কালেক্টর

কালেক্টর  ব্রিটিশ উপনিবেশিক শাসনে জেলা পর্যায়ের একজন অতীব গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা যার ওপর রাজস্ব আদায় এবং অন্যান্য অসামরিক দায়িত্ব অর্পিত ছিল।  ওয়ারেন হেস্টিংস কর্তৃক ১৭৭২ সালে পদটি সৃষ্টির সময় থেকে এর কাঠামোগত অনেক পরিবর্তন সাধিত হলেও গোটা ব্রিটিশ শাসনামলে জেলা কালেক্টর সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তার ভূমিকা পালন করে আসছিলেন। উপনিবেশিক সরকার এ কর্মকর্তার মাধ্যমে তাদের আদেশ-নির্দেশ কার্যকর করত এবং স্থানীয় নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখত। প্রথম অবস্থায় আদায়কারী অর্থবোধক ‘কালেক্টর’ অভিধাটি এ কারণে জেলা কর্মকর্তাকে দেয়া হয়েছিল যাতে বাংলার প্রভাবশালী মহল মনে করে যে, তিনি (কালেক্টর) প্রকৃতপক্ষে একজন শাসক নন, নিছক রাজস্ব আদায়ের কর্মকর্তা; কেননা তখন বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার দীউয়ান হিসেবে শুধু রাজস্ব আদায়ের দায়িত্ব ছিল ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির।  ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এভাবে দীউয়ানের ছদ্মাবরণে বহু বছর দেশের সর্বময় কর্তৃত্ব চালিয়ে যায়। কিন্তু কালেক্টর পদটি উপনিবেশ পদ্ধতির সঙ্গে এতই সম্পৃক্ত হয়ে পড়ে যে, এদেশে ব্রিটিশ শাসনের অবসান পর্যন্ত এ পদ অব্যাহত ছিল।

তবে এ পুরো সময়ে কালেক্টর পদটির ব্যাপক কাঠামোগত ও প্রায়োগিক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। জেলা কালেক্টর ১৭৯২ সাল পর্যন্ত রাজস্ব আদায় ছাড়াও প্রশাসনিক, বিচার বিভাগীয় ও সামরিক ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন। এরপর তার কাছ থেকে বিচার বিভাগীয় ও ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা পৃথক করে তা জেলা জজের উপর ন্যস্ত করা হয়। উইলিয়ম বেন্টিঙ্কের শাসনামলে জেলা জজের কাছ থেকে ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব প্রত্যাহার করে জেলা কালেক্টরের হাতে ন্যস্ত করা হয় এবং তার নতুন পদবি হয় জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও কালেক্টর। এ একই সময়ে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও কালেক্টরকে সহায়তা করার জন্য ডেপুটি কালেক্টরের পদ সৃষ্টি করা হয়েছিল। উনিশ শতকের শেষভাগ পর্যন্ত এদেশীয় কেউ জেলা কালেক্টর হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেন নি। অবশ্য ভারতীয় সিভিল সার্ভিসের জন্য প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা প্রবর্তিত হওয়ায় এ পদের জন্য আর কোনো বাধানিষেধ থাকে না। তবুও ওই সময় পর্যন্ত এদেশীয় কেউ জেলা কালেক্টর হতে পারেন নি। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও কালেক্টরের পদ অপেক্ষা জেলা জজের পদটি এদেশীয় নাগরিকদের জন্য অধিকতর উন্মুক্ত ছিল। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও কালেক্টর পদের উপনিবেশিক আমলের ক্ষমতা ও প্রভাব পাকিস্তান আমলে অনেকাংশে বজায় ছিল। তবে এর নামের পরিবর্তন করা হয়। এ পদের নতুন নামকরণ হয়  ডেপুটি কমিশনার।  [সিরাজুল ইসলাম]