কারাগার: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

সম্পাদনা সারাংশ নেই
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
১৯ নং লাইন: ১৯ নং লাইন:
{| class="table table-bordered table-hover"
{| class="table table-bordered table-hover"
|-
|-
|  rowspan="2" | পণ্য || colspan="2" | কয়েদি  || colspan="2" | হাজতি
|  rowspan="2" | খাদ্য তালিকা || colspan="2" | কয়েদি  || colspan="2" | হাজতি
|-
|-
|  ডায়েট  || সাধারণ  || ডায়েট  || সাধারণ
|  ডায়েট  || সাধারণ  || ডায়েট  || সাধারণ

০৯:৪৮, ৭ মে ২০২৩ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

কারাগার লাল দালান হিসেবে খ্যাত বন্দীদের আটক বা আবদ্ধ রাখার স্থান। বন্দীদের আটক বা আবদ্ধ রাখার জন্য সাধারণ বা বিশেষ সরকারি নির্দেশে স্থায়ী বা সাময়িকভাবে ব্যবহূত অবকাঠামোকে কারাগার বলে। বাংলাদেশে তিন ধরনের কারাগার রয়েছে: কেন্দ্রীয় কারাগার, জেলা কারাগার ও বিশেষ কারাগার।

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার

বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে কারা অধিদপ্তর। অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদার একজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কারা অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক হন। কারা অধিদপ্তরের অধীনে চারটি বিভাগে চারজন কারা উপ-মহাপরিদর্শক রয়েছেন। এ চারটির মধ্যে কারা উপ-মহাপরিদর্শক, ঢাকা বিভাগ, ঢাকার অধীনে বিশটি কারাগার। কারা উপ-মহাপরিদর্শক, রাজশাহীর অধীনে পনেরটি কারাগার। পনেরটি কারাগার নিয়ে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কারা উপ-মহাপরিদর্শকের সদর দপ্তর কুমিল্লায় অবস্থিত। খুলনা ও বরিশাল বিভাগের ষোলটি কারাগার নিয়ে কারা উপ-মহাপরিদর্শক, যশোরের সদর দপ্তর যশোর জেলায় অবস্থিত। বাংলাদেশে বর্তমানে ৬৬টি কারাগার রয়েছে। এর মধ্যে ১১টি কেন্দ্রীয় কারাগার ও ৫৫টি জেলা কারাগার।

১৫৫২ সালে লন্ডনে St. Briget’s Well প্রাসাদটি প্রথম কারাগার হিসেবে পরিচিত ছিল। ১৫৯৭ সালে ব্রিটিশ সরকার এ ধরনের আরো কয়েকটি কারাগার প্রতিষ্ঠা করে এবং ১৬০০ সালে লন্ডনের প্রত্যেক কাউন্টিতে কারাগার তৈরির পরিকল্পনা করা হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে কারাগারগুলির বন্দীদের দৈহিক পরিশ্রম করতে হতো। আঠার শতকে ইংল্যান্ডে Goal বা জেলখানা মৃত্যু কুঠুরি হিসেবে চিহ্নিত হতো। প্রায় আলো বাতাসহীন ঘরে নারী-পুরুষ সবাইকে একত্রে রাখা হতো। ফলে অনেক মহিলা সে সময়ে নিগৃহীত হলে এ ব্যবস্থার পরিবর্তন করা হয়। সমাজ সংস্কারক জন হাওয়ার্ড ১৭৭৩ সাল থেকে ১৭৯০ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ সময় কারাগারসমূহ পরিদর্শন করেন। তিনি বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে অনেক লেখালেখি করেন। ফলে কারা ব্যবস্থাপনায় বেশ কিছু পরিবর্তন হয়। ১৮১২ সালে ইংল্যান্ডে Millbank নামে প্রথম জাতীয় কারাগার প্রতিষ্ঠিত হয়।

যুক্তরাষ্ট্র ১৭৯০ সালে ফিলাডেলফিয়া অঙ্গরাজ্যে Walnut Street Jail নামে প্রথম রাষ্ট্রীয় কারাগার নির্মাণ করে। ১৭৯৬ সালে নিউইয়র্ক সিটিতে এবং ১৮২৯ সালে ম্যারিল্যান্ড অঙ্গরাজ্যে কারাগার স্থাপিত হয়। পরবর্তীকালে সেখানে বন্দীদের জন্য স্কুল তৈরি হয়। জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যে স্থাপিত কারাগারে ১৮৩২ সালে বন্দীদের ভালো আচরণের জন্য মাসে ২ দিন জেল মওকুফ ও খারাপ আচরণের জন্য কয়েক ধরনের শাস্তি প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়। ভারমোন্ট কারাগারে ১৮৩১ সালে প্রথম আত্মীয়স্বজনদের চিঠি লেখার সুযোগ দেওয়া হয়।

ভারতবর্ষে সম্রাট অশোকের সময়ে মৃত্যু দন্ডাদেশ প্রাপ্ত বন্দীদের তিন দিন একটা কুঠুরিতে বেঁধে রাখা হতো। মুগল আমলে কেল্লাসমূহে ছোট আকারে কিছু কয়েদখানা ছিল, যা কর্তা ব্যক্তিদের মৌখিক হুকুমে নিয়ন্ত্রিত হতো। এ ধরণের কয়েদখানার অবস্থিতি জমিদারি ব্যবস্থাপনাতেও ছিল।  ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হাতে কারা ব্যবস্থাপনা নতুন আঙ্গিকে বিস্তৃতি লাভ করে। রাজবন্দীদের আটকে রাখার জন্য ১৮১৮ সালে বেঙ্গলবিধি জারি করা হয়। ১৮৩৬ সালে বিভিন্ন জেলায় এবং মহকুমা সদরে কারাগার নির্মাণ করা হয়। বর্তমান বাংলাদেশের ঢাকা, রাজশাহী, যশোর ও কুমিল্লার কারাগার সে সময়ে নির্মিত। ১৮৬৪ সালে Code of Rules চালুর মাধ্যমে সকল কারাগার পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনার মধ্যে এক সমন্বিত কার্যক্রম প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯২৭ সালের এপ্রিলে ভারতের বাকুড়ায় কিশোরদের জন্য প্রথম Borstal Institute স্থাপিত হয়। ১৯২৯ সালে অবিভক্ত বাংলায় কলকাতার প্রেসিডেন্সি, আলীপুর, মেদিনীপুর, ঢাকা ও রাজশাহীতে অবস্থিত কারাগারগুলিকে কেন্দ্রীয় কারাগার হিসেবে ঘোষিত হয়। ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীনের পর ৪টি কেন্দ্রীয় কারাগার, ১৩টি জেলা কারাগার এবং ৪৩টি উপ-কারাগার নিয়ে বাংলাদেশ কারাগার-এর যাত্রা শুরু হয়।

বাংলাদেশে বর্তমানে এগারটি কেন্দ্রীয় কারাগার হচ্ছে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার পার্ট-১, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার পার্ট-২, ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় কারাগার, চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার, সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার, কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগার, রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার, রংপুর কেন্দ্রীয় কারাগার, যশোর কেন্দ্রীয় কারাগার ও বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগার। কেন্দ্রীয় কারাগারে সিনিয়র জেল সুপার সংশ্লিষ্ট কারাগারের প্রধান কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। জেলা কারাগারে জেল সুপার বা জেলার বা ডেপুটি জেলার এ দায়িত্ব পালন করে থাকেন।

হাজতি ও কয়েদি হিসেবে জেলখানায় বন্দীরা আসে। ব্যবস্থাপনার সুবিধার্থে এদেরকে সিভিল বন্দী, বিচারাধীন বন্দী, মহিলা বন্দী, ২১ বছর নিম্ন বয়সের পুরুষ বন্দী, বয়ঃসন্ধিতে উপনীত না হওয়া পুরুষ বন্দী এবং অন্যান্য সাজাপ্রাপ্ত পুরুষ বন্দী হিসেবে ভাগ করা হয়। যে সব বন্দীদের বিচারকার্য শেষ হয়নি বা নির্ধারিত তারিখে যাদের আদালতের সম্মুখে হাজির করা হয় তারা হাজতি বন্দী হিসেবে পরিচিত। আর বিচার শেষে সাজাপ্রাপ্ত হয়ে যারা কারাগারে আটক থাকে তারা কয়েদি বন্দী। শারীরিক যোগ্যতা ও পূর্ব অভিজ্ঞতা বিবেচনায় কয়েদিরা বিভিন্ন কাজ করে। এসব কাজের মধ্যে ওয়ার্ড পরিচালনা, বন্দীদের পাহারা, কারা হাসপাতালের রাইটার, পত্র লেখক, রান্না, পানি সরবরাহ, ধোপা, বই বাঁধাই, নাপিত, সুইপার, উৎপাদন বিভাগের বিভিন্ন ট্রেড অর্থাৎ কাঠ, বেত, বাঁশ, তাঁত, মোড়া, সেলাই, কামার ইত্যাদি। হাজতি বন্দীদের সাধারণত কোনো কাজ করানো হয় না। বন্দীদের নামের আদ্যাক্ষরের ক্রমানুসারে বয়স ভেদে তাদের পৃথক ওয়ার্ডে রাখা হয়।

জেলখানার বন্দীদের সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ৩ বার খাবার দেওয়া হয়। সকালের নাস্তায় গুড় ও রুটি, দুপুর ও রাতের খাবারে ভাতের সাথে মাংস বা মাছ, সবজি বা ডাল দেওয়া হয়। অপেক্ষাকৃত মর্যাদা সম্পন্ন অর্থাৎ ১ম ও ২য় শ্রেণির বন্দীরা সাধারণ শ্রেণির বন্দী হতে মানসম্পন্ন খাবার পেয়ে থাকে। তবে জেল হাসপাতালের রোগীদের রোগের ধরন অনুযায়ী খাবার সরবরাহ করা হয়। আসামিদের প্রতিদিনের খাবারের তালিকা নিম্নরূপ:

খাদ্য তালিকা কয়েদি হাজতি
ডায়েট সাধারণ ডায়েট সাধারণ
আটা ১১৬.৬০ গ্রাম ২৯১.৬০ গ্রাম ৮৭.৪৮ গ্রাম ২৪৭.৮৬ গ্রাম
চাউল ২৯১.৬০ গ্রাম ২৪৭.৮৬ গ্রাম
মসুরের ডাল ১৪৫.৮০ গ্রাম ১৪৫.৮০ গ্রাম
আখের গুড় ১৪.৫৮ গ্রাম ১৪.৫৮ গ্রাম
জ্বালানি কাঠ ৭২৯.০০ গ্রাম ৫৮৩.২০ গ্রাম ৭২৯.০০ গ্রাম ৫৮৩.২০ গ্রাম
সবজি ২৯১.৬০ গ্রাম ২৯১.৬০ গ্রাম
লবণ ৩৫.৫২ গ্রাম ২৯.১৬ গ্রাম ৩৫.৫২ গ্রাম ২৯.১৬ গ্রাম
পিয়াজ ৫.১২ গ্রাম ৪.১০ গ্রাম ৫.১২ গ্রাম ৪.১০ গ্রাম
মরিচ ২.২৭ গ্রাম ১.৮২ গ্রাম ২.২৭ গ্রাম ১.৮২ গ্রাম
হলুদ ১.১৩ গ্রাম ০.৯১ গ্রাম ১.১৩ গ্রাম ০.৯১ গ্রাম
ধনিয়া ০.০৫৬ গ্রাম ০.০৪৫ গ্রাম ০.০৫৬ গ্রাম ০.০৪৫ গ্রাম
ভোজ্য তেল ২২.৭৭ গ্রাম ১৮.২২ গ্রাম ২২.৭৭ গ্রাম ১৮.২২ গ্রাম
মাছ ৭২.৯০ গ্রাম
খাশীর মাংস ৭২.৯০ গ্রাম ৭২.৯০ গ্রাম
গরুর মাংস ৭৭.৫৬ গ্রাম ৭৭.৫৬ গ্রাম

বন্দীদের বিনোদনের জন্য প্রতিটি জেল খানায় ইনডোর ও আউটডোর  খেলাধুলার ব্যবস্থা আছে এবং প্রতিটি কারাগারের বন্দী ব্যারাকে টেলিভিশন দেখার ব্যবস্থা রয়েছে। জেলখানায় বন্দীদের চিকিৎসার জন্য প্রেষণে ডাক্তার, ফার্মাসিস্ট, জেল নার্স দায়িত্ব পালন করে থাকে। দেশের প্রতিটি জেলখানায় বন্দীদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল রয়েছে। সেখানে বিনামূল্যে ঔষধ সরবরাহ করা হয়। প্রতিটি জেলখানায় লাইব্রেরি রয়েছে। কারা প্রশাসনে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ নিজেদের বিভিন্ন অভিযোগ বা অসুবিধার কথা দরবার পদ্ধতির মাধ্যমে কর্তৃপক্ষের নিকট তুলে ধরেন।

আদিতে মানুষকে শাস্তি প্রদান ছিল কারাগার সৃষ্টির মূল উদ্দেশ্য, বর্তমানে কারাগার শাস্তি প্রদান ছাড়াও অপরাধীদের সংশোধনাগার হিসেবেও বিবেচিত হচ্ছে। বন্দীদের পুনর্বাসন ও সমাজে প্রতিষ্ঠা পাবার লক্ষে প্রতিটি জেলখানায় প্রেষণামূলক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালু আছে। এ প্রশিক্ষণের আওতায় মহিলা বন্দীদের কাঁথা সেলাই, কাগজের প্যাকেট, খাম তৈরি, বাজারের ব্যাগ তৈরি, টেইলারিং ও সূচিশৈলী শিক্ষা দেওয়া হয়। পুরুষ বন্দীরা ব্যানার বা সাইনবোর্ড লিখন, মৎস্য চাষ, কাগজের প্যাকেট তৈরি, ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রপাতি মেরামত বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেয়। নিরক্ষর বন্দীদের গণশিক্ষার মাধ্যমে অক্ষর জ্ঞান এবং কারাগার মসজিদের ইমামের মাধ্যমে বন্দীদের ধর্মীয় শিক্ষা দেওয়া হয়। কারা প্রশিক্ষক ও শিক্ষিত বন্দীদের স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে বন্দীদের মাঝে এসব কার্যক্রম চালু আছে।

বিভিন্ন আদালত কর্তৃক মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত আসামিদের দন্ড কার্যকর জেলখানায় সম্পন্ন হয়। বিধি মোতাবেক মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার দিন দন্ডপ্রাপ্ত আসামিকে গোসল ও তওবা করিয়ে (মুসলমান কয়েদীর ক্ষেত্রে, অন্যান্যের ক্ষেত্রে নিজ ধর্ম অনুসারে), তাকে নির্ধারিত সময়ে ফাঁসির মঞ্চে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে দন্ডপ্রাপ্ত আসামির গলায় রশি পরিয়ে ফাঁসির মঞ্চে চড়িয়ে জেল সুপারের হাতে থাকা রুমাল মাটিতে ফেলে দেওয়ার মাধ্যমে জল্লাদ লিভার ঘুরিয়ে ফাঁসি কার্যকর করে থাকে। এ সময়ে জেলসুপারসহ একজন ১ম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট, ডাক্তার ও সংশ্লিষ্টগণ উপস্থিত থাকেন। বাংলাদেশে ফাঁসির মাধ্যমে মৃত্যুদন্ড কার্যকরের রেওয়াজ চালু আছে। দেশের প্রতিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে এবং পুরাতন জেলাগুলির জেলখানাতেও ফাঁসির মঞ্চ আছে। উনিশ শতক পর্যন্ত অপরাধীকে প্রকাশ্যে ফাঁসিতে ঝুলানো হতো। কিন্তু পরবর্তীকালে ফাঁসি কার্যকর করার প্রক্রিয়া কারাগারের ভেতরে নিয়ে যাওয়া হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যেসব রাজ্যে ‘বন্দুক সংস্কৃতি’ প্রচলিত ছিল সে সব রাজ্যে ফায়ারিং স্কোয়াডের মাধ্যমে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হতো। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যুদন্ড নিষিদ্ধ ছিল। ১৯৭৬ সাল থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রাণঘাতী ইনজেকশন প্রয়োগে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হচ্ছে।

জেলখানায় শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় কারারক্ষীগণ দায়িত্ব পালন করে থাকেন। এ উপমহাদেশে ১৭৮৮ সালে খাকি রংয়ের হাফ শার্ট, হাফ প্যান্ট পরে কোমরে চামড়ার বেল্ট, পায়ে পট্টি পেঁচিয়ে হাতে বল্লম ও মাথায় পাগড়ি দিয়ে কারারক্ষীগণ দায়িত্ব পালন করত। পরবর্তীকালে কালো ক্যাপ, ফুল হাতা খাকি শার্ট, ফুল প্যান্ট, ওয়েব বেল্ট, বুট পরে ৩০৩ রাইফেল নিয়ে কারারক্ষীরা দায়িত্ব পালন করতে থাকে। বর্তমানে ডীপ-গ্রীন রংয়ের পোশাক পরে দায়িত্ব পালন করছে।

২০০৪ সালে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ১০০ আসন বিশিষ্ট একটি ডে-কেয়ার সেন্টার চালু হয়। কারাগারে মায়ের সাথে আগত ছয় বছর পর্যন্ত বয়সের শিশুদের এখানে মাতৃস্নেহে লালনপালন করা হয়। মায়েদের অনুপস্থিতিতে শিশুদের প্রতিপালন ও দিবাকালীন সেবা প্রদান এবং পুনর্বাসনের ব্যবস্থা রয়েছে এ কেন্দ্রটিতে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর হতে প্রেষণে নিয়োজিত একজন ডাক্তার, দুই জন মেডিকেল এ্যাসিস্ট্যান্ট, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর হতে দুই জন শিক্ষক, কারা অধিদপ্তর হতে চারজন মহিলা কারারক্ষী, পাঁচ জন আয়া ও চারজন সুইপার নিয়োজিত আছেন। এখানে শিশুদের চিত্ত বিনোদনের ব্যবস্থাও রয়েছে।

নওয়াব সুবেদার ইব্রাহিম খাঁর নির্মিত কেল্লাটি বর্তমানে ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগার হিসেবে পরিচিত। এক সময় এ কেল্লার মধ্যে বিচারালয়, টাকশাল, প্রমোদখানা ও শাহী মহল ছিল। ১৭৬৫ সালে লেফটেন্যান্ট সুইলটন আসার পর নায়েব আজিমকে সরিয়ে দেওয়া হয়। ১৭৬৫ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসন আমলে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে দশটি ওয়ার্ড ছিল। তখন সেখানে গড়ে পাঁচশত থেকে সাড়ে পাঁচশত বন্দী অবস্থান করত। একটি ক্রিমিনাল ওয়ার্ড নির্মাণের মাধ্যমে ১৭৮৮ সালে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের যাত্রা শুরু।

‘পাগলা ঘণ্টা’ শব্দটি জেলখানায় বহুল প্রচলিত একটি শব্দ। প্রতিটি জেলখানার প্রধান ফটকে (গেট) এ ঘণ্টা বসানো থাকে। বিশেষ পরিস্থিতিতে এ ঘণ্টা বাজানো হয়। কোনো বন্দী পলায়ন করলে ও কোনো বিদ্রোহ দেখা দিলে সাধারণত এ ঘণ্টা বাজিয়ে সকলকে সতর্ক করে দেওয়া হয়। তখন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষ সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে।

পুরনো ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে অবস্থিত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারটি কেরানীগঞ্জে স্থানান্তরের কাজ শুরু হয়েছে। তাছাড়া, গাজীপুর জেলার কাশিমপুরে অপর দুইটি কেন্দ্রীয় কারাগার অর্থাৎ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার পার্ট-১ ও ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার পার্ট-২ তৈরি করে এর কার্যক্রম ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে।

১৮৪০ সালে রাজশাহী কারাগার প্রতিষ্ঠিত হয়, যা অবিভক্ত বাংলার প্রাচীনতম কারাগারসমূহের একটি। বেঙ্গল জেল কোড-এর ২য় অধ্যায়ের ৩ নং ধারায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সাথে এ কারাগারের নামও উল্লেখ আছে। রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারা অভ্যন্তরে পাকিস্তান আমল ও ব্রিটিশ আমলের কিছু ঐতিহাসিক নির্দশন বিদ্যমান। ঐতিহাসিক খাপড়া ওয়ার্ড এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য।

২০১০ সালের ৬ জুন পর্যন্ত দেশের কারাগারগুলিতে মোট ৭৭,৮০৫ জন বন্দী রয়েছে। এ বন্দী সংখ্যা দেশের কারাগারগুলির ধারণক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি। ফলে আরও ২৭ টি নতুন কারাগার নির্মাণের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে এবং অতিরিক্ত ১৮টি কারাগার স্থাপনের প্রক্রিয়া চলছে। কারাবিধি মতে একজন বন্দীর ঘুমানোর জন্য ৩৬ বর্গফুট জায়গা আবশ্যক। কিন্তু স্থানাভাবে বর্তমানে বন্দীগণ পালাক্রমে ঘুমায়। ২০১০-এর হিসেব মতে বাংলাদেশের বিভিন্ন কারাগারে ১,০৪৮ জন বিদেশি নাগরিক আটক রয়েছে। এর মধ্যে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা পাওয়া কয়েদি ও বিচারাধীন হাজতি রয়েছে। এ হিসেব মতে বিদেশি বন্দীদের মধ্যে সর্বাধিক ৬৬৬ জন মিয়ানমারের, ৩৪৯ জন ভারতের, ২১ জন পাকিস্তানের, ৩ জন তাঞ্জানিয়ার, ৬ জন নেপালের এবং ১ জন করে জাপান, মালয়েশিয়া ও হাঙ্গেরির নাগরিক।  [এ.এস.এম জহুরুল ইসলাম]