কালিনারায়ণ বৃত্তি
কালিনারায়ণ বৃত্তি (কেএনএস) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বি.এ (সম্মান) কোর্স সম্পন্নকারীদের জন্য প্রদেয় সম্মানজনক বৃত্তি। ভাওয়ালের রাজা রাজেন্দ্র নারায়ণ রায় তাঁর পিতা কালিনারায়ণ-এর স্মৃতির উদ্দেশ্যে প্রাথমিক পর্যায়ে ঢাকা কলেজের ছাত্রদের জন্য ছয় হাজার টাকার একটি বৃত্তি চালু করেন। উক্ত বৃত্তির টাকা প্রদানের শর্তানুযায়ী যে ছাত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বি এ পরীক্ষায় সর্বোচ্চ স্থান অধিকার করতেন এবং উত্তীর্ণের এক বছরের মধ্যেই এম এ ডিগ্রি সম্পন্ন করতে পারতেন, তাঁকেই এ বৃত্তি প্রদান করা হতো।
১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হলে এ বৃত্তির তহবিল ঢাকা কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্যের দপ্তরের অধীনে নিয়ে যাওয়া হয় এবং তা ১ জুলাই ১৯২১ সাল থেকে কার্যকরী হয়। ১৯২৩ সালের ১৩ মার্চে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যনির্বাহী পরিষদ কর্তৃক এ বৃত্তি প্রদানের রীতি গৃহীত হয়। যদিও ১৯২১ সালে বৃত্তি প্রদানের পুরনো রীতি অনুসারে বি এ পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নম্বর প্রাপ্ত ছাত্রকেই বৃত্তি প্রদান করা হয়েছিলো।
নিয়ম অনুসারে উপ-উপাচার্যের দপ্তরে কলা ও বিজ্ঞান অনুষদের ডিনদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটি ১৯২২ ও ১৯২৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের বি এ ও বি এস সি পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নম্বরধারী ছাত্রের জন্য মাসিক ২০ টাকা বৃত্তি প্রদানের অনুমতি দেয়া হয়। ১৯২৫ সালে পুরনো নিয়ম পরিবর্তিত হয়ে নতুন নিয়ম চালু করা হয়। এতে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের যে ছাত্র সম্মানসহ বি এ শ্রেণিতে সর্বোচ্চ স্থান অর্জন করবেন ও একই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে এম এ শ্রেণিতে অধ্যায়ন করবেন তাঁকে কালিনারায়ণ বৃত্তি প্রদান করা হবে। এ বৃত্তি প্রদানের জন্য ছাত্র বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সাবসিডিয়ারি (অতিরিক্ত) বিষয়ে প্রাপ্ত নম্বরকে বৃত্তি প্রাপ্তির মানদন্ডে বিচার করা হতো না।
১৯২৮ সালে এ বৃত্তির অধ্যাদেশ পুনরায় জারি করা হয়। এতে বলা হয় যে, বৃত্তি প্রাপ্তির যোগ্যতার জন্য একজন ছাত্রকে সম্মান শ্রেণিতে পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হতে হবে এবং সামগ্রিক ছাত্রদের মধ্যে সাবসিডিয়ারি বিষয়েও সর্বোচ্চ নম্বর প্রাপ্ত হতে হবে।
১৯৬৯ সালে কালিনারায়ণ বৃত্তির নিয়ম নতুন করে চালু করার পূর্ব পর্যন্ত উপরোক্ত নিয়ম চালু ছিল। নতুন নিয়মে ঘোষণা করা হয় যে, বৃত্তি প্রাপ্তকে তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সময় থেকে তিন বছরের মধ্যে বি এ (সম্মান) শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হতে হবে।
১৯৮৬ সালে বৃত্তি প্রদানের নিয়ম পুনরায় পরিবর্তিত হয়। এতে বলা হয় যে, একজন ছাত্র সাধারণ মেধা তালিকানুসারেই বৃত্তি প্রাপ্ত হতে পারবেন। ১৯৮৬ সাল থেকে কালিনারায়ণ বৃত্তির অংক ৫০ টাকায় উত্তীর্ণ হয়। ১৯৯০ সালে বলা হয় যে, যে সকল বিভাগ বা অনুষদের সাবসিডিয়ারি বিষয়সমূহকে মূল বিষয়ের সঙ্গে সমন্বিত করা হয়েছে সে সকল বিষয়ের ছাত্রদের মোট নম্বর ১৫০০ (এক হাজার পাঁচশত) হতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের জন্য কালিনারায়ণ বৃত্তি শুরু থেকে সর্বাধিক সংখ্যক বৃত্তি প্রদান সম্পন্ন করেছে এবং শুধুমাত্র অর্থনৈতিক মূল্য দিয়ে নয় সম্মানের দিক দিয়েও এ বৃত্তি সর্বোচ্চ স্থানে ছিলো। [মুহম্মদ আনসার আলী]