ক্যালকাটা গেজেট
ক্যালকাটা গেজেট সরকারের বিজ্ঞাপন প্রচারের সংবাদপত্র। ক্যালকাটা গেজেট ১৭৮৪ সালের ৪ মার্চ প্রথম প্রকাশিত হয়। এটি কোনো সরকারি প্রকাশনা ছিল না। প্রাচ্য পন্ডিত এবং ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অফিসার ফ্রান্সিস গ্ল্যাডউইন এটির প্রকাশনা শুরু করেন এবং তাঁর হাতেই এর প্রাথমিক ব্যবস্থাপনা ছিলো। পরবর্তীকালে সরকার যখন ধীরে ধীরে এর ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে, তখন থেকেই এটি সরকারি বিজ্ঞাপন প্রচারের একমাত্র মাধ্যম হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে এসব বিজ্ঞাপনের জন্য মূল্য চাওয়া হতো। কিন্তু পরবর্তী সময়ে সরকার পত্রিকাটি প্রকাশের জন্য কাগজ সরবরাহ করতে সম্মত হলে এবং বিনা ডাক মাশুলে গন্তব্যস্থানে এটিকে পৌঁছানোর সুযোগ দিলে মালিক বিনামূল্যে এসব বিজ্ঞাপন প্রকাশের ব্যবস্থা নেন। অবশ্য এ সুবিধা ১৭৮৭ সালে প্রত্যাহার করা হয়।
১৭৮৭ সালের জানুয়ারি মাসে ফ্রান্সিস গ্ল্যাডউইন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির তিনজন কর্মচারী আর্থার মুইর, হারবার্ট হ্যারিংটন এবং এডমন্ড মরিসের পক্ষে পত্রিকার মালিকানা স্বত্ত্ব ত্যাগ করেন। সরকার বিনা ডাক মাশুলে গন্তব্য স্থলে পত্রিকা পৌঁছানোর সুবিধা প্রত্যাহার করলেও, ক্যালকাটা গেজেট পূর্বের মতোই একচেটিয়াভাবে সরকারি বিজ্ঞাপন ও প্রজ্ঞাপন প্রকাশ অব্যাহত রাখে। এ বিশেষ সুবিধা পত্রিকার ব্যাপক প্রচার নিশ্চিত করে। ফলে পত্রিকায় বিপুল পরিমাণ বেসরকারি বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হতে থাকে এবং অচিরেই পত্রিকাটি প্রায় একটি বিজ্ঞাপনী পত্রিকায় পরিণত হয়।
১৮১৫ সালের জুন মাসে বেঙ্গল মিলিটারি অরফ্যান সোসাইটি কর্তৃক গভর্নমেন্ট গেজেট নামে আরেকটি পত্রিকা প্রকাশের কারণে ক্যালকাটা গেজেট আর দীর্ঘস্থায়ী হয় না। গভর্নমেন্ট গেজেটকেই সকল সরকারি বিজ্ঞাপন ও প্রজ্ঞাপন প্রচারের একমাত্র মাধ্যম করা হয়। অনেক বেসরকারি বিজ্ঞাপন দাতা ক্যালকাটা গেজেট এ বিজ্ঞাপন না দেওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই এর আর্থিক ব্যয় বিপুল পরিমাণে হ্রাস করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। ফলে কর্মচারী ছাঁটাইয়ের কারণে শ্রমিক অসন্তোষ এবং পরিণতিতে শ্রমিক ধর্মঘট দেখা দেয়। এর আর্থিক সমস্যা এমন প্রকটরূপ ধারণ করে যে, ১৮১৮ সালে মালিকগণ ক্যালকাটা মর্নিং পোস্ট-এর মালিক জনৈক হিটলির নিকট পত্রিকাটি বিক্রি করে দেন। অবশ্য হিটলি ১৮১৮ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে জনৈক জেমস সিল্ক বাকিংহাম কর্তৃক প্রকাশিত নতুন সংবাদপত্র ক্যালকাটা জার্নাল-এর পক্ষে তার সকল প্রকাশনা বন্ধ করে দেন। [অভিজিৎ দত্ত]