কুমারখালী উপজেলা
কুমারখালী উপজেলা (কুষ্টিয়া জেলা) আয়তন: ২৫৮.১৮ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৩°৪৪´ থেকে ২৩°৫৮´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°০৯´ থেকে ৮৯°২২´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে পাবনা সদর ও পদ্মা নদী, দক্ষিণে শৈলকূপা উপজেলা, পূর্বে খোকসা উপজেলা, পশ্চিমে কুষ্টিয়া সদর উপজেলা।
জনসংখ্যা ৩২৮৪৫৭; পুরুষ ১৬৩৪৬১, মহিলা ১৬৪৯৯৬। মুসলিম ৩১৭৮০৫, হিন্দু ১০৬২৮, খ্রিস্টান ১৫ এবং অন্যান্য ৯। এ উপজেলায় বুনো, বাঁশফোঁড় প্রভৃতি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে।
জলাশয় পদ্মা, গড়াই ও কালীগঙ্গা নদী এবং ডাকুয়া খাল উল্লেখযোগ্য।
প্রশাসন ১৩টি পরগনা নিয়ে ১৮৫৫ সালে কুমারখালী থানা গঠিত হয় এবং ১৮৫৭ সালে এটিকে পাবনার একটি মহকুমায় উন্নীত করা হয়। ১৮৭১ সালে কুমারখালী মহকুমা অবলুপ্ত হয় এবং একে কুষ্টিয়া মহকুমার অংশ হিসেবে নদীয়া জেলার অন্তর্ভূক্ত করা হয়। ১৯৮৩ সালে থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয়। এছাড়াও কুমারখালী অবিভক্ত বাংলার প্রথমদিকের পৌরসভাগুলির মধ্যে একটি। পৌরসভা গঠিত হয় ১৮৬৯ সালে।
উপজেলা | ||||||||
পৌরসভা | ইউনিয়ন | মৌজা | গ্রাম | জনসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | ||
শহর | গ্রাম | শহর | গ্রাম | |||||
১ | ১১ | ১৮৪ | ১৯৭ | ২১৯১৪ | ৩০৬৫৪৩ | ১২৭২ | ৬৩.৬ | ৪৪.০ |
পৌরসভা | ||||||||
আয়তন (বর্গ কিমি) | ওয়ার্ড | মহল্লা | লোকসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | |||
১০.৫০ | ৯ | ১৭ | ২১৯১৪ | ২০৮৭ | ৬৩.৬ |
ইউনিয়ন | ||||||||
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড | আয়তন (একর) | লোকসংখ্যা | শিক্ষার হার (%) | |||||
পুরুষ | মহিলা | |||||||
কয়া ৫১ | ৪৮৪২ | ১৬৭০৪ | ১৬৮৪৮ | ৪৫.০ | ||||
চাঁদপুর ১৯ | ৬৭৭৪ | ১৩৯৫৭ | ১৪৩৫৪ | ৪৪.৯ | ||||
চাপড়া ২৫ | ৫৮০৬ | ১৭৬৪৬ | ১৭৮৫৯ | ৪৫.৬ | ||||
জগন্নাথপুর ৪৩ | ৩৬৩৯ | ১১৪৫২ | ১১১৩০ | ৪২.৫ | ||||
নন্দলালপুর ৬৯ | ৬২১৪ | ১৬৬৩০ | ১৭০৩২ | ৪৪.৪ | ||||
পান্টি ৭৭ | ৫৮৩২ | ১৫৪৫১ | ১৫৭৪১ | ৪৭.১ | ||||
বাগুলাট ১৬ | ৫৮০১ | ১২৫৭৪ | ১২৬৮০ | ৪৯.৫ | ||||
যদুবয়রা ৩৪ | ৫৫১৯ | ১২৯৯৭ | ১৩১২৩ | ৪২.৬ | ||||
শিলাইদহ ৯৪ | ৪৯৬৬ | ১৩৮১৩ | ১৪০৭১ | ৪২.৯ | ||||
সদকী ৮৬ | ৬১৪২ | ১১৮৮২ | ১১৮৬৭ | ৪১.১ | ||||
সাদীপুর ৯০ | ৫৬৬৯ | ৯৫৩১ | ৯২০১ | ৩২.১ |
সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।
প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদারের প্রেস (১৮৫৭), রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়ী (১৮৬২), লালন শাহ এর মাযার, মুগল আমলে নির্মিত বালিয়াকান্দি শাহী মসজিদ, মুগল আমলে নির্মিত কুশলিবাসা শাহী মসজিদ, মিয়াজান কাজীর মসজিদ (১৮৪০), তেবাড়িয়া তিন গম্বুজ মসজিদ (১৮৮৯), কুমারখালী বড় জামে মসজিদ (১৮৯০), শেরকান্দি হাজীর মসজিদ (১৮৮৭), বাটিকামারা জামে মসজিদ, খোরশেদপুর গোপীনাথ মন্দির (১৭৩৫), রাজা সীতারামের মঠ উল্লেখযোগ্য।
মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ কুমারখালীতে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়। ৬ আগস্ট মুক্তিযোদ্ধারা স্থানীয় একজন রাজাকারের বাড়ি আক্রমণ করতে গেলে ৫ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। উপজেলায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের যতগুলো যুদ্ধ হয় সেসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ঘাসখাল যুদ্ধ, ডাঁশা চাষী ক্লাব যুদ্ধ, কুশলীবাসা-করিমপুর-ধলনগর-প্রতাপপুর যুদ্ধ, কয়া মালিথাপাড়া যুদ্ধ, বড়ইচারা (বরইচারা) যুদ্ধ এবং কুমারখালী থানা যুদ্ধ। ৯ ডিসেম্বর কুমারখালী উপজেলা শত্রুমুক্ত হয়। এ উপজেলায় ৩৯ জন মুক্তিযোদ্ধা ও ৬ জন বীরাঙ্গনা রয়েছেন। উপজেলায় ২টি গণকবরের সন্ধান পাওয়া গেছে।
বিস্তারিত দেখুন কুমারখালী উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ২।
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান বালিয়াকান্দি শাহী মসজিদ (মোগল আমলে নির্মিত), কুশলিবাসা শাহী মসজিদ, মিয়াজন কাজীর মসজিদ (১৮৪০), তেবাড়িয়া তিন গম্বুজ মসজিদ (১৮৮৯), কুমারখালী বড় জামে মসজিদ (১৮৯০), শেরকান্দি হাজীর মসজিদ (১৮৮৭), বাটিকামারা জামে মসজিদ, উত্তর যদুবয়রা জামে মসজিদ (১৯০২), হাসিমপুর জামে মসজিদ, পান্টি বাজার জামে মসজিদ, খোরশেদপুর গোপীনাথ মন্দির, রাজা সীতারামের মঠ, মহিষখোলা দুর্গা মন্দির, মির্জাপুরে বৌদ্ধ মঠ।
শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪৫.৩%; পুরুষ ৪৬.৮%, মহিলা ৪৩.৮%। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: কুমারখালী ডিগ্রি্ কলেজ (১৯৭০), পান্টি ডিগ্রি কলেজ (১৯৭৮), কুমারখালী এম এন পাইলট হাইস্কুল (১৮৫৬), খোরশেদপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৮৭৬), যদুবয়রা হাইস্কুল (১৯০২), জে এন উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২২), হাসিমপুর বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯৪৫), সুলতানপুর মাহতাবিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯৪৫), পান্টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯৫৭), কুমারখালী বালিকা বিদ্যালয় (১৯৬৩), মধুপুর কলেজিয়েট স্কুল (১৯৬৩), মহেন্দ্রপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯৬৭), জগন্নাথপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯৭৩), খোরশেদপুর প্রতিমা বালিকা বিদ্যালয় (রবীন্দ্রনাথের পুত্রবধূ নির্মাণ করেন), কুমারখালী সিনিয়র মাদ্রাসা (১৯৬১)।
পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী দৈনিক: গ্রামবার্তা (১৮৫৭), বঙ্গীয় তিলি সমাজ; পাক্ষিক: হিতকরী; মাসিক: শৈবী; অবিলুপ্ত পত্রিকা: প্রত্যয়, সৃজনশীল, প্রত্যাশার প্রতিবিম্ব, কোহিনুর ও নিহারিকা।
সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ৩৬, নাট্যমঞ্চ ৩, নাট্যদল ৫, সিনেমা হল ১, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ২০, সংগীত কলেজ ১, খেলার মাঠ ১৫।
দর্শনীয় স্থান রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়ি, বাউল শিল্পী লালন সাঁই-এর মাযার, সাহিত্যিক মীর মশাররফ হোসেনের বাস্তভিটা, গোপিনাথের মন্দির, খোরশেদ শাহের মাযার।
জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৪২.২৬%, অকৃষি শ্রমিক ৮.০৬%, শিল্প ৯.৬৩%, ব্যবসা ১৮.৫২%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৫.৩২%, চাকরি ৫.৮৮%, নির্মাণ ২.১৭%, ধর্মীয় সেবা ০.২২%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.২৯% এবং অন্যান্য ৭.৬৫%।
কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৪৬.০২%, ভূমিহীন ৫৩.৯৮%। শহরে ২৪.৩৫% এবং গ্রামে ৪৭.৫১% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।
প্রধান কৃষি ফসল ধান, গম, পাট, আখ, ভূট্টা।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি নীল, কাউন, যব।
প্রধান ফল-ফলাদি আম, নারিকেল, কাঁঠাল, লিচু, তাল।
মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার এ উপজেলায় মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগি খামার এবং হ্যাচারি ও নার্সারি রয়েছে।
যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ২৬৪ কিমি, আধা-কাঁচারাস্তা ১৩, কাঁচারাস্তা ৫৪৯ কিমি; নৌপথ ১৫ কিমি; রেলপথ ১৫ কিমি।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, গরু ও ঘোড়ার গাড়ি।
শিল্প ও কলকারখানা বুলবুল টেক্সটাইল, হীরা টেক্সটাইল, রানা টেক্সটাইল, ইলোরা টেক্সটাইল, ইস্টার্ন ফেব্রিকস।
কুটির শিল্প তাঁতশিল্প, সুচিশিল্প, বুননশিল্প, মৃৎশিল্প, বেতের কাজ, বাঁশের কাজ।
হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ২৪, মেলা ৬। সখীপুরের হাট, বাঁশ গ্রাম হাট, খোরশেদপুর হাট, হাসিমপুর বাজার ও পান্টি বাজার এবং শিলাইদহ মেলা, লালন সাঁই-এর মেলা ও গোপীনাথ মেলা উল্লেখযোগ্য।
প্রধান রপ্তানিদ্রব্য বস্ত্র, দুধ, নারিকেল, দই।
বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৬২.৩% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।
পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৬.৩%, ট্যাপ ০.৪% এবং অন্যান্য ৩.৩%।
স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৬২.৬% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৩৪.৩% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ৩.১% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।
স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র ৯, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ১১, মাতৃমঙ্গল ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র ১, ক্লিনিক ৫, ডায়াগনষ্টিক সেন্টার ৩।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ ১৯৭০ ও ১৯৮৮ সালের বন্যায় উপজেলার এনায়েতপুর ও গোবিন্দপুর ইউনিয়নের ঘরবাড়ি, ফসল ও গবাদিপশুর ব্যাপক ক্ষতি হয়।
এনজিও ব্র্যাক, আশা, বিআরডিবি। [শেখ মোঃ বদরুল আলম টিপু]
তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১,বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; কুমারখালী উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।