কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণ
কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণ (Technical and Vocational Education and Training-TVET) অর্থ এরূপ শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা উন্নয়নকে বোঝায় যা প্রযুক্তি, প্রায়োগিক বিষয় ও জীবিকার সঙ্গে সম্পর্কিত এবং যার মাধ্যমে অর্থনৈতিক ও সামাজিক জীবনের পেশা সম্পর্কে প্রায়োগিক জ্ঞান, দক্ষতা ও বোধগম্যতা অর্জন করা যায়। এই প্রোগ্রামে, শিক্ষার্থীদের হাতে-কলমে স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদে শিক্ষা-প্রশিক্ষণ দিয়ে কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা হয়।
কারিগরি শিক্ষার সম্প্রসারণ ও মানোন্নয়নের মাধ্যমে দক্ষ মানব সম্পদ সৃষ্টির লক্ষ্যে ১৯৬০ সালে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়াধীন কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের একটি অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের মূল কাজ ৪টি যথা-কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা, উন্নয়ন কর্মকান্ড পরিচালনা, একাডেমিক কার্যক্রমের তদারকীকরণ এবং কারিগরি শিক্ষা সংশ্লিষ্ট দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে সংযোগ সৃষ্টি করা।
সরকারি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা সর্বমোট ১১৯টি। ৬৪টি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজে, ৪৯টি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এবং ৪টি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ। শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ও উচ্চতর শিক্ষণের জন্য ১টি টেকনিক্যাল টিচার্স ট্রেনিং কলেজ ও ১টি ভোকেশনাল টিচার্স ট্রেনিং ইনষ্টিটিউট রয়েছে। কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের সংগঠন পরিচালন, তদারিক, নিয়ন্ত্রন এবং উন্নয়নের দায়িত্ব পালন, পরীক্ষা পরিচালনা, নিয়ন্ত্রন ও ডিপ্লোমা/সাটির্ফিকেট প্রদানের জন্য ১৯৬৭ সালে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড (বাকাশিবো) স্থাপিত হয়। বোর্ড কর্তৃক পরিবর্তনশীল কর্মবাজারের চাহিদার সাথে তাল মিলিয়ে নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণের জন্য ৪র্থ শিল্প-বিপ্লব নির্ভর কারিকুলাম প্রণয়নের কাজ চলমান আছে। বাকাশিবো প্রণীত পাঠ্যক্রম অনুসারে বর্তমানে ৪টি স্তরে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা পাঠদান ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম বিদ্যমানÑ ১. শর্টকোর্স, ২. সার্টিফিকেট কোর্স, ৩. ডিপ্লোমা পর্যায় এবং ৪. ডিগ্রি পর্যায়।
শর্ট কোর্স ১০১টি অকুপেশনে শর্ট কোর্সসমূহ (৩৬০ ঘন্টা মেয়াদী) ৩/৬ মাস মেয়াদে পরিচালিত হয়ে থাকে। শর্ট কোর্সসমূহ বেসিক ট্রেড কোর্স নামেই অধিক পরিচিত। সরকারি বেসরকারি পর্যায়ের পলিটেকনিক, টিএসসি, টিটিসি ও বিভিন্ন ট্রেনিং ইনস্টিটিউটসহ মোট ৩২২৩টি প্রতিষ্ঠানে বেসিক ট্রেড কোর্সের প্রশিক্ষণ চলমান রয়েছে। বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের আওতায় পরিচালিত শর্ট কোর্সকে National Technical and Vocational Qualification Framework (NTVQF) এ রূপান্তরের কার্যক্রম চলমান।
সার্টিফিকেট কোর্স বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড প্রণীত পাঠ্যক্রম অনুসারে সার্টিফিকেট পর্যায়ে এস.এস.সি (ভোকেশনাল)/দাখিল (ভোকেশনাল), এইচ.এস.সি (ভোকেশনাল) ও এইচ.এস.সি (বি.এম) কোর্সে শিক্ষা কার্যক্রম চলমান আছে।
এস.এস.সি/দাখিল (ভোকেশনাল) সাধারণ শিক্ষার প্রয়োগিক বিষয় ও ব্যবহারিক শিক্ষার সমন্বয়ে নবম শ্রেণি হতে ২ বছর মেয়াদী এস.এস.সি (ভোকেশনাল) ও দাখিল (ভোকেশনাল) শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এই শিক্ষাক্রমে অন্তর্ভুক্তির জন্য শিক্ষার্থীদের অষ্টম শ্রেণি উত্তীর্ণ হতে হবে। ৬৪টি সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ (টিএসসি)সহ মোট ১৫১টি সরকারি ভোকেশনাল প্রতিষ্ঠান, ১০৪৫টি বেসরকারি এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠান এবং ৩০৮২টি বেসরকারি ভোকেশনাল প্রতিষ্ঠানে এস.এস.সি (ভোকেশনাল) কোর্সে ও ৩০৫ টি মাদ্রাসায় দাখিল (ভোকেশনাল) কোর্সে পাঠদান চালু রয়েছে। সরকারি টিএসসিসমূহে ১৪ এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহে মোট ৩১টি ট্রেডে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। চলমান ট্রেডগুলোর মধ্যে জেনারেল ইলেকট্রিক্যাল ওয়ার্কস, জেনারেল ইলেকট্রনিক্স, ড্রেসমেকিং, কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি, সিরামিক, সিভিল ড্রাফটিং উইথ ক্যাড, শ্রিম্প কালচার এন্ড ব্রিডিং, বিল্ডিং মেইনটেন্যান্স, অটোমোটিভ, ফিস কালচার এন্ড ব্রিডিং, মেশিন টুলস অপারেশন, পেশেন্ট কেয়ার, প্লাম্বিং এন্ড পাইপ ফিটিং ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এস.এস.সি/দাখিল (ভোকেশনাল) কোর্সের ১৩ (তেরো)টি ট্রেডকে এনটিভিকিউএফ-এর সাথে এ্যালাইন করে সেক্টর ভিত্তিক অক্যুপেশনের Content নিশ্চিত করে সিলেবাস পরিমার্জন করা হচ্ছে।
চলমান ২টি উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে দেশব্যাপী নতুন ৪২৯টি টিএসসি স্থাপন করা হচ্ছে। ২০২১ শিক্ষাবর্ষ হতে ৩৫টি টিএসসিতে ৬ষ্ঠ-৮ম শ্রেণী পর্যন্ত জে.এস.সি (ভোকেশনাল) শিক্ষা চালু করা হয়েছে। প্রকল্পের অধীনে স্থাপিত অবশিষ্ট সরকারি টিএসসিগুলিতে জে.এস.সি (ভোকেশনাল), এস.এস.সি (ভোকেশনাল) এবং এইচএসসি (ভোকেশনাল) কোর্স পর্যায়ক্রমে চালু করা হবে। উত্তীর্ণ হয়ে শিক্ষার্থীরা কারিগরি ও ভোকেশনাল কিংবা সাধারণ শিক্ষার উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ অথবা চাকরিতে নিযুক্ত হতে পারে।
এইচ.এস.সি (ভোকেশনাল) সাধারণ শিক্ষা ও ব্যবহারিক শিক্ষার সমন্বয়ে ২ বছর মেয়াদী এইচ.এস.সি (ভোকেশনাল) কোর্স সরকারি ৬৪টি টিএসসিতে চালু রয়েছে। এই পাঠক্রমের শিক্ষার্থীদের তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক ক্লাসসহ ১২ সপ্তাহের শিল্প কারখানায় বাস্তব প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করতে হয়। এইচ.এস.সি (ভোকেশনাল) উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা কারিগরি, প্রকৌশল এবং সাধারণ শিক্ষার ধারায় উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে বা সরাসরি কর্মে যুক্ত হতে পারে। এ পর্যায়ে ১৪টি ট্রেডে শিক্ষা কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
এইচ.এস.সি (বিজনেজ ম্যানেজম্যান্ট) ০২ বছর মেয়াদী এইচএসসি (বিএম) কোর্সে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে বেসরকারি এমপিওভুক্ত ১০৩২ টি প্রতিষ্ঠানে চলমান আছে। এ পাঠক্রমে ছাত্রছাত্রীদের তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক ক্লাসসহ ০৮ সপ্তাহের শিল্প কারখানায় বাস্তব প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করতে হয়। ছাত্রছাত্রীগণ সাধারণ ধারায় উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে এবং অন্যান্য যোগ্যতা অনুযায়ী দাপ্তরিক পদে চাকরি নিতে পারে। পাঁচটি স্পেসালাইজেশন এই শিক্ষা কার্যক্রম চালু রয়েছে। যথা- কম্পিউটারে কার্যচালনা, সাচিবিক বিদ্যা, হিসাব, ব্যাংকিং এবং ব্যবসায়িক উদ্যোগ গ্রহণ। এইচএসসি (বিএম) কোর্সকে অধিকতর দক্ষতা ভিত্তিক করে প্রায় ৭ (সাত)টি অক্যুপেশনের সাথে এ্যালাইন কার্যক্রম চলছে।
ডিপ্লোমা শিক্ষাক্রম কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ০৪ বছর মেয়াদী ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিংসহ ডিপ্লোমা ইন টেক্সটাইল, ডিপ্লোমা ইন ফিশারিজ ও ডিপ্লোমা ইন এগ্রিকালচার টেকনোলজিতে কোর্স চালু রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে প্রথম ভর্তির আসন সংখ্যা ৫৬৪২০ জন।
ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং ৪৯টি সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এবং ৫১১টি বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ৪ বছর মেয়াদী ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষাক্রম চালু আছে। উক্ত প্রতিষ্ঠানগুলিতে ১ম পর্বে আসন সংখ্যা ১,৬৯,১৮০ জন এবং মোট ৩৪টি টেকনোলজিতে পাঠদান করা হয়। যথা- অটোমাবাইল, এয়ারক্রাফট মেইনটেন্যান্স, আর্কিটেকচার এন্ড ইন্টেরিয়র ডিজাইন, কম্পিউটার, টেলিকমিউনিকেশন, সিরামিক্স, কেমিক্যাল, সিভিল, ইলেকট্রিক্যাল, ইলেকট্রনিক্স, ইলেক্ট্রোমেডিক্যাল, ফুড, এনভায়রনমেন্টাল, গ্রাফিক্স ডিজাইন, মেরিন, মেকাট্রনিক্স, মেকানিক্যাল, প্রিন্টিং, রেফ্রিজারেশন এন্ড এয়ার কন্ডিশনিং, শিপ বিল্ডিং, সার্ভেয়িং প্রভৃতি। ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষাক্রমের টেকনোলজি ভিত্তিক সিলেবাসকে অক্যুপেশনাল কনটেন্ট অর্ন্তভুক্ত করে NTVQF-এর সাথে এ্যালাইন করা হচ্ছে।
NTVQF সনদায়ন জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন নীতি ২০১১-তে TVET-কে ৬টি লেভেলে অন্তর্ভুক্ত করে National Technical and Vocational Qualification Framework (NTVQF) প্রণীত হয়। বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের আওতায় ২০১২ সাল হতে NTVQF-এর ৬টি লেভেলের মূল্যায়ণ ও সনদায়ন করা হয়ে থাকে। মূল্যায়ণ কার্যক্রম শিল্প প্রতিষ্ঠানের বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়। বোর্ড নিজস্ব ইন্সট্রুমেন্ট ব্যবহার করে কারিগরি প্রতিষ্ঠান মূল্যায়ণ করে Registerd Training Organization (RTO) ও Recognition of Prior Learning (RPL) এসেসমেন্ট সেন্টার হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে থাকে। এ পর্যন্ত ১২টি সেক্টরের ১৮৩টি অকুপেশনে ৪০১টি কম্পিটেন্সি স্ট্যান্ডার্ড, ৪০১টি কোর্স অ্যাক্রিডিটেশন ডকুমেন্টস প্রণয়ন করা হয়েছে। কনস্ট্রাকশন, ফার্নিচার, ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং, সিরামিক, ফার্মাসিউটিক্যাল, লেদার এন্ড লেদার গুডসসহ মোট ১২টি ইন্ডাস্ট্রি স্কিলস সেক্টরে বিভিন্ন অকুপেশনে NTVQF-এর প্রশিক্ষণসহ সনদায়ন করা হচ্ছে। কর্মদক্ষতা আছে কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি/সনদ নেই এমন দক্ষতাসম্পন্ন কর্মীদের জচখ এসেসমেন্ট এর মাধ্যমে কর্মদক্ষতার পূর্ব-স্বীকৃতি হিসেবে সনদায়ন করা হচ্ছে। ৪১১টি এসেসমেন্ট সেন্টারের মাধ্যমে ৪৫ হাজারের অধিক প্রশিক্ষণার্থীকে পূর্ব অভিজ্ঞতার স্বীকৃতির (আরপিএল) সনদায়নসহ জুন ২০২১ পর্যন্ত মোট ৮২ হাজারের অধিক প্রশিক্ষণার্থীকে কম্পিটেন্ট হিসেবে সনদায়ন করা হয়েছে। NTVQF-এর আওতায় সনদধারী গ্রাজুয়েটদের চাকুরি বাজারে চাহিদা রয়েছে।
দেশের সকল শিক্ষাধারার (সাধারণ শিক্ষা, কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ, মাদ্রাসা শিক্ষা) সাথে সমন্বিতভাবে NTVQF এর ৬টি লেভেল অন্তর্ভুক্ত করে বাংলাদেশ ন্যাশনাল কোয়ালিফিকেশন ফ্রেমওয়ার্ক (BNQF) কাঠামো প্রণয়ন করা হয়েছে। ১-১০ লেভেল বিশিষ্ট BNQF জাতীয় স্টিয়ারিং কমিটির সভায় চূড়ান্তভাবে অনুমোদিত হয়েছে। BNQF কাঠামো অনুসরণ করে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার্থীরা পরবর্তীতে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে পারবে।
কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষায় শিক্ষকদের জন্য চালুকৃত শিক্ষক-শিক্ষণ পাঠক্রম কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা শিক্ষকদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য ঢাকাস্থ টেকনিক্যাল টিচার্স ট্রেনিং কলেজ (টিটিটিসি)-তে চালুকৃত শিক্ষক-শিক্ষণ পাঠক্রম হলো- (ক) একবছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইন টেকনিক্যাল এডুকেশন, (খ) দুবছর মেয়াদি বি,এসসি ইন টেকনিক্যাল এডুকেশন। ডিপ্লোমা ইন টেকনিক্যাল এডুকেশন শিক্ষাক্রম বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড এবং বি.এস.সি-ইন টেকনিক্যাল এডুকেশন শিক্ষাক্রম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাভুক্ত। জুনিয়র ইন্সট্রাক্টরদের ১ মাস মেয়াদি বেসিক (বুনিয়াদি) প্রশিক্ষণ কোর্স এবং সকল পর্যায়ের কারিগরি শিক্ষকদের বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণসমূহ টিটিটিসি কর্তৃক পরিচালিত হয়। ভোকেশনাল টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে ভোকেশনাল শিক্ষার শিক্ষকদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য ৮টি ট্রেডের বিষয় ভিত্তিক স্বল্প মেয়াদি (১-৪ সপ্তাহ) এবং NTVQF-এর আওতায় অকুপেশনের বিভিন্ন লেভেলে প্রশিক্ষণ পরিচালনা ও সনদায়ন করা হয়।
কারিগরি শিক্ষার উন্নয়নে গৃহীত পদক্ষেপ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সরকার কারিগরি শিক্ষায় বিনিয়োগ বৃদ্ধি করেছে। ২০১৯ সাল পর্যন্ত কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের আওতায় শিক্ষক-কর্মচারীদের অনুমোদিত সৃষ্ট পদের সংখ্যা ছিল ৭৭১৯। সম্প্রতি দেশব্যাপী সরকারি পর্যায়ে নিয়মিত কার্যক্রম ও উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের উদ্যোগে মোট ২৭,১২৬টি শিক্ষক ও টেকনিক্যাল স্টাফদের পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। চলমান প্রকল্পের মাধ্যমে নতুন করে স্থাপিত সরকারি কারিগরি প্রতিষ্ঠানগুলিতে শিক্ষক-কর্মচারিদের আরও ২৯,০৭৫টি পদ সৃষ্টি করা হবে। শিক্ষক-কর্মচারিদের পেশাদারি প্রশিক্ষণ পরিচালনার জন্য বিদ্যমান ২টি কারিগরি শিক্ষক প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বাকি ৬টি বিভাগে ৬টি সরকারি কারিগরি শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের আর্থিক সহয়াতায় স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশের মানবসম্পদ উন্নয়ন ও এর যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিতের জন্য কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা অপরিহার্য। দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার মাধ্যমে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের জন্য কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার প্রচার ও প্রসার অতীব জরুরি। এ লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট ও বাস্তবভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী বিভিন্ন সময়োপযোগী কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। কারিগরি শিক্ষার মাধ্যমে কর্মমুখী ও বাস্তব প্রশিক্ষণ অর্জনের দ্বারাই দেশের বিপুল সম্ভাবনাময় জনগোষ্ঠী দেশ ও বিদেশের কর্মক্ষেত্রে নিজ দক্ষতায় কর্মসংস্থান লাভ করতে সক্ষম হবে। কারিগরি শিক্ষা কর্মক্ষেত্রের সম্ভাবনা উন্মোচন করে, পাশাপাশি উচ্চশিক্ষার জন্য পথ সুগম করে। কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য বেসরকারি পর্যায়ের সম্পৃক্ততার কোন বিকল্প নেই। [আব্দুর রফিক]