কারাতে

কারাতে  আক্রমণ প্রতিরোধ কৌশল সম্বলিত একজাতীয় এশীয় খেলা। এ খেলায় হাত ও পায়ের ব্যবহারই মুখ্য। বিশ্বব্যাপী নারী, পুরুষ ও শিশুরা প্রতিযোগিতা কিংবা আত্মরক্ষার জন্য কারাতে চর্চা করে। এ খেলা শুধু আত্মরক্ষামূলক নয়, এ খেলার লক্ষ্য হলো প্রতিপক্ষের আক্রমণ প্রতিহত করা এবং পাল্টা প্রতিঘাত করে তাকে দুর্বল করা। এ খেলায় প্রতিযোগীকে কোনোরকম অস্ত্র ব্যবহার না করে খালি হাতে লড়তে হয়।

কারাতে খেলার উৎপত্তি নিয়ে মতভেদ থাকলেও অনেকেই এ ব্যাপারে একমত যে, ভারতবর্ষে প্রচলিত হাতাহাতি লড়াই থেকে এ খেলার উৎপত্তি হয়েছে। একজন বৌদ্ধ ভিক্ষু পরবর্তীকালে চীনে এ খেলার সূচনা করেন। অনুমান করা হয়, কারাতে শব্দটি কোনো চীনা শব্দের জাপানি রূপ। ১৬০৯ খ্রিস্টাব্দে জাপানে আইন করা হয়, অস্ত্র ছাড়ো, কারাতে শেখো। পরবর্তী সময়ে এ খেলা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।

একজন কারাতেম্যান বেকায়দায় মাটিতে পড়ে গেলে তার উচিত শরীরকে মোচড় দিয়ে আক্রমণকারীর পেট লক্ষ্য করে পা দিয়ে আঘাত করা। এভাবে নিজেকে বাঁচানোর জন্য কারাতেম্যান হাত, পা, মাথা, হাতের আঙুল, চেটো, চেটোর পাশ প্রভৃতিকে অস্ত্রের মতো ব্যবহার করেন। তবে একইসঙ্গে কারাতেম্যানকে শপথ নিতে হয়, তিনি প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে কিংবা নিছক আঘাত করার উদ্দেশ্যে এর ব্যবহার করবেন না, নিতান্ত আত্মরক্ষা কিংবা অসহায় মানুষের জীবন রক্ষায় এ বিদ্যা কাজে লাগাবেন।

কারাতে বর্তমানে একটি আন্তর্জাতিক খেলা। এ খেলাকে জনপ্রিয় করে তোলার জন্য এর বর্বর অংশকে বাদ দেওয়া হয়েছে। প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে বলা হয়েছে প্রতিযোগী প্রতিপক্ষকে খুব জোরে আঘাত করতে পারবে না। পারফেক্ট ব্লো বা সঠিক মার এবং কিলিং ব্লো বা মারাত্মক মার প্রতিযোগীর গায়ে স্পর্শ করলেই যিনি মারটি দিতে পেরেছেন তিনি পুরো পয়েন্ট পেয়ে যাবেন। তিন পয়েন্ট হলেই এক রাউন্ড শেষ হবে। যে প্রতিযোগী আগে ওই পয়েন্ট জিতবেন তিনি সে রাউন্ডে জয়ী হবেন। মার ঠিক না হলেও প্রতিদ্বন্দ্বীকে স্পর্শ করা যায়। তাতে এক পয়েন্ট পাওয়া যায়।

স্বাধীনতার পরপরই বাংলাদেশে কারাতের বিস্তৃতি ঘটতে থাকে। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ জুডো অ্যান্ড কারাতে ফেডারেশন প্রতিষ্ঠিত হয় এবং একই বছর এটি সরকারি স্বীকৃতি পায়। বিদেশিদের মাধ্যমেই মূলত কারাতে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। প্রথম দিকে বার্মা থেকে বিভিন্ন কারাতেম্যান মার্শাল আর্ট শিখে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র খোলেন। খ্যাতিমান জাহাঙ্গীর আলম এ সময়ে বার্মা থেকে বাংলাদেশে আসেন। পরবর্তী সময়ে তিনি বাংলাদেশ কারাতে ফেডারেশনের প্রথম অফিসিয়াল কোচ নির্বাচিত হন। ১৯৮২ সালে নোনকা নামে জাপানের জাপান ওভারসিস কর্পোরেশন ভলানটিয়ারস (জেওসিবি) এর একজন কারাতেম্যান বাংলাদেশ কারাতে ফেডারেশনের দায়িত্ব নেন। ১৯৯৪ সালে প্রশিক্ষক হিসেবে আসেন জাপানের মিৎসুইতো ইউসিদো।

বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত কারাতে টুর্নামেন্টসমূহের মধ্যে রয়েছে জাতীয় যুব চ্যাম্পিয়নশিপ, জাতীয় শিশুকিশোর চ্যাম্পিয়নশিপ, জাতীয় কারাতে চ্যাম্পিয়নশিপ, কারাতে ফেডারেশন কাপ চ্যাম্পিয়নশিপ প্রভৃতি। বাংলাদেশে কারাতে উন্নয়ন ও প্রশিক্ষণের জন্য ২৯টি রেজিস্টার্ড ক্লাব রয়েছে। এরাই ফেডারেশন কাপ চ্যাম্পিয়নশিপে অংশগ্রহণ করে থাকে। জাতীয় কারাতে চ্যাম্পিয়নশিপে বিভিন্ন স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা, জেলা, সার্ভিসেস দল অংশগ্রহণ করে। কারাতে প্রশিক্ষণ প্রদানকারী স্থানীয় উল্লেখযোগ্য ক্লাবগুলির মধ্যে রয়েছে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব, রণকৌশল প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, ইয়াং ড্রাগন মার্শাল আর্টস, শাওলিন টেম্পল স্কুল, তিতাস কারাতে ক্লাব প্রভৃতি।

১৯৯৯ সালের অষ্টম সাফ গেমসে প্রথম কারাতে অন্তর্ভুক্ত হয়। বাংলাদেশ থেকে সে বছর ৮ জন কারাতেম্যান অংশগ্রহণ করে ২টি রৌপ্য ও ৫টি ব্রোঞ্জ পদক লাভ করে। বাংলাদেশ ওয়ার্ল্ড কারাতে ফেডারেশন থেকে ২০০০ সালের ১৫-২৫ অক্টোবরে জার্মানির মিউনিখে অনুষ্ঠিতব্য ওয়ার্ল্ড কাপ কারাতে চ্যাম্পিয়নশিপে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ পায়। ২০১০ সালে ১১তম দক্ষিণ এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশ দল মোট ৪টি স্বর্ণ, ১টি রৌপ্য এবং ২টি ব্রোঞ্জ পদক অর্জন করে।  [গোফরান ফারুকী]