খান, গোলাম ফারুক
খান, গোলাম ফারুক (১৮৯৯-১৯৯২) পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর। উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের নওশেরা জেলার শায়দু গ্রামে ১৮৯৯ সালের ৭ অক্টোবর তাঁর জন্ম। খান বাহাদুর গোলাম ফারুক খান আলীগড় মোহামেডান অ্যাংলো ওরিয়েন্টাল কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করার পর ১৯২১ সালে বেঙ্গল-নাগপুর রেলওয়েতে অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রাফিক সুপারিন্টেন্ডেন্ট পদে যোগদান করেন। তিনি রেলওয়ে বোর্ডের ট্রান্সপোর্ট অ্যাডভাইজরি অফিসার (১৯৪০-১৯৪২), কন্ট্রোলার অব কোল ডিস্ট্রিবিউশন (১৯৪২-১৯৪৬), বেঙ্গল-নাগপুর রেলওয়ের ট্রান্সপোর্ট ম্যানেজার (১৯৪৬), ইস্ট ইন্ডিয়ান রেলওয়েজ-এর চীফ অপারেটিং সুপারিন্টেন্ডেন্ট (১৯৪৬) এবং জেনারেল ম্যানেজার (১৯৪৬-১৯৪৮) হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি পাকিস্তান জুট বোর্ড এবং কটন বোর্ডের চেয়ারম্যান (১৯৪৯-১৯৫২), পাকিস্তান ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভলপমেন্ট কর্পোরেশনের (পি আই ডি সি) চেয়ারম্যান (১৯৫২-১৯৫৮) এবং পাকিস্তান অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। গোলাম ফারুককে পানি ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (ওয়াপদা) গঠনের দায়িত্ব দেয়া হয় এবং ১৯৫৮ সালে তিনি পূর্ব পাকিস্তান পানি ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন। তিনি সিন্ধুনদ পানি চুক্তি বাস্তবায়নের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। পরে তিনি গুরুত্বপূর্ণ সরকারি দায়িত্ব পালন করেন, যেমন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর (১৯৬২), কেন্দ্রীয় বাণিজ্যমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা (১৯৬৫-১৯৬৭), পাকিস্তান ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান, শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের অর্থ, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন মন্ত্রী। তিনি জাতীয় পরিষদ, ফেডারেল কাউন্সিল এবং সিনেটেও গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন।
গোলাম ফারুক ১৯৬২ সালে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর নিযুক্ত হন এবং ১১ মে শপথ গ্রহণ করেন। পূর্ব পাকিস্তানের পাট শিল্পের উন্নয়ন ও প্রসারে তিনি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। পূর্ব পাকিস্তানের উত্তপ্ত রাজনৈতিক অবস্থার প্রেক্ষিতে গভর্নর ফারুক রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনার সূত্রপাত করেন। এ আলোচনায় নেতৃত্ব দেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। নেতৃবৃন্দ পাকিস্তানের নতুন সংবিধান (১৯৬২) বাতিলের পাশাপাশি শিক্ষা কমিশনের রিপোর্টও বাতিলের দাবি জানান। এ সময়ে ছাত্ররা ‘শরীফ কমিশন’ নামে পরিচিত জাতীয় শিক্ষা কমিশনের বিতর্কিত সুপারিশের বিরুদ্ধে আন্দোলনরত ছিল। এ অবস্থায় গোলাম ফারুক গভর্নরের পদ থেকে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন এবং ১৯৬২ সালের ২৮ অক্টোবর তাঁর পদত্যাগপত্র গৃহীত হয়।
গোলাম ফারুক ছিলেন একজন খ্যাতনামা শিল্প উদ্যোক্তা। তিনি ১৯৪৭ সালে ‘গোলাম ফারুক গ্রুপ’ নামে একটি বাণিজ্যিক ও শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন।
গোলাম ফারুক খান একাধিক সম্মাননা লাভ করেন, যেমন ‘অফিসার অব দি অর্ডার অব দি ব্রিটিশ এম্পায়ার’ (১৯৪৪), ‘কম্প্যানিয়ন অব দি অর্ডার অব দি ইন্ডিয়ান এম্পায়ার’ (১৯৪৬), ‘কমান্ডার অব দি অর্ডার অব মেরিট’, স্পেন (১৯৫৬) এবং হিলাল-ই-পাকিস্তান (১৯৫৮)।
গোলাম ফারুক ১৯৯২ সালে মৃত্যুবরণ করেন। [আবু জাফর]