খাঁ, ফকির আফতাবউদ্দিন: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

(Added Ennglish article link)
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
[[Image:KhanFakirAftabuddin.jpg|thumb|400px|right|আফতাবউদ্দিন খাঁ]]
'''খাঁ, ফকির আফতাবউদ্দিন''' (১৮৬২-১৯৩৩) গীতিকার, সুরকার, গায়ক, বংশীবাদক।  [[ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলা|ব্রাহ্মণবাড়ীয়া]] জেলার নবীনগর উপজেলার শিবপুর গ্রামে এক বিখ্যাত সঙ্গীত পরিবারে তাঁর জন্ম। তাঁর পিতা সবদর হোসেন খাঁ ওরফে সদু খাঁ, মাতার নাম সুন্দরী বেগম। তাঁর পিতা ছিলেন একজন সঙ্গীতজ্ঞ। এই পরিবারে তিনি সর্বপ্রথম সঙ্গীতচর্চা শুরু করেন। ওস্তাদ  [[খাঁ, ওস্তাদ আলাউদ্দিন|আলাউদ্দিন খাঁ]] ও ওস্তাদ  [[খাঁ, ওস্তাদ আয়েত আলী|আয়েত আলী খাঁ]] হচ্ছেন তাঁর দু অনুজ তাদের সঙ্গীত গুরু।
'''খাঁ, ফকির আফতাবউদ্দিন''' (১৮৬২-১৯৩৩) গীতিকার, সুরকার, গায়ক, বংশীবাদক।  [[ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলা|ব্রাহ্মণবাড়ীয়া]] জেলার নবীনগর উপজেলার শিবপুর গ্রামে এক বিখ্যাত সঙ্গীত পরিবারে তাঁর জন্ম। তাঁর পিতা সবদর হোসেন খাঁ ওরফে সদু খাঁ, মাতার নাম সুন্দরী বেগম। তাঁর পিতা ছিলেন একজন সঙ্গীতজ্ঞ। এই পরিবারে তিনি সর্বপ্রথম সঙ্গীতচর্চা শুরু করেন। ওস্তাদ  [[খাঁ, ওস্তাদ আলাউদ্দিন|আলাউদ্দিন খাঁ]] ও ওস্তাদ  [[খাঁ, ওস্তাদ আয়েত আলী|আয়েত আলী খাঁ]] হচ্ছেন তাঁর দু অনুজ তাদের সঙ্গীত গুরু।


পারিবারিক প্রভাবে শৈশব থেকেই আফতাবউদ্দিনের মধ্যে সঙ্গীতস্পৃহা জেগে ওঠে। তিনি পার্শ্ববর্তী বাঙ্গোড়া গ্রামের জমিদার-দরবারের দু সঙ্গীতজ্ঞ ভ্রাতা রামধন ও রামকানাইয়ের নিকট  [[তবলা|তবলা]] ও বেহালা শেখেন। ত্রিপুরার রাজদরবারের কাসিম আলী খাঁ ছিলেন তাঁর সঙ্গীতগুরু। আফতাবউদ্দিন বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রে ব্যুৎপন্ন ছিলেন, তবে বংশীবাদনেই তাঁর খ্যাতি ছিল সর্বাধিক। কথিত হয় যে, তাঁর বংশীবাদন শুনে পাখিরা পর্যন্ত সম্মোহিত হয়ে যেত। তিনি তবলা ও ন্যাসতরঙ্গ বাদনেও দক্ষ ছিলেন। ন্যাসতরঙ্গ বাজানো খুব কঠিন, কারণ এতে কঠোরভাবে নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণ করতে হয়।
পারিবারিক প্রভাবে শৈশব থেকেই আফতাবউদ্দিনের মধ্যে সঙ্গীতস্পৃহা জেগে ওঠে। তিনি পার্শ্ববর্তী বাঙ্গোড়া গ্রামের জমিদার-দরবারের দু সঙ্গীতজ্ঞ ভ্রাতা রামধন ও রামকানাইয়ের নিকট  [[তবলা|তবলা]] ও বেহালা শেখেন। ত্রিপুরার রাজদরবারের কাসিম আলী খাঁ ছিলেন তাঁর সঙ্গীতগুরু। আফতাবউদ্দিন বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রে ব্যুৎপন্ন ছিলেন, তবে বংশীবাদনেই তাঁর খ্যাতি ছিল সর্বাধিক। কথিত হয় যে, তাঁর বংশীবাদন শুনে পাখিরা পর্যন্ত সম্মোহিত হয়ে যেত। তিনি তবলা ও ন্যাসতরঙ্গ বাদনেও দক্ষ ছিলেন। ন্যাসতরঙ্গ বাজানো খুব কঠিন, কারণ এতে কঠোরভাবে নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণ করতে হয়।
[[Image:KhanFakirAftabuddin.jpg|thumb|400px|RIGHTআফতাবউদ্দিন খাঁ]]


আফতাবউদ্দিনের একটি বিশেষ কৃতিত্ব যে, তিনি একসঙ্গে তিনটি  [[বাদ্যযন্ত্র|বাদ্যযন্ত্র]] বাজাতে পারতেন। কখনও তবলা,  [[বাঁশি|বাঁশি]] ও  [[হারমোনিয়াম|হারমোনিয়াম]]; আবার কখনও  [[দোতারা|দোতারা]], বাঁশি ও বাঁয়া। এভাবে তিনি যখন গান গাইতেন তখন মনে হতো একসঙ্গে অনেকে গান গাইছে আর যন্ত্র বাজাচ্ছে। তিনি ‘মেঘডম্বুর’ ও ‘স্বরসংগ্রহ’ নামে দুটি বাদ্যযন্ত্রও উদ্ভাবন করেন। আফতাবউদ্দিন কুমিল্লার সাধক কবি মনোমোহন দত্তের গানে সুরারোপ করে গ্রামে গ্রামে গেয়ে সেগুলিকে জনপ্রিয় করে তোলেন।
আফতাবউদ্দিনের একটি বিশেষ কৃতিত্ব যে, তিনি একসঙ্গে তিনটি  [[বাদ্যযন্ত্র|বাদ্যযন্ত্র]] বাজাতে পারতেন। কখনও তবলা,  [[বাঁশি|বাঁশি]] ও  [[হারমোনিয়াম|হারমোনিয়াম]]; আবার কখনও  [[দোতারা|দোতারা]], বাঁশি ও বাঁয়া। এভাবে তিনি যখন গান গাইতেন তখন মনে হতো একসঙ্গে অনেকে গান গাইছে আর যন্ত্র বাজাচ্ছে। তিনি ‘মেঘডম্বুর’ ও ‘স্বরসংগ্রহ’ নামে দুটি বাদ্যযন্ত্রও উদ্ভাবন করেন। আফতাবউদ্দিন কুমিল্লার সাধক কবি মনোমোহন দত্তের গানে সুরারোপ করে গ্রামে গ্রামে গেয়ে সেগুলিকে জনপ্রিয় করে তোলেন।

০৬:২৫, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

আফতাবউদ্দিন খাঁ

খাঁ, ফকির আফতাবউদ্দিন (১৮৬২-১৯৩৩) গীতিকার, সুরকার, গায়ক, বংশীবাদক।  ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলার নবীনগর উপজেলার শিবপুর গ্রামে এক বিখ্যাত সঙ্গীত পরিবারে তাঁর জন্ম। তাঁর পিতা সবদর হোসেন খাঁ ওরফে সদু খাঁ, মাতার নাম সুন্দরী বেগম। তাঁর পিতা ছিলেন একজন সঙ্গীতজ্ঞ। এই পরিবারে তিনি সর্বপ্রথম সঙ্গীতচর্চা শুরু করেন। ওস্তাদ  আলাউদ্দিন খাঁ ও ওস্তাদ  আয়েত আলী খাঁ হচ্ছেন তাঁর দু অনুজ তাদের সঙ্গীত গুরু।

পারিবারিক প্রভাবে শৈশব থেকেই আফতাবউদ্দিনের মধ্যে সঙ্গীতস্পৃহা জেগে ওঠে। তিনি পার্শ্ববর্তী বাঙ্গোড়া গ্রামের জমিদার-দরবারের দু সঙ্গীতজ্ঞ ভ্রাতা রামধন ও রামকানাইয়ের নিকট  তবলা ও বেহালা শেখেন। ত্রিপুরার রাজদরবারের কাসিম আলী খাঁ ছিলেন তাঁর সঙ্গীতগুরু। আফতাবউদ্দিন বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রে ব্যুৎপন্ন ছিলেন, তবে বংশীবাদনেই তাঁর খ্যাতি ছিল সর্বাধিক। কথিত হয় যে, তাঁর বংশীবাদন শুনে পাখিরা পর্যন্ত সম্মোহিত হয়ে যেত। তিনি তবলা ও ন্যাসতরঙ্গ বাদনেও দক্ষ ছিলেন। ন্যাসতরঙ্গ বাজানো খুব কঠিন, কারণ এতে কঠোরভাবে নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণ করতে হয়।

আফতাবউদ্দিনের একটি বিশেষ কৃতিত্ব যে, তিনি একসঙ্গে তিনটি  বাদ্যযন্ত্র বাজাতে পারতেন। কখনও তবলা,  বাঁশি ও  হারমোনিয়াম; আবার কখনও  দোতারা, বাঁশি ও বাঁয়া। এভাবে তিনি যখন গান গাইতেন তখন মনে হতো একসঙ্গে অনেকে গান গাইছে আর যন্ত্র বাজাচ্ছে। তিনি ‘মেঘডম্বুর’ ও ‘স্বরসংগ্রহ’ নামে দুটি বাদ্যযন্ত্রও উদ্ভাবন করেন। আফতাবউদ্দিন কুমিল্লার সাধক কবি মনোমোহন দত্তের গানে সুরারোপ করে গ্রামে গ্রামে গেয়ে সেগুলিকে জনপ্রিয় করে তোলেন।

আফতাবউদ্দিন রাগসঙ্গীতেও পারদর্শী ছিলেন। তাঁর গানে সুরের বৈশিষ্ট্য ছিল রাগনির্ভর। তিনি  লোকসঙ্গীত ও রাগসঙ্গীতের মধ্যে সেতুবন্ধ রচনা করেছিলেন। মনোমোহন দত্ত রচিত সব গানে রাগরাগিনীর সুর প্রয়োগ করে তিনিই সর্বপ্রথম প্রমাণ করেন, পল্লিসঙ্গীত ও রাগসঙ্গীত পরস্পরের পরিপূরক। ঠাকুরের পরিবারের একাংশ পাথুরিয়া ঠাকুর বাড়ির জমিদার জগদিন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে আফতাবউদ্দিনের খুব ঘনিষ্ট সম্পর্ক ছিল। তাঁর বাড়ির জলসা ঘরে আফতাবউদ্দিনের বাঁশির আসর বসতো প্রায়। তার যোগসূত্র ধরে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আফতাবউদ্দিনের গান শুনে বলেছিলেন, পল্লিগানের বাণীতে রাগসঙ্গীতের সুর প্রয়োগের এই দুরূহ কাজটি অসাধারণ। কাজী নজরুল ইসলাম একদিন এক আসরের গান শুনে কবি-বন্ধু কাজী মোতাহার হোসেনকে লেখা চিঠিতে দারুণ প্রশংসা করেছিলেন। সঙ্গীতের ক্ষেত্রে এটি তাঁর অন্যতম কৃতিত্ব। তিনি ছিলেন আল্লাহভক্ত ও সংসারবিরাগী এক আত্মভোলা মানুষ। তাই লোকে তাঁকে ‘ফকির’ (তাপস) বলে ডাকত। কালীসাধনার জন্য তিনি ‘আফতাবউদ্দিন সাধু’ নামেও পরিচিত ছিলেন।  [মোবারক হোসেন খান]