কার্যকরী খাদ্য
কার্যকরী খাদ্য (Functional Food) কার্যকরী খাদ্য হলো এমন সব খাবার যা সাধারণ খাদ্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসাবে খাওয়া হয়, প্রয়োজনীয় পুষ্টির পাশাপাশি এক বা একাধিক জৈব কার্যকরী (বায়ো অ্যাকটিভ) যৌগ প্রদান করে এবং ঐতিহ্যগতভাবে পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ খাদ্যের সাথে স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী গুণাগুণ যুক্ত করে। খাদ্য শিল্পের সা¤প্রতিক খবরাখবর থেকে দেখা যাচ্ছে যে, কার্যকরী খাবার বিশ্বজুড়ে ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এবং তারা উন্নত দেশগুলির দৈনন্দিন খাদ্যের অংশ হয়ে উঠেছে। কার্যকরী খাবারের স্বাস্থ্য সুবিধাগুলো তাদের জৈব কার্যকরী (বায়ো অ্যাকটিভ) যৌগগুলির সংমিশ্রণ থেকে উদ্ভূত হয়, যা প্রাকৃতিকভাবে তৈরি হতে পারে, শিল্প প্রক্রিয়াকরণের সময় তৈরি হতে পারে বা অন্যান্য উৎস থেকে বের করে সংযোজন করা যেতে পারে। উদাহরণগুলির মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন উদ্ভিজ্জ রাসায়নিক পদার্থ (ফাইটো কেমিক্যাল) যেমন- ভিটামিন, পেপটাইডস, পলিফেনলিক যৌগ, ক্যারোটিনয়েড এবং আইসোফ্লাভোন, যা প্রধানত বৃদ্ধি ও বিকাশ, বিপাকীয় প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ, অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা, হৃদপেশী সংক্রান্ত (কার্ডিও ভাসকুলার) এবং পাকস্থলী ও ক্ষুদ্রান্ত্রের শারীর তাত্তি¡ক প্রক্রিয়াসমূহ (গ্যাস্ট্রো ইনটেস্টাইনাল ফিজিওলজি), এবং শারীরিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক কর্মক্ষমতা প্রদান করে। সুস্বাস্থ্যের জন্য কার্যকরী খাদ্যপণ্যগুলিকে প্রচলিত খাদ্যপণ্যগুলির তুলনায় সর্বোচ্চ মান নিশ্চিত করা উচিৎ। জাপান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপে সবচেয়ে বেশি কার্যকরী খাদ্যদ্রব্যের ভোক্তা রয়েছে।
কার্যকরী খাবারের ধারণাটি সর্বপ্রথম আশির দশকের মাঝামাঝি জাপানে চালু হয়েছিল। ইউরোপীয় কমিশন কনসার্টেড অ্যাকশন অন ফাংশনাল ফুড সায়েন্স ইন ইউরোপ (FUFOSE) কার্যকরী খাদ্য বিজ্ঞানের ধারণাগুলির জন্য একটি বিজ্ঞান-ভিত্তিক দ্বার উন্মোচনের জন্য তৈরি করা হয়েছিল।
কার্যকরী খাদ্যকে স্থূলভাবে তিনটি বিভাগে ভাগ করা যেতে পারে: (১) প্রচলিত কার্যকরী খাবার (অপরিবর্তিত প্রাকৃতিক খাবার), উদাহরণ: সম্পূর্ণ ফল, সবজি, বাদাম, মাছ, মাংস ইত্যাদি। (২) পরিবর্তিত কার্যকরী খাবার (যে খাবারগুলি পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধকরণ, শক্তিশালীকরণ ইত্যাদির মাধ্যমে পরিবর্তিত হয়েছে) উদাহরণ: ক্যালসিয়াম সংযোজিত কমলার রস, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সংযোজিত মাখন ইত্যাদি। (৩) কার্যকরী খাদ্য উপাদান (বিচ্ছিন্ন বা সংশ্লেষিত খাদ্য উপাদান), উদাহরণ: অপাচ্য কার্বোহাইড্রেট (অলিগোস্যাকারাইড, প্রতিরোধী স্টার্চ) যা প্রিবায়োটিক প্রভাব (ক্ষুদ্রান্ত্রের উপকারী অণুজীবদের পরিচর্যা) প্রদান করে। [হোসাইন উদ্দিন শেখর]