কোষকলা

কোষকলা (Tissue) ইংরেজি ‘টিস্যু’ শব্দটি ফরাসি শব্দ থেকে এসেছে। বাংলায় টিস্যুকে কলা বা কোষকলা বলা হয়। একই ধরনের কোষের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা কোষকলা দেহে সুনির্দিষ্ট কর্ম সম্পাদন করে থাকে। জীববিজ্ঞানে কোষকলা হলো এমন একটি কোষীয় শ্রেণীবদ্ধ কাঠামো, যা কোষ এবং দেহাঙ্গ (অর্গান)-এর মধ্যবর্তি স্তর হিসেবে কাজ করে। নির্দিষ্ট কলার সমন্বয়ে বিভিন্ন দেহাঙ্গ, যেমন মস্তিষ্ক এবং হৃদপিণ্ড গঠিত হয়, যা দেহে সুনির্দিষ্ট কর্ম সম্পাদন করে। বিভিন্ন দেহাঙ্গ সম্মিলিতভাবে দেহাঙ্গ ব্যবস্থায় যুক্ত হয়ে দেহের সাধারণ কার্যাদি সম্পাদন করে। প্রাণীর ক্ষেত্রে চারটি ভিন্ন ধরণের কলা রয়েছে- কানেক্টিভ বা যোজক, ম্যাসল বা পেশী, নার্ভাস বা স্নায়বিক ও এপিথেলিয়াল বা আবরণী। যোজক কলা কোষ এবং কোষকে ঘিরে রাখা নিরাকার আঠালো পদার্থ দিয়ে তৈরি আঁশবহুল কলা, যা দেহের অন্যান্য কলা বা অঙ্গকে যুক্ত করে রাখে। পেশী কলা এমন বিশেষায়িত কলা যা দ্বারা পেশীর সঙ্কোচন ও প্রসারণ সম্ভব হয়। তিন ধরনের পেশী কলা রয়েছে- স্কেলিটাল বা ঐচ্ছিক পেশী, কার্ডিয়াক বা হৃদপেশী এবং মসৃণ পেশী। স্নায়ু কোষ নিউরন দিয়ে গঠিত স্নায়ুকলা দেহের কেন্দ্রিয় স্নায়ু সংকেত সংবহনে কাজ করে। আবরণী কলাগুলি সারা শরীর জুড়ে রক্তনালীর বাহিরের দিকে এবং সেইসাথে অঙ্গগুলির ভেতরের দেয়ালেআবরণী হিসাবে কাজ করে। উদ্ভিদে তিন ধরণের কলা রয়েছে- ভাস্কুলার, গ্রাউন্ড ও এপিডারমাল। ভাস্কুলার কলার প্রাথমিক উপাদান জাইলেম ও ফ্লোয়েম যা অভ্যন্তরীণ পানি ও পুষ্টি সংবহনে কাজ করে। গ্রাউন্ড কলা সালোক সংশ্লেষণের মাধ্যমে উদ্ভিদের পুষ্টি তৈরি ও তা সঞ্চয় করে। এ ছাড়া কাঠামোগত সুরক্ষায় ভুমিকা রাখে। আবরণী কলা উদ্ভিদ দেহের বহিরাবরণ হিসেবে কাজ করে। এক স্তর বিশিষ্ট এই কলা উদ্ভিদের প্রস্বেদন ও পানির নির্গমন নিয়ন্ত্রন করে। মানুষ ও প্রাণীর কোষকলা বিষয়ক অধ্যয়নকে হিস্টোলজি এবং রোগের ক্ষেত্রে তাকে হিস্টোপ্যাথলজি বলা হয়। উদ্ভিদ কোষকলার ক্ষেত্রে উদ্ভিদ এনাটমি বা শারীর স্থান এবং ফিজিওলজি বা শারীর বিদ্যা উভয়ক্ষেত্রেই তা অধ্যয়ন করা হয়। ইলেক্ট্রন মাইক্রোস্কোপি, ইমিউনোফ্লোরেসেন্স ও হিমায়িত টিস্যু-সেকশনের ব্যবহারের ফলে কোষকলার নিখুঁত ও বিস্তারিত চিত্র পর্যবেক্ষণ সম্ভব। এর ফলে রোগ নির্নয় ও তার পুর্বাভাস প্রদান অধিকতর নির্ভুলভাবে করা সম্ভব হচ্ছে। [এম. আনোয়ার হোসেন]