কীথ, রেভারেন্ড জেম্স
কীথ, রেভারেন্ড জেম্স (১৭৮৪-১৮২৩) বাংলা ভাষায় প্রণীত ও মুদ্রিত প্রথম বাংলা ব্যাকরণের রচয়িতা। জন্ম ১৭৮৪ সালে ইংল্যান্ডে। তিনি ১৮১৬ সালে লন্ডন মিশন সোসাইটির ধর্মপ্রচারকরূপে কলকাতায় আসেন এবং লন্ডন মিশন সোসাইটির সতীর্থ মিশনারি হেনরি টাউনলীর সহযোগিতায় কলকাতায় একটি মিশন প্রতিষ্ঠা করে মিশনারিরূপে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। জেম্স কীথ এবং টাউনলীর চেষ্টায় কলকাতায় একটি মিশনারি স্কুলও প্রতিষ্ঠিত হয়। কীথের মিশনারি কর্মকান্ডের মধ্যে লক্ষ করা যায়, তাঁর দুটি মিশনারী গ্রন্থত একজন দারোয়ান আর একজন মালী এই উভয়ের কথোপকথন (১৮১৮), সৎ পরামর্শ (১৮২৯)। কীথ সমকালীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও জড়িত ছিলেন। উইলিয়ম কেরী কলকাতায় একটি কৃষি সমিতি (Agri-Horticultural Society of India) গড়ে তুললে সেকালের অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তির মতো জেম্স কীথও এ সমিতির একজন সদস্য ছিলেন।
জেম্স কীথের বাংলা ব্যাকরণ প্রকাশিত হয় ১৮২০ সালে। গ্রন্থটির পুরো নাম A Grammar/of/ the Bengali Language/ Adopted to the Young/in Easy Questions and Answers বালকদিগের ব্যাকরণের /শিক্ষার্থে /স্পষ্ট প্রশ্নোত্তর ধারাতে /বঙ্গভাষায় ব্যাকরণ। দ্বিতীয় সংস্করণ কলকাতা স্কুল বুক সোসাইটির কর্তৃক ১৮২৫ সালে প্রকাশিত হয়। প্রথম সংস্করণের কপি দুষ্প্রাপ্য হওয়ায় এবং ১৮২৫ সালের সংস্করণে কোন্ সংস্করণ তা উল্লেখ না থাকায়, অনেকে এটাকে প্রথম সংস্করণের প্রকাশকাল বলে ভুল করেন। ১৮২০ সালের কলকাতা স্কুল বুক সোসাইটির বার্ষিক রিপোর্টে বলা হয় রেভারেন্ড কীথ প্রণীত এ ব্যাকরণের পাঁচশো কপি স্কুল বুক সোসাইটি ক্রয় করেন। উক্ত রিপোর্টে এ ব্যাকরণকে সুলিখিত এবং দেশীয় বাংলা ভাষার শিক্ষক ও ছাত্রদের বিশেষ উপযোগী বলে উল্লেখ করা হয়। পরবর্তীকালে স্কুল বুক সোসাইটি ১৮২৫, ১৮৩৯ ও ১৮৫৮ সালে মুদ্রিত তিনটি সংস্করণ প্রকাশ করে। এ তিনটি সংস্করণই জেম্স কীথের মরণোত্তর প্রকাশনা।
স্কুল বুক সোসাইটি কর্তৃক রাজা রামমোহন রায়ের গৌড়ীয় ব্যাকরণ (১৮৩৩) প্রকাশের পূর্ব পর্যন্ত জেম্স কীথের বাংলা ব্যাকরণই ছিল দেশীয় স্কুল-শিক্ষক ও ছাত্রদের ব্যবহার উপযোগী একমাত্র বাংলা ব্যাকরণ। ব্যাকরণটি প্রশ্নোত্তর ধারাতে রচিত। প্রশ্ন ও উত্তরের মাধ্যমে ব্যাকরণের সূত্রাদি বিশ্লেষণ করা হয়েছে। নতুন নতুন প্রতি শব্দের ব্যবহারও এ ব্যাকরণের অন্যতম বিশিষ্টতা। অভিধানে উইলিয়ম কেরীর ইংরেজি ভাষায় রচিত বাংলা ব্যাকরণ এবং ব্যোপদেব রচিত সংস্কৃত মুগ্ধবোধ ব্যাকরণের প্রভাব লক্ষ করা যায়। তা সত্ত্বেও এ দুটি ব্যাকরণের তুলনায় জেম্স কীথের ব্যাকরণের কিছু স্বাতন্ত্র্য রয়েছে। কীথের ব্যাকরণে ‘অনুনাসিক’ (Nasal) এবং ‘সানুনাসিক’ (Nasalised) এ দুটি পারিভাষিক শব্দের যথার্থ ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়। উইলিয়ম কেরীর ব্যাকরণে সানুনাসিক শব্দটি উভয় অর্থে ব্যবহূত হয়েছে। কেরীর ব্যাকরণে ছিল ৭টি কারক, কিন্তু কীথের ব্যাকরণে রয়েছে ৬টি কারক, সম্বন্ধ পদকে তার ব্যাকরণে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। অভিধানের শেষে অপ্রচলিত ও দুরূহ শব্দের তালিকা ও অর্থ প্রদান করা হয়েছে। রেভারেন্ড জেম্স কীথের বঙ্গভাষার ব্যাকরণে কিছু কিছু ভুল-ত্রুটি লক্ষ করা গেলেও বাংলা ব্যাকরণ রচনার ইতিহাসে এ গ্রন্থটি অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে। সমকালীন বাংলা গদ্যগ্রন্থের তুলনায় তাঁর বাংলা গদ্য বিশেষ প্রশংসনীয়।
১৮২৩ সালের জানুয়ারি মাসে জেম্স কীথের মৃত্যু হয়। [মোহাম্মদ আবদুল কাইয়ুম]