ক্রীড়া সংস্থা

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ১৯:৫৪, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)

ক্রীড়া সংস্থা  বলতে সেইসব সংস্থাকে বোঝায় যেগুলি নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে ক্রীড়া পরিচালনাসহ ক্রীড়াসম্পর্কিত পরিকল্পনা, আয়োজন ও উন্নয়নের দায়িত্ব পালন করে। জাতীয় অলিম্পিক কমিটি, জাতীয় ক্রীড়া ফেডারেশন এবং আঞ্চলিক ক্রীড়া সংগঠনগুলোকে ক্রীড়া সংস্থা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এগুলি ছাড়া কিছু ক্রীড়া ক্লাব ও সামাজিক সংগঠন ক্রীড়া সংস্থা রূপে কাজ করে।

ক্রীড়া সংস্থাসমূহের প্রধান কাজ হলো খেলাধুলাকে সর্বস্তরের জনগণের সাথে সম্পৃক্ত করা। এইগুলি যুবসমাজকে সঠিক দিক নির্দেশনা দিয়ে অসামাজিক কাজ থেকে দূরে রাখার ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করে থাকে। ক্রীড়া সংস্থাসমূহ ক্রীড়া দল গঠনে খেলোয়াড় সংগ্রহ, ক্রীড়া প্রশিক্ষণ শিবির আয়োজন, প্রশিক্ষক নিয়োগ ও আর্থিক পৃষ্ঠপোষক খুঁজে বের করে। ক্রীড়া সংস্থাসমূহকে দুটি শ্রেণিতে বিভক্ত করা যায় সরকারি ক্রীড়া সংস্থা ও বেসরকারি ক্রীড়া সংস্থা। সরকার ক্রীড়া সংস্থার মাধ্যমে নিজস্ব কার্যক্রমের অংশ হিসেবে খেলাখুলা নিয়ন্ত্রিত ও সংগঠিত করে। বাংলাদেশে সরকারি ক্রীড়া সংস্থা হিসেবে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ, ক্রীড়া পরিদপ্তর এবং বিকেএসপি যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অধীনে কাজ করে  যাচ্ছে। এই সংগঠনগুলো বাংলাদেশে ক্রীড়া কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য বার্ষিক পরিকল্পনা অনুসরণ করে। মানুষের বিশুদ্ধ বিনোদনের জন্য খেলাধুলা সংগঠনে দেশে একাধিক বেসরকারি ক্রীড়া ক্লাব স্থাপিত হয়েছে। দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রতিষ্ঠিত বেসরকারি ক্লাবসমূহ সম্ভাবনাময় খেলোয়াড় তৈরিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। এই ক্রীড়া ক্লাবগুলোর প্রচেষ্টায় সম্ভাবনাময় খেলোয়াড়গণ দেশের নাম ও খ্যাতি অর্জনে বিদেশি দলের সঙ্গে খেলাধুলায় অংশগ্রহণ করছে।

বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে সর্বোচ্চ ক্রীড়া সংস্থা হলো জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (National Sports Council)। এটি একটি স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা হিসেবে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অধীনে সারাদেশে ক্রীড়া উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের নিবন্ধনকৃত জাতীয় ক্রীড়া ফেডারেশন এবং আঞ্চলিক তথা বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা ক্রীড়া সংস্থাসমূহ সারাদেশে ক্রীড়া উন্নয়নে কাজ করে। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ১৯৭৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি একটি নির্বাহী কমিটির মাধ্যমে পরিচালিত হয়। এই নির্বাহী কমিটি চেয়ারম্যান, ভাইস-চেয়ারম্যান, ট্রেজারার, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের একজন প্রতিনিধি, সকল জাতীয় ক্রীড়া ফেডারেশন/এ্যাসোসিয়েশনের একজন করে প্রতিনিধি, সেনা ক্রীড়া বোর্ড বা আন্তঃবাহিনী ক্রীড়া বোর্ডের একজন প্রতিনিধি, আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় ক্রীড়া বোর্ডের একজন প্রতিনিধি এবং সরকার কর্তৃক মনোনীত দুইজন বিশিষ্ট ক্রীড়াবিদ নিয়ে গঠিত। পরিষদের চেয়ারম্যান এবং সচিব নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান ও সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

নির্বাহী কমিটি ক্রীড়া সংশ্লিষ্ঠ সকল বিষয়ে সর্বোচ্চ যোগ্যতার ভিত্তিতে দায়িত্ব পালন করে। নির্বাহী কমিটি সব ধরনের ব্যয় নির্বাহ করে; সরকারি নিয়ম অনুযায়ী পূর্বানুমোদন সাপেক্ষে পরিষদে লোকবল নিয়োগ করে; প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, স্টেডিয়াম, জিমনেসিয়াম ও খেলার মাঠের সুযোগ সৃষ্টি করে; প্রশিক্ষণ ও খেলাধুলার সুবিধা নিশ্চিত করে; প্রশিক্ষক, ক্রীড়া বিচারক ও সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের সহযোগিতা লাভের চেষ্টা করে; জাতীয় এবং স্থানীয় ক্রীড়া সংস্থার জন্য অর্থ সংস্থান এবং আর্থিক ব্যয়ের রিপোর্ট পরীক্ষা ও পরিবীক্ষণ করে; বিদেশে ক্রীড়াদল কর্মকর্তা ও ক্রীড়াদল সদস্যের মনোনয়ন অনুমোদনে সহযোগিতা করে; জাতীয় ক্রীড়া সংস্থাসমূহের কাজে সহযোগিতা এবং ক্রীড়া উন্নয়নের স্বার্থে প্রয়োজনীয় নিদের্শনা প্রদান করে; আন্তর্জাতিক ক্রীড়া সংস্থার সাথে জাতীয় ফেডারেশন/এ্যাসোসিয়েশনের নিবন্ধন বিবেচনা ও অনুমোদনের জন্য কাজ করে এবং পরিষদের যাবতীয় সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করে।

জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের নিবন্ধনকৃত জাতীয় ফেডারেশন/এ্যাসোসিয়েশনগুলি হলো বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন, বাংলাদেশ ভলিবল ফেডারেশন, বাংলাদেশ হকি ফেডারেশন, বাংলাদেশ ভারোত্তোলন ফেডারেশন, বাংলাদেশ অ্যামেচার বক্সিং ফেডারেশন, বাংলাদেশ কারাতে ফেডারেশন, বাংলাদেশ ব্যাডমিন্টন ফেডারেশন, বাংলাদেশ কুস্তি ফেডারেশন, বাংলাদেশ শরীর গঠন ফেডারেশন, বাংলাদেশ স্কোয়াশ র‌্যাকেট ফেডারেশন, বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশন, বাংলাদেশ মহিলা ক্রীড়া এ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ সাইক্লিং ফেডারেশন, বাংলাদেশ হ্যান্ডবল ফেডারেশন, বাংলাদেশ বাস্কেটবল ফেডারেশন, বাংলাদেশ বিলিয়ার্ড ও স্নুকার ফেডারেশন, বাংলাদেশ বধির ফেডারেশন, বাংলাদেশ রোলার স্কেটিং ফেডারেশন, বাংলাদেশ অ্যামেচার অ্যাথলেটিকস ফেডারেশন, বাংলাদেশ তায়কোয়াদো ফেডারেশন, বাংলাদেশ জিমনাস্টিকস ফেডারেশন, বাংলাদেশ খো-খো ফেডারেশন, বাংলাদেশ জুডো ফেডারেশন, বাংলাদেশ ক্যারম ফেডারেশন, বাংলাদেশ টেনিস ফেডারেশন, বাংলাদেশ গলফ্ ফেডারেশন, বাংলাদেশ টেবিল টেনিস ফেডারেশন, বাংলাদেশ বাশাআপ এ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ শুটিং ফেডারেশন, এ্যাসোসিয়েশন অব স্পোর্টস মেডিসিন, বাংলাদেশ রোইং ফেডারেশন, বাংলাদেশ কাবাডি ফেডারেশন, বাংলাদেশ সাঁতার ফেডারেশন, বাংলাদেশ আরচারি ফেডারেশন এবং বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের নিবন্ধনকৃত স্থানীয় ক্রীড়া সংস্থাগুলি সাধ্যমতো কাজ করে যাচ্ছে। এগুলি হলো বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থা, জেলা ক্রীড়া সংস্থা এবং বিভাগীয় ও জেলা মহিলা ক্রীড়া সংস্থা। জেলা ক্রীড়া সংস্থার অধীন অসংখ্য ক্রীড়া ক্লাব বিভিন্ন ধরনের ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করে থাকে। ক্লাবগুলি খেলোয়াড় তৈরির প্রধান উৎস। ক্লাবগুলি অগ্রণী ক্রীড়া সংগঠন হিসেবে দলগঠন এবং বিভাগ ও জেলা খেলাধুলায় অংশ গ্রহণ করে। এছাড়া জাতীয় ফেডারেশনগুলির অনুমোদিত সংস্থা হিসাবে ক্লাবগুলি ফেডারেশনগুলির বিশেষ বিশেষ খেলায় নিয়মিত অংশ গ্রহণ করে।

বাংলাদেশ মহিলা ক্রীড়া সংস্থা ঢাকার ধানমন্ডিতে অবস্থিত। সকল বিভাগীয় ও জেলা মহিলা ক্রীড়া সংস্থা এই সংস্থার অধীনে অনুমোদিত সংস্থা হিসাবে কাজ করে। বাংলাদেশ মহিলা ক্রীড়া সংস্থা বার্ষিক ক্রীড়া পঞ্জিকা প্রকাশের মাধ্যমে নিজেদের তত্ত্বাবধানে নিজস্ব মাঠে খেলাধুলা ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচি আয়োজন করে। সভাপতি, সহ-সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, কোষাধ্যক্ষ এবং সদস্যবৃন্দ নিয়ে বিভাগ ও জেলা ক্রীড়া সংস্থা এবং জেলা মহিলা ক্রীড়া সংস্থা গঠিত।

স্ব স্ব স্পোর্টস কন্ট্রোল বোর্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বাংলাদেশ নৌ-বাহিনী,বাংলাদেশ বিমান বাহিনী, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ, বাংলাদেশ পুলিশ, বাংলাদেশ আনসার-ভিডিপি, বাংলাদেশ রেলওয়ে, সকল শিক্ষা বোর্ড, সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, সকল প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, বিজেএমসি, বিটিএসসি, তিতাস গ্যাস লিমিটেড, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড দেশের ক্রীড়া উন্নয়নে অবদান রেখে আসছে।

দেশের ক্রীড়া উন্নয়নে বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা বিকেএসপি বিশেষ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। বিকেএসপি দেশের একমাত্র ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যা যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি স্বায়ত্ত্বশাসিত সংস্থা হিসেবে কাজ করে। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রীর নেতৃত্বে বোর্ড অব গভার্ন্যান্স-এর মাধ্যমে এই প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় কাজকর্ম পরিচালিত হয়। প্রতিষ্ঠানের ৪টি শাখা রয়েছে। শাখাগুলি হলো কোচিং উইং, প্রশাসনিক উইং, ক্রীড়া বিজ্ঞান উইং এবং একাডেমিক উইং। প্রতিষ্ঠানের মহাপরিচালক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসাবে সকল প্রকার দায়িত্ব পালন করেন। এই প্রতিষ্ঠানের প্রথম আত্মপ্রকাশ ঘটে ১৯৭৪ সালে। তখন এর নাম ছিল বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব স্পোর্টস বা বি আই এস। ১৯৭৭ সালে এটি যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অধীনে ন্যাস্ত হয়। পরবর্তীকালে বিআইএস-এর নামকরণ করা হয় বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা বিকেএসপি। ১৯৮৩ সালে সরকারি ঘোষণার মাধ্যমে বিকেএসপি যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়-এর অধীনে স্বায়ত্ত্বশাসিত ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান-এর মর্যাদা লাভ করে। ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯৮৬ সালের ১৪ এপ্রিল কার্যক্রম শুরু করে। ক্রীড়া শিক্ষার পাশাপাশি সাধারণ শিক্ষায় চতুর্থ শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত এখানে পাঠদান করা হয়। এখানে ৫০০ জন ছাত্রছাত্রী আছে। ঢাকা থেকে প্রায় ৪৫ কিলোমিটার উত্তরে সাভার উপজেলার জিরানী নামক স্থানে ১০৪ একর জমির উপর এই ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি অবস্থিত। বিকেএসপি একটি আবাসিক ক্রীড়াশিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বিকেএসপির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো ছেলে ও মেয়ে ক্রীড়া প্রতিভা অন্বেষণ করে ক্রীড়া ও সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত করে দেশের জন্য উপযোগী খেলোয়াড় তৈরি করা; উচ্চ পর্যায়ের ক্রীড়া প্রশিক্ষক, রেফারি ও আম্পায়ার তৈরি করার জন্য প্রশিক্ষণ কর্মসূচি আয়োজন করা; জাতীয় পর্যায়ের ক্রীড়া দলকে সহযোগিতা করা; প্রশিক্ষক, রেফারি এবং আম্পায়ারদের জন্য সার্টিফিকেট কোর্স চালু করা; খেলাধুলাসম্পর্কিত তথ্যভান্ডার হিসেবে কাজ করা এবং খেলাধুলাসম্পর্কিত বই, ম্যাগাজিন ও সাপ্তাহিকী প্রকাশের ব্যবস্থা করা। বর্তমানে বিকেএসপিতে ১০টি ক্রীড়া ও ৬টি ক্রীড়াসহায়ক কোর্স চালু আছে। ক্রীড়াকোর্স হলো অ্যাথলেটিকস্, জিমনাসটিকস্, বাস্কেটবল, হকি, বক্সিং, সাঁতার, ক্রিকেট, শু্যটিং, ফুটবল এবং টেনিস। ক্রীড়াসহায়ক কোর্স হলো স্পোর্টস মেডিসিন, স্পোর্টস বাইও মেকানিকস, এক্সারসাইজ সাইকোলজি, জিটিএমটি, স্পোর্টস ফিজিওলজি এবং নিউট্রিশন। ১৯৯২ সালে ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা শিক্ষাসমাপন করে বের হয়। প্রতিষ্ঠানে ৩২ জন দক্ষ ক্রীড়া শিক্ষক শিক্ষাদান করছেন। পাশাপাশি ৩৫ জন শিক্ষক শিক্ষার্থীদের সাধারণ শিক্ষা প্রদান করছেন।

ক্রীড়া পরিদপ্তর যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে। জেলা ক্রীড়া অফিসারগণ নির্দিষ্ট জেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দাযিত্ব পালন করেন। দেশের সকল শারীরিক শিক্ষা কলেজ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিবন্ধনকৃত এবং ক্রীড়া পরিদপ্তরের অধীনে কাজ করে। শারীরিক শিক্ষা কলেজ নিজস্ব কারিকুলাম অনুযায়ী নির্দিষ্ট কোর্স চালিয়ে যাচ্ছে। এই প্রতিষ্ঠান দুই ধরনের ১০ মাসব্যাপী কোর্স চালিয়ে থাকে। এর মধ্যে ব্যাচেলর অব ফিজিক্যাল এ্যাডুকেশন প্রশিক্ষণ কোর্সটি অত্যন্ত জনপ্রিয়। এই কোর্স সফলভাবে সম্পন্ন করার পর প্রার্থীগণ যেকোনো স্কুল বা কলেজে শরীরচর্চা শিক্ষক হিসেবে চাকুরি পাওয়ার জন্য আবেদন করতে পারে। শরীরচর্চা শিক্ষকগণ তৃণমুল পর্যায়ের ক্রীড়া প্রশিক্ষক হিসেবে পরিচিত।

সমগ্র দেশে বেশ কিছু ছোট বড় ক্রীড়া ক্লাব বা সামাজিক সংস্থা রয়েছে যেগুলি ক্রীড়াক্ষেত্রে সক্রিয় অংশগ্রহণ করছে এবং নতুন নতুন খেলোয়াড় তৈরিতে ভূমিকা রাখছে। এইসব ক্লাব বা সামাজিক সংস্থা যুব সমাজকে অসামাজিক কর্মকান্ড থেকে সরে এসে ক্রীড়াচর্চায় মনোনিবেশ করার জন্য উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করে চলেছে। সারাবিশ্বে খেলাধুলায় অংশগ্রহণকারী অনেক পরিচিত ক্লাব নিজের দেশ তথা বিশ্বের ক্রীড়ামোদী জনগণের জন্য প্রচুর অর্থ ব্যয়ে দলগঠন এবং খেলা আয়োজনের ব্যবস্থা করে থাকে। দেশের ও বিদেশের ক্লাবগুলি হলো আবাহনী লিমিটেড, মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব, ব্রাদার্স ইউনিয়ন ক্লাব, ওয়ারী ক্লাব, ওয়ান্ডার্স ক্লাব, আরামবাগ স্পোর্টিং, শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র, উষা ক্রীড়া চক্র, ইস্ট এন্ড ক্লাব, রহমতগঞ্জ ক্রীড়া চক্র, ভিক্টোরিয়া স্পোটিং ক্লাব, কলাবাগান ক্রীড়া চক্র, বায়ার্ন মিউনিখ (জার্মানী), বার্সেলোনা ক্লাব (স্পেন), ম্যানচেস্টার ই্উনাইটেড (ইংল্যান্ড), রিয়াল মাদ্রিদ (স্পেন), ভ্যালেন্সিয়া (স্পেন), জুভেন্টাস (ইংল্যান্ড) ও এসি মিলান (ইতালী)।

বিশ্ব জুড়ে বেশকিছু আন্তর্জাতিক ক্রীড়া সংস্থা তথা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ক্রীড়া ফেডারেশন, আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি, কমনওয়েলথ্ ক্রীড়া ফেডারেশন ও এশিয়ান স্পোর্টস কনফেডারেশন দলগঠন, প্রশিক্ষণ ও খেলাধুলার আয়োজন করে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক ক্রীড়া ফেডারেশনগুলি হলো আন্তর্জাতিক ফুটবল এ্যাসোসিয়েশন (ফিফা), আন্তর্জাতিক একুয়াটিকস ফেডারেশন (সাঁতার, ডাইভিং, সিঙ্ক্রোনাইজড সুইমিং, ওয়াটার এন্ড ওয়াটার সুইমিং, ওয়াটার পলো), আন্তর্জাতিক আরচারি ফেডারেশন (এফআইটিএ), বিশ্ব ব্যাডমিন্টন ফেডারেশন (বিডব্লিউএফ), আন্তর্জাতিক অ্যাথলেটিকস্ ফেডারেশন (আইএএএফ), আন্তর্জাতিক বাস্কেটবল ফেডারেশন (এফআইবিএ), আন্তর্জাতিক বক্সিং এ্যাসোসিয়েশন (এআইবিএ), আন্তর্জাতিক ক্যানোই ফেডারেশন (আইসিএফ), আন্তর্জাতিক সাইক্লিং ইউনিয়ন (ইউসিআই/আইসিইউ), আন্তর্জাতিক ইক্যুয়েসট্রি ফেডারেশন (এফইআই), আন্তর্জাতিক ডি’ এসক্রাইম ফেডারেশন (এফআইই), আন্তর্জাতিক জিমনাস্টিকস্ ফেডারেশন (এফআইজি/আইএফজি), আন্তর্জাতিক হ্যান্ডবল ফেডারেশন (আইএইচএফ), আন্তর্জাতিক হকি ফেডারেশন (এফআইএইচ), আন্তর্জাতিক জুডো ফেডারেশন (আইজিএফ), ইউনিয়ন আন্তর্জাতিক পেন্টাথোলোন ডি’ মডার্ন (ইউআইপিএম), ফেডারেশন ইন্টারন্যাশনাল ডেস সোসাইটি ডি’ এভিরন (এফআইএসএ), আন্তর্জাতিক সেইলিং ফেডারেশন (আইএসএফ), আন্তর্জাতিক শুটিং ফেডারেশন (আইএসএসএফ), আন্তর্জাতিক টেবিল টেনিস ফেডারেশন (আইটিটিএফ) এবং ওয়ার্ল্ড তায়কোয়ানডো ফেডারেশন (ডব্লিউটিএফ)। এই সকল আন্তর্জাতিক ক্রীড়া ফেডারেশন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, খেলোয়াড়, রেফারি, আম্পায়ার ও বিচারকদের সহযোগিতা লাভসহ খেলাধুলার আয়োজন করে থাকে। আন্তর্জাতিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার সময়সূচিসহ খেলার জায়গা নির্বাচন, বিভিন্ন কমিটি গঠন, আর্থিক পৃষ্ঠপোষক সংগ্রহ, ক্রীড়াবিদদের থাকার ব্যবস্থাকরণ, যানবাহনের ব্যবস্থাকরণ, সেচ্ছাসেবক নিয়োগ এবং আইনশৃংখলা বাহিনী নিযুক্ত করে থাকে। এছাড়া সকল আন্তর্জাতিক ক্রীড়া ফেডারেশন সারাবছর ধরে নানা ক্রীড়া কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। আন্তর্জাতিক ক্রীড়া ফেডারিশনগুলি অফিসিয়াল টুর্নামেন্ট যেমন বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ, বিশ্বকাপ টুর্নামেন্ট, ওয়ার্ল্ড লীগ টুর্নামেন্ট ও ওয়ার্ল্ড গ্রান্ড প্রিক্স টুর্নামেন্ট-এর আয়োজন করে; কোচ, খেলোয়াড় ও প্রশিক্ষকদের জন্য প্রশিক্ষণ কোর্স ও সেমিনারের আয়োজন করে; ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, ক্রীড়া কৌশল এবং বার্ষিক সম্মেলন, সভা এবং খেলাধুলার ইতিহাস সম্পর্কে বার্ষিক, অর্ধ-বার্ষিক, ষান্মাসিক, মাসিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশ করে; বিশ্বের সকল নিবন্ধনকৃত জাতীয় ফেডারেশনের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে; বার্ষিক সম্মেলন ও সভার আয়োজন করে এবং খেলোয়াড়, প্রশিক্ষক, সংগঠক ও পৃষ্ঠপোষক ও ক্রীড়া ব্যক্তিত্বদের পুরস্কার/সম্মাননা প্রদান করে। এছাড়া আন্তর্জাতিক ক্রীড়া ফেডারেশনগুলি ক্রীড়ানুষ্ঠানের সময় ব্যবসায়ী সম্প্রদায়কে তাদের উৎপাদিত সামগ্রী প্রচারের সুযোগ প্রদানের মাধ্যমে আ©র্র্থকভাবে লাভবান হওয়ার প্রয়াস চালায়।

দেশের স্পোর্টস ক্লাবগুলি খেলাধুলার উন্নতির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। কলকাতা মোহামেডান ক্লাবের শাখা হিসেবে ঢাকা মোহামেডান ক্লাবের প্রতিষ্ঠা ১৯৩৮ সালে। এপর্যন্ত মোহামেডান ক্লাব বহুবার ফুটবল লীগ চ্যাম্পিয়নশিপ অর্জন করে এবং রানার্সআপ হয়। এছাড়া স্বাধীনতা দিবস ফুটবল টুর্নামেন্ট, ঢাকা মেট্রোপলিটন ফুটবল লীগ, ফেডারেশন ক্লাব ফুটবল, পশ্চিমবঙ্গের দুর্গাপুরে অনুষ্ঠিত আশিষ-জববার শিল্ড টুর্নামেন্ট, ঢাকায় অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক ফুটবল টুর্নামেন্ট, ঢাকা ক্রিকেট লীগ, দামাল সামার ক্রিকেট লীগ, জাতীয় ভলিবল টুর্নামেন্ট এবং জাতীয় ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন ও রানার্সআপ হয়। ওয়ারী ক্লাব ১৮৯৮ সালে ঢাকার ওয়ারীর রায় বাহাদুর সুরেন্দ্রনাথ রায়ের উদ্যোগে স্থাপিত হয়। ওয়ারী ১৯১৭-তে প্রথম এক প্রীতি ফুটবল ম্যাচে তৎকালীন প্রথম বিভাগ ফুটবল লীগের চ্যাম্পিয়ন দল লিঙ্কোলিন ক্লাবকে হারিয়ে দেয়। অন্যান্য খেলাধুলাতেও ক্লাবটির কৃতিত্ব রয়েছে। ক্লাবটি কয়েকবার ঢাকার ক্রিকেট লীগ চ্যাম্পিয়ন হয়। ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ক্লাব  রানী ভিক্টোরিয়ার নামে ১৯০৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ক্লাবটি ঢাকার প্রথম বিভাগ ফুটবল লীগ চ্যাম্পিয়ন হয় ও রানার্সআপ হয়। এছাড়া ঢাকার ৪টি প্রধান ফুটবল টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয় এবং আগাখান গোল্ড কাপ টুর্নামেন্টে দক্ষিণ কোরিয়াকে পরাজিত করে। বর্তমানে ক্লাবটি ঢাকার প্রথম বিভাগ ফুটবল লীগে মধ্যম মানের দল হিসেবে টিকে আছে। অন্যান্য খেলায় যেমন ব্যাডমিন্টন, বক্সিং, রেসলিং ও ভারোত্তোলনে ক্লাবটি কৃতিত্ব প্রদর্শন করছে। আজাদ স্পোর্টিং ক্লাব ১৯৪৯ সালে ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৫৮-এ ঢাকার প্রথম বিভাগ ফুটবল লীগ চ্যাম্পিয়ন হয়। অ্যাথলেটিক্স, সাইকেল চালনা, বাস্কেটবল, ভলিবল, হকি, ক্রিকেট ও ব্যাডমিন্টন খেলাও ক্লাবটির কৃতিত্ব রয়েছে। আরামবাগ ক্লাব  ১৯৫৮ সালে ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত হয়। ৪র্থ এবং ৫ম শীতল মহিলা হ্যান্ডবলে এ ক্লাব চ্যাম্পিয়ন হয়। নেপালে আলফা কাপ চ্যাম্পিয়ন, সিকিমে অনুষ্ঠিত অষ্টম চিফ মিনিস্টার গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টে রানার্সআপ এবং ভারতের নাগজী গোল্ডকাপ টুর্নামেন্টে রানার্সআপ হয়। এছাড়া আরামবাগ ভারতের আগরতলায় স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী ফুটবল টুর্নামেন্ট কাপে অংশগ্রহণ করে এবং বাংলাদেশে ফেডারেশন কাপ টুর্নামেন্টে রানার্সআপ হয়। ব্রাদার্স ইউনিয়ন ক্লাব  ১৯৬৯ সালে ঢাকার গোপিবাগে প্রতিষ্ঠিত হয়। ক্লাবটি প্রথম তৃতীয় বিভাগ ফুটবল লীগে চ্যাম্পিয়ন হয়। এটি বেশ কয়েক বছর দ্বিতীয় বিভাগে খেলে এবং চ্যাম্পিয়ন হয়ে প্রথম বিভাগে উন্নীত হয়। ফুটবল ছাড়াও ক্লাবটি ক্রিকেট, দাবা ও হ্যান্ডবল খেলাতেও ভাল করছে। আবাহনী ক্রীড়াচক্র  ১৯৭২ সালে তৎকালীন ইকবাল স্পোর্টিং ক্লাবের নাম পরিবর্তন করে ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত হয়। ক্লাবটি বহুবার জাতীয় ফুটবল লীগের ফাইনাল খেলায় অংশগ্রহণ করে, ফুটবলে লীগ চ্যাম্পিয়ন হয়, লীগ রানার্সআপ হয় এবং ফেডারেশন কাপ চ্যাম্পিয়ন ও রানার্সআপ হয়। এছাড়া শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিত এশিয়া ক্লাব কাপ ফুটবল টুর্নামেন্টে রানার্সআপ এবং ভারতে অনুষ্ঠিত নাগজী ট্রফি ফুটবল টুর্নামেন্টে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়। বাংলাদেশে পেশাদার লীগ (বি লীগ) চালু হলে আবাহনী চ্যাম্পিয়ন হয়। দ্বিতীয় বি লীগেও চ্যাম্পিয়ন হয় আবাহনী। আবাহনী বহুবার ঢাকা প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লীগে চ্যাম্পিয়ন এবং রানার্সআপ হয় ও প্রিমিয়ার ক্রিকেট লীগ চ্যাম্পিয়ন হয়। এ ছাড়া কয়েকবার দামাল সামার ক্রিকেট টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন এবং রানার্সআপ, শহীদ স্মৃতি ক্রিকেটে চ্যাম্পিয়ন, স্টার সামার ক্রিকেট চ্যাম্পিয়ন ও রানার্সআপ এবং আলফা কাপ ক্রিকেটে চ্যাম্পিয়ন ও রানার্সআপ হয়। ক্লাবটি বহুবার প্রথম বিভাগ হকি লীগে চ্যাম্পিয়ন ও রানার আপ হয়। এ ছাড়া শহীদ স্মৃতি হকি টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন এবং রানার্সআপ হয়, স্বাধীনতা দিবস হকিতে চ্যাম্পিয়ন এবং রানার্সআপ হয়। ১৯৮৯ সালে আবাহনী ক্রীড়াচক্রকে লিমিটেড কোম্পানিতে পরিণত করা হয়।

বিশ্বব্যাপী ক্রীড়ায় সাফল্য এনে নিজের পরিচিতি তুলে ধরার জন্য বাংলাদেশ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সাউথ এশিয়ান গেমসসহ আন্তর্জাতিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় নিয়মিত অংশগ্রহণের লক্ষ্য নিয়ে ক্রীড়া প্রশিক্ষণ ও ক্রীড়া ব্যবস্থাপনায় সরকারি উদ্যোগ অব্যাহত রয়েছে।  [মো সফিক আনোয়ার]