খলিফতাবাদ

খলিফতাবাদ  ভৈরব নদীর তীরে বর্তমান বাগেরহাট শহরের সাথে শনাক্তকৃত নগর। পরবর্তী ইলয়াসশাহী সুলতান নাসিরুদ্দীন মাহমুদ শাহ এর (১৪৩৫-৩৬ - ১৪৫৯-৬০ খ্রি.) আমলে খান জাহান (মৃত্যু ১৪৫৯ খ্রি.) উপাধিধারী জনৈক শাসনকর্তা (মুকতা) কর্তৃক খলিফতাবাদ এলাকাকে মুসলিম অধিকারে আনা হয়। নাসিরুদ্দীন নুসরত শাহের শাসনকালে (১৫১৯-১৫৩২ খ্রি.) ৯২২ হিজরিতে (১৫১৬ খি.) টাকশাল শহর হিসেবে শহরটির আবির্ভাব ঘটে এবং গিয়াসউদ্দীন মাহমুদ শাহ এর রাজত্বকাল পর্যন্ত (১৫৩২-১৫৩৮ খ্রি.) এটির এ মর্যাদা অক্ষুণ্ণ ছিল। ১৫৩৫ খ্রিস্টাব্দে সুলতান গিয়াসউদ্দীন মাহমুদ শাহ ‘খলিফতাবাদ-বদরপুর’ নামে শহরটির নতুন নামকরণ করেন। সুলতান তাঁর সম্মান সূচক উপাধি আবদ-আল-বদর অনুসরণে ‘বদরপুর’ শব্দটি এর সাথে যুক্ত করেন। ষোল শতকে তৈরি ডি. ব্যারস, ব্লাইভ এবং ভেন ডেন ব্রুকের পর্তুগিজ মানচিত্রে শহরটিকে ‘কুইপাটাভাজ’, যা খলিফতাবাদের বিকৃত উচ্চারণ, নামে দেখানো হয়েছে। বর্তমানে বাগেরহাটের চারদিকের এলাকা আঠারো শতকের শেষ পর্যন্ত হাওয়েলী খলিফতাবাদ বা উপ-শাসকের আবাসস্থল নামে পরিচিত ছিল। আবুল ফজলের আইন-ই-আকবরী গ্রন্থে এ নাম দেওয়া হয়।

শহর ও শহরতলীতে কয়েকটি ঐতিহাসিক স্থান ও স্মৃতিস্তম্ভ আছে। খান জাহান কর্তৃক তৈরী বিখ্যাত ষাটগম্বুজ মসজিদ বাগের হাটের চার মাইল পশ্চিমে অবস্থিত। মসজিদটির সন্নিকটে প্রায় একশত একর জমি জুড়ে উল্লিখিত শাসকের আদেশে একটি দিঘি (বড়পুকুর) খনন করা হয়। এটির জনপ্রিয় নাম ‘ঘোড়াদিঘি’। বাগেরহাট শহর থেকে সারে চার কিলোমিটার এবং ষাটগম্বুজ মসজিদে যেতে প্রধান সড়ক থেকে এক কিলোমিটার দূরে আরও একটি বড় দিঘির পাড়ে খান জাহানের সমাধি সৌধ অবস্থিত। দিঘিটির আয়তন প্রায় একশত আশি একর এবং এটি ‘ঠাকুরদিঘি’ নামে পরিচিত। বিভিন্ন ইমারতের ধ্বংসাবশেষ এবং খলিফতাবাদের পাকা রাস্তার প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্ব অনেক এবং এর থেকে বোঝা যায় যে, এককালে শহরটি বেশ বড় এবং সমৃদ্ধশালী ছিল। এটি একটি টাকশাল এবং প্রশাসনিক সদরদপ্তর ছিল এবং এটি জলাভূমি ও বিল এলাকায় পরিকল্পিত ভাবে গড়ে উঠেছিল।

খান জাহানের মৃত্যু দিবস বলে স্বীকৃত চৈত্র মাসের (মার্চ-এপ্রিল) পূর্ণিমা তিথিতে সমাধিসৌধের সম্মুখস্থ মাঠে প্রতি বছর মেলা অনুষ্ঠিত হয়। এ উপলক্ষে হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে সকল শ্রেণির মানুষ এখানে সমবেত হয়।  [মোঃ আখতারুজ্জামান]