খসরু, আবদুল মতিন
খসরু, আবদুল মতিন (১৯৫০-২০২১) রাজনীতিবিদ, সংসদ সদস্য, মুক্তিযোদ্ধা ও আইনজীবী। মতিন খসরু ১৯৫০ সালের ১২ই ফেব্রুয়ারি কুমিল্লা জেলার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার মিরপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করে। তাঁর পিতা নাম আবদুল মালেক এবং মাতা জাহানারা বেগম। তারা চার ভাই ও তিন বোন৷ ১৯৬৬ সালে কুমিল্লা মাধবপরি হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন এবং ১৯৬৮ সালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট, ১৯৭০ সালে একই কলেজ থেকে বি.কম এবং ১৯৭৬ সালে কুমিল্লা আইন কলেজ থেকে এল.এল.বি ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজ কল্যাণ বিষয়ে স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে অধ্যয়ন করেন। মতিন খসরু ছাত্রজীবন থেকে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের রাজনীতির সংগে জড়িত হন। ১৯৮০ সাল পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ এবং ১৯৮০ থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হন। তিনি পর পর তিন বার দলের কেন্দ্রীয় কমিটির আইন বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম প্রেসিডিয়ামের সদস্য ছিলেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে তিনি সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন এবং কুমিল্লা জেলার অবিভক্ত বুড়িচং থানার মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ছিলেন। তিনি একজন প্রথিতযশা আইনজীবী ছিলেন। ১৯৭৮ সালে কুমিল্লা জজকোর্টে যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে তাঁর আইন পেশা শুরু। ১৯৮২ সাল থেকে তিনি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে প্র্যাকটিস শুরু করেন। ২০২১ সালে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হয়ে আমৃত্যু দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে মোট পাঁচ বার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়নে কুমিল্লা-৫ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পঞ্চম জাতীয় সংসদে (১৯৯১) তিনি ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার প্রথম মন্ত্রীসভায় তিনি আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় জাতীয় সংসদে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের যারা নৃশংস হত্যাকারী, তাদের বিচার যাতে না হয় সে জন্য ক্ষমতা দখলধারীদের কর্তৃক জারিকৃত কুখ্যাত ‘ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ’ বাতিলে বিল উত্থাপন করেন এবং ঐ অধ্যাদেশটি বাতিলের মধ্য দিয়ে এ নৃশংস হত্যার বিচারের পথ উন্মুক্ত হয়। তিনি সর্বপ্রথম জাতীয় সংসদে আইন প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় সুশীল সমাজসহ অংশীজনদের অংশগ্রহণের জন্য অংশগ্রহণমূলক পদ্ধতি প্রবর্তন করেন। ১৯৯৯ সালে তার উদ্যোগে সংবিধানের প্রথম পকেট সংস্করণ প্রকাশিত হয়।
২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদে তিনি বেসরকারি সদস্যদের বিল এবং বেসরকারি সদস্যদের সিদ্ধান্ত প্রস্তাব সম্পর্কিত কমিটির সভাপতি এবং আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি এবং জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদে তিনি প্রথমে অনুমিত হিসাব সম্পর্কিত কমিটির সভাপতি এবং পরবর্তিতে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি সভাপতির এবং কার্যপ্রণালী বিধি সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মৃত্যুর পূর্ব-পর্যন্ত তিনি আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবং বেসরকারি সদস্যদের বিল এবং বেসরকারি সদস্যদের সিদ্ধান্ত প্রস্তাব সম্পর্কিত কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন।
মতিন খসরু এশিয়ান আফ্রিকান লিগ্যাল কনসালটেটিটিভ কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট, পার্লামেন্টারিয়ান অব গ্লোবাল এ্যাকশন কমিটির সদস্য, ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অব দি এশিয়ান পলিটিক্যাল পার্টির স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, বাংলাদেশ ডায়েবিটিক সোসাইটি (ঢাকা), বাংলাদেশ এপেক্স ক্লাবের আজীবন সদস্য ছিলেন। তিনি ২০০৯ সালে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেমোক্রেসি এন্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইডিডি)-এর প্রতিষ্ঠাকালীন মেন্টর ছিলেন।
তিনি তাঁর নির্বাচনী এলাকায় নিজ নামে ৪টি কলেজ, ৩টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসাসহ বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। এলাকায় বিভিন্ন সমাজ সেবামূলক কর্মকা-ে তিনি জড়িত ছিলেন।
কোভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে তিনি ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ২০২১ সালের ১৪ই এপ্রিল মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর স্ত্রী নাম সেলিনা সোবহান খসবু। এ দম্পতির এক পুত্র ও এক কন্যা সন্তান রয়েছে। [শরীফ আহমদ চৌধুরী]