ক্ষুরারোগ

ক্ষুরারোগ (Foot and Mouth Disease) হলো সমস্ত দ্বি-বিভক্তক্ষুর বিশিষ্ট প্রাণীর একটি অত্যন্ত সংক্রামক ভাইরাল রোগ যা বেশির ভাগ গবাদিপশু যেমন গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, হরিণ এবং শূকরকে আক্রান্ত করে। বাংলাদেশে একে ক্ষুরারোগ, ক্ষুরাচল ও বাতা বলা হয়। এই রোগের প্রধান কারণ হল একটি আরএনএ ভাইরাস যা পিকোরনাভিরিডি পরিবারের অধীনে অ্যাপথো ভাইরাস। ভাইরাসটির সাতটি স্বতন্ত্র সেরো টাইপ (A, O, C, Asia-1, SAT-1, SAT-2, SAT-3) এবং ৬২টি সাব-টাইপ রয়েছে। এ পর্যন্ত বাংলাদেশে A, O, Asia-1 সেরোটাইপগুলো সনাক্ত করা হয়েছে। শ্বাসনালীর মাধ্যমে ক্ষুরারোগ ভাইরাসের সংক্রমণ হয়ে থাকে। এই ভাইরাস লালা, প্রস্রাব, গোবর, দুধ, ত্বক, ফোস্কা মধ্যস্থ তরলের মাধ্যমে নির্গত হয়। ভাইরাসটি খাবার, শ্বাস নেওয়া এবং সংস্পর্শের মাধ্যমে অসুস্থ প্রাণী থেকে সুস্থ প্রাণীতে ছড়াতে পারে। ক্ষুরারোগের ভাইরাসের ইনকিউবেশন সময়কাল ২-৭ দিন। প্রথমে জ্বর (১০৪° ১০৭° ফা.)-এর সাথে অবসাদ্গ্রস্থতা এবং ক্ষুধা মন্দা দেখা দেয়, তারপরে মুখে ঘা দেখা যায় যা তীব্র বেদনাদায়ক। এটি জিহবা, ঠোঁট, দাঁতের মাড়ি, গলবিল, তালু, মুখ, ওলানের বাট এবং পায়ে ফোস্কা সৃষ্টি করে। প্রচুর পরিমাণে লালা নিঃসরণ হয় (লালা লম্বা এবং দড়ির মত ঝুলে থাকে), মুখে ও পায়ে ঘা হয়, দুধ উৎপাদন এবং শরীরের ওজন কমে যায় এবং অনেক সময় সেকেন্ডারি ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ রোগটিকে জটিল করে তুলতে পারে। বাছুরের ক্ষেত্রে এই রোগটি আরও বেশি মারাত্মক কারণ কোনো লক্ষণ দেখার আগেই বাছুর মারা যেতে পারে। রোগের ইতিহাস এবং উপসর্গের ভিত্তিতে ক্ষুরারোগ নির্ণয় করা যায়।

এই রোগের জন্য কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই, তবে ভালো যত্নসহ লক্ষণীয় কিছু চিকিৎসা দিলে ভালো ফল পাওয়া যায়। আক্রান্ত পশুকে আলাদাভাবে পরিষ্কার ও শুকনো জায়গায় রাখতে হবে। জ্বর ও ব্যথা কমাতে প্যারাসিটামল বা টলফামিনিক অ্যাসিড গ্রুপের ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে। জিহবা এবং পায়ের ক্ষত ২% অ্যালাম বা ০.০১% পটাসিয়াম পারম্যাঙ্গানেট দিয়ে ধুতে হবে। এছাড়াও, সেকেন্ডারি ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ প্রতিরোধে এফএমডিকিউর, ব্রড-স্পেকট্রাম অ্যান্টিবায়োটিক (সালফাডিমিডিন, স্ট্রেপ্টো-পেনিসিলিন) এবং ১% আইভারমেকটিন প্রয়োগ করা যেতে পারে। ক্ষুরা রোগের প্রচলিত সেরোটাইপগুলির বিরুদ্ধে বছরে দুইবার প্রাণীদের পলিভ্যালেন্ট নিষ্ক্রিয় টিকার মাধ্যমে রোগটি নিয়ন্ত্রণ করা যায়। আমদানি করা বা নতুন কেনা পশুর জন্য কঠোর কোয়ারেন্টাইন ব্যবস্থা অনুসরণ করে এই রোগ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। আক্রান্ত এলাকায় চারপাশে মনোভ্যালেন্ট ভ্যাকসিন দ্বারা রিং ভ্যাকসিনেশন এবং বর্ডার এলাকায় নিয়মিত টিকা প্রদান এই রোগের নিয়ন্ত্রণের কার্যকর ব্যবস্থা হতে পারে। [এম আনোয়ার হোসেন]