ক্রিস্টমাস
ক্রিস্টমাস খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব। প্রতিবছর ২৫ ডিসেম্বর রোমান ক্যাথলিক ও প্রটেস্টান্ট চার্চের অনুসারীরা যিশুখ্রিস্টের জন্মদিন উপলক্ষে এ উৎসব পালন করে। খ্রিস্টিয় ২০০ সাল থেকে এ উৎসব পালন শুরু হয়। ৩৫৪ সালে দিনটিকে যিশুর জন্মদিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং এ ঘোষণা ৪৪০ সালে পোপ স্বীকার করেন। মূলত পৌত্তলিক রোমানদের উৎসবের বিপরীতে ক্রিস্টমাস পালন শুরু হয়।
ক্রিস্টমাস যদিও ধর্মীয় বিশ্বাস থেকে উদ্ভূত, কিন্তু বর্তমানে এটি একটি ধর্মনিরপেক্ষ উৎসবে পরিণত হয়েছে। এ উপলক্ষে লোকেরা আনন্দ-ফুর্তি করে এবং একে অপরকে শুভেচ্ছা কার্ড ও উপহার পাঠায়। এসব উপহার যিনি বহন করে নিয়ে আসেন তাঁকে নানা নামে ডাকা হয়, যেমন Father Christmas, Santa Claus, Saint Nicholas ইত্যাদি। ক্রিস্টমাস কার্ডের প্রচলন শুরু হয় উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে। ক্রিস্টমাস বৃক্ষ-সাধারণত মোচাকৃতির পাইন বা ফার বৃক্ষ-ছোট ছোট বৈদ্যুতিক বাল্ব এবং উপহার সামগ্রী দিয়ে সাজানো হয়। কখনো কখনো গাছের ওপরে দেওয়া হয় একজন দেবদূত ও একটি তারার প্রতিকৃতি। ক্যাথলিকদের ক্রিস্টমাস পালনের অংশ হিসেবে তারা যিশুর শিশুকালের দৃশ্য দেখায়, যেমন গোয়ালঘরে পশুকে খড় খাওয়ানোর গামলায় শিশু যিশু এবং পাশে তাঁর মা মেরী ও যোশেফ দন্ডায়মান।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইংল্যান্ডে সাধারণত ক্রিস্টমাসের আগের দিন সন্ধ্যায় শিশুরা মোজা ঝুলিয়ে রাখে যাতে সান্তা ক্লজ এগুলি উপহার দিয়ে ভরে দিতে পারে। ক্রিস্টমাস গাছের তলায়ও উপহার রেখে দেওয়া হয় যা ক্রিস্টমাসের দিন সকালে খোলা হয়। এদিন বিশেষ খাবার তৈরি করা হয়, যেমন রোস্ট টার্কি, শূকরের মাংস, হাঁসের মাংস, পুডিং, ক্রিস্টমাস কেক ইত্যাদি। শিশুরা যিশুর প্রশংসা গেয়ে বাড়ি বাড়ি ঘুরে বেড়ায়।
স্ক্যান্ডিনেভিয়া অঞ্চলে ক্রিস্টমাস উৎসব একটু অন্যরকমভাবে পালন করা হয়। সেখানে যিনি উপহার নিয়ে আসেন তাকে বলা হয় Tomtar। ওইদিন বিশেষ খাদ্যের মধ্যে থাকে ক্রিমসসসহ কড মাছ এবং সেদ্ধ আলু। জার্মানি, হল্যান্ড ও বেলজিয়ামে ৬ ডিসেম্বর শিশুরা উপহার পায়। ওই দিন সেন্ট নিকোলাস অথবা Sinter Klaas-এর নামে একটি বিশেষ ভোজ হয়। হল্যান্ডে এ দিনের বিশেষ খাবারের মধ্যে থাকে রাজহাঁসের মাংস এবং তার ভেতর থাকে প্রুন ও আপেল।
ফ্রান্স, মেক্সিকো, আর্জেন্টিনা এবং ব্রাজিলে শিশুরা উপহার পেয়ে থাকে তাদের জুতার ভেতর থেকে। এ জুতাগুলি তারা আগের দিন সন্ধ্যায় ঘরের দরজার বাইরে রেখে দেয়। ফ্রান্সে যিনি এসব উপহার নিয়ে আসেন তাকে বলা হয় Bonhomme Noel। এ দিন টার্কি, রাজহাঁস, হাঁস ও গরুর মাংসের রোস্ট বিশেষ খাবার হিসেবে দেওয়া হয়। ইটালিতে উপহার নিয়ে আসেন La Befana। দক্ষিণ ইটালিতে এ দিনের সবচেয়ে প্রিয় খাদ্য হচ্ছে Capitone, যাতে থাকে ভাজা Eel মাছ। সুইজারল্যান্ডে উপহার দেন Saint Lucy এবং Father Christmas। গ্রিসে উপহার আনেন Saint Basil, পোল্যান্ডে Father Frost এবং হাঙ্গেরিতে দেবদূতরা।
বাংলাদেশে ক্রিস্টমাস শুরু হয় ডিসেম্বরের ১ম সপ্তাহ থেকে বিভিন্ন চার্চে ক্রিস্টমাস ক্যারল গানের মধ্য দিয়ে। বাড়িতে বাড়িতেও ক্রিস্টমাস ক্যারল গাওয়া হয় এবং এর মাধ্যমে যে অর্থ সংগৃহীত হয় তা দিয়ে ভোজ এবং আনন্দ-ফুর্তি করা হয়। ক্রিস্টমাসের উৎসব জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত চলে। ক্রিস্টমাসের আগের সন্ধ্যায় বা তারও আগে থেকে উপহার বিনিময় চলে। ক্রিস্টমাসের আগের দিন মধ্যরাত থেকে পরদিন সকাল পর্যন্ত গির্জায় গির্জায় বিশেষ উপাসনা করা হয়। নিমন্ত্রিত আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুদের জন্য বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা থাকে। তার মধ্যে থাকে পিঠা, পায়েশ, কেক, শূকরের মাংস, মুরগির মাংস, হাঁসের মাংস ও পোলাও বা বিরিয়ানি। এ উপলক্ষে মদও পান করা হয়। খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ এ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করে থাকেন। ক্রিস্টমাস উপলক্ষে টেলিভিশনে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করা হয়। [সেলমন এইচ. ডিও]