খাওয়ার স্যালাইন

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ১৯:৫৯, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)

খাওয়ার স্যালাইন (Oral Rehydration Saline/Orsaline)  শরীরের পানি ও লবণের (Electrolytes) ঘাটতিপূরণ করার জন্য মুখে গ্রহনযোগ্য লবণ ও গ্লুকোজ মিশ্রিত পানি। ডায়রিয়া/কলেরায় ঘন ঘন পাতলা পায়খানার কারণে অতি অল্প সময়ে শরীর থেকে প্রচুর পানি ও লবণ বেরিয়ে যায়। বিশেষ করে সোডিয়াম এবং পটাশিয়ামের ঘাটতি জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়। পানিস্বল্পতা পূরণ বা রিহাইড্রেশন (rehydration) এসব ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পদ্ধতি। অধিকাংশ উন্নয়নশীল দেশে ব্যক্তিগত পরিচছন্নতা, পয়ঃনিষ্কাশন এবং নিরাপদ খাবার পানির অভাবে এ জাতীয় ডায়রিয়া রোগের প্রকোপ অত্যন্ত বেশি। কলেরা রোগে পানি স্বল্পতাপূরণের জন্য সাধারণত শিরা পথে স্যালাইন ইনজেকশন প্রয়োগ করা হয়, যাতে থাকে সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্লোরাইড এবং গ্লুকোজের সঙ্গে অল্প পরিমাণ বাইকার্বোনেট। এসব দেশে পানিস্বল্পতা দূরীকরণের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে শিরা পথে স্যালাইন ইনজেকশন প্রয়োগ সব সময় সহজলভ্য নয়। এ কারণে পানিস্বল্পতা দূরীকরণের জন্য স্যালাইনের সবগুলি উপাদান সহজে ব্যবহারযোগ্য পানীয় হিসেবে মুখে খাওয়ানোর সম্ভাব্যতা যাচাই করা ছিল দীর্ঘদিনের বৈজ্ঞানিক গবেষণার বিষয়।

ঢাকায় অবস্থিত তৎকালীন পাকিস্তান সিয়াটো কলেরা রিসার্চ ল্যাবরেটরি (PSCRL) পানিস্বল্পতা দূরীকরণের গবেষণায় পথিকৃতের ভূমিকা পালন করে। এখানকার রিসার্চ ল্যাবরেটরির কলেরা ওয়ার্ডে গবেষণা পরিচালিত হয়। নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে কলেরায় আক্রান্ত রোগীদের পানিস্বল্পতা দূরীকরণে খাওয়ার স্যালাইনের কার্যকারিতা প্রমাণিত হয়। কলেরা মহামারীর সময় খাওয়ার স্যালাইনের কার্যকারিতা প্রমাণের জন্য এ গবেষণা মাঠ পর্যায়ে সম্প্রসারিত হয়। সিয়াটো কলেরা রিসার্চ ল্যাবরেটরি পরিচালিত মাঠ পর্যায়ের মতলব কেন্দ্র রোগীদের উপর পরীক্ষা পরিচালনার ক্ষেত্রে অবিস্মরণীয় ভূমিকা রাখে। বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের এক অধ্যাদেশ বলে PSCRL রূপান্তরিত হয়ে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র (আইসিডিডিআর,বি) নামকরণ করা হয়। আইসিডিডিআর,বি কলেরা এবং অন্যান্য ডায়রিয়া রোগে মুখে পানিস্বল্পতার চিকিৎসা সাফল্যজনকভাবে ব্যাপক জনগোষ্ঠীর মধ্যে পরিচালিত করে আসছে। এ উদ্দেশ্যে অতি সহজে বাড়িতে সাধারণ লবণ এবং পটাশিয়ামসমৃদ্ধ গুড় মিশিয়ে খাওয়ার স্যালাইন তৈরি করে তার কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ ফরমুলাকে বাংলায় বলা হয়েছে ‘লবণ গুড়’ এর খাওয়ার স্যালাইন। অন্য একটি ফরমুলায় রোগী সহজে খেতে পারে এমন তরল আকারে চালের গুঁড়া দিয়ে স্যালাইন তৈরি করা হয়েছে এবং এর নাম দেওয়া হয়েছে চালের গুঁড়ার খাওয়ার স্যালাইন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমোদিত লবণ ও গ্লুকোজ নির্ভর খাওয়ার স্যালাইনের প্যাকেট বাজারে ছাড়া হয়েছে। এর সুবিধাজনক দিক হলো, এটি তৈরির সময় এর উপাদানগুলির মান সঠিকভাবে দেখা হয়। আধা লিটার পানিতে এক প্যাকেট খাওয়ার স্যালাইন মিশিয়ে যে দ্রবণ তৈরি করা হয়, তাতে প্রয়োজনীয় সবগুলি উপাদানই বিদ্যমান থাকে এবং এ দ্রবণ ফ্রিজে না রাখলেও প্রায় ১২ ঘণ্টা নিরাপদ থাকে।  [জিয়া উদ্দিন আহমেদ]