংষ্করণের ৫৩তম সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়াও বাংলাদেশের জলজ উদ্ভিদ, বাংলাদেশের উদ্ভিদরাজির ওপর লাল তথ্য পুস্তক (Red Data Book), জাতিগত উদ্ভিদতত্ত্ব (Ethno-botanical Studies), ভেষজ ও বিষাক্ত উদ্ভিদ সংক্রান্ত গবেষণা, জমির আগাছা এবং উদ্ভিদ সংক্রান্ত অন্যান্য বিভিন্ন বিষয়, যেমন- বাস্ত্তভিটার উদ্ভিজ্জ, জীব বৈচিত্র্য এবং জেনেটিক রিসোর্সেস সংরক্ষণের (Genetic Resources) ওপর বহু প্রবন্ধ রচনা করেন। তিনি তাঁর সমগ্র জীবনে ১৫০টিরও বেশি গবেষণামূলক প্রবন্ধ রচনা করেছেন। এ সমস্ত প্রবন্ধে তিনি দেশবিদেশের ১৯টি নতুন সপুষ্পক উদ্ভিদের প্রজাতি বর্ণনা করেছেন।
মোহাম্মদ সালার খান উদ্ভিদ বিশেষজ্ঞ হিসেবে জাতীয় সমন্বয়কারী (National Coordinator), জীব বৈচিত্র্য ও জেনেটিক রিসোর্সেস সংরক্ষণ প্রকল্প, কমনওয়েলথ বিজ্ঞান কাউন্সিল ও জাতীয় সংরক্ষণ নীতি এবং আই.ইউ.সি.এন (IUCN)-এর স্পীশীজ সারভাইভাল কমিশনে (Species Survival Commissions) কাজ করেন।
অধ্যাপক সালার খান ১৯৯৩-৯৪ সালে বাংলাদেশ বোটানিক্যাল সোসাইটির সভাপতি, ১৯৯৭ থেকে আমৃত্যু বাংলাদেশ ন্যাশনাল বায়োডাইভারসিটি গ্রুপের সভাপতি এবং ১৯৯২ থেকে আমৃত্যু বাংলাদেশ এ্যসোসিয়েশন অব প্ল্যান্ট ট্যাকসনমিস্ট-এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। সপুষ্পক উদ্ভিদের ট্যাকসনমির ক্ষেত্রে তাঁর অসাধারণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ বোটানিক্যাল সোসাইটি ২০০২ সালে তাঁকে ‘অনারারি ফেলো’ সম্মাননা প্রদান করে। তিনি ২০০২ সালের ২০ সেপ্টেন্বর ঢাকায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। [সিফাতুল কাদের চৌধুরী]