কাপাসিয়া উপজেলা

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ০৬:২০, ৬ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Robot: Automated text replacement (-'''''তথ্যসূত্র''''' +'''তথ্যসূত্র'''))

কাপাসিয়া উপজেলা (গাজীপুর জেলা)  আয়তন: ৩৫৬.৯৮ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°০২´ থেকে ২৪°১৬´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°৩০´ থেকে ৯০°৪২´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে গফরগাঁও ও পাকুন্দিয়া উপজেলা, দক্ষিণে কালীগঞ্জ (গাজীপুর) উপজেলা, পূর্বে মনোহরদী উপজেলা, পশ্চিমে শ্রীপুর উপজেলা।

জনসংখ্যা ৩২১৪৫৪; পুরুষ ১৬২৩০৩, মহিলা ১৫৯১৫১। মুসলিম ৩০৩২৯৬, হিন্দু ১৭৮২৬, বৌদ্ধ ৭ এবং অন্যান্য ৩২৫। এ উপজেলায় সাঁওতাল, কোচ (রাজবংশী), মান্দি প্রভৃতি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে।

জলাশয় প্রধান নদ-নদী: শীতলক্ষ্যা, পুরাতন ব্রহ্মপুত্র, বানার। বুড়ি বিল, মাছা বিল, নাইল বিল, বানিয়ার বিল এবং সুতি খাল উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন থানা গঠিত হয় ১৯৪৭ সালে। বর্তমানে এটি উপজেলা।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব(প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
- ১১ ১৬৬ ২৩০ ১০৯৭০ ৩১০৪৮৪ ৯০০ ৬৪.৮ ৫৬.১


উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
৪.৫৪ ১০৯৭০ ২৪১৬ ৬৪.৮৩
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
করিহাটা ৫১ ৬৬৮২ ১১১৭৪ ১০৮৬২ ৫১.৯৮
কাপাসিয়া ৪৩ ৯৫৩৩ ১৯৩২৭ ১৮৪৭৪ ৫৯.৭৯
ঘাগোটিয়া ৩৪ ৫৩৭৭ ১২০৭৮ ১১৬১২ ৫১.২৮
চাঁদপুর ১৭ ৮৮০৮ ১৩০১৪ ১২৯০৫ ৫২.৯৬
টোক ৯৪ ৯৩২৫ ১৯০০২ ১৮৬৬৭ ৪৪.০২
তরগাঁও ৮৬ ৮১৩৬ ১৪৫৬৬ ১৪৩৬৯ ৬০.৫৮
দুর্গাপুর ২৫ ৮৮০৫ ১৬৬১৫ ১৬৭৪০ ৭৬.১৭
বারিসাব ০৮ ৯৭৯১ ১৭৪৮২ ১৭০৬৮ ৪৭.৭২
রায়েদ ৬০ ৮৭৩৯ ১৩০৭৯ ১২৮২৮ ৫৮.৫০
সানমানিয়া ৬৯ ৫৭২৭ ১৪৮৮৪ ১৫১১২ ৬১.৪০
সিংগশ্রী ৭৭ ৬২৬৭ ১১০৮২ ১০৫১৪ ৫৩.৪৯

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ একডালা দূর্গ, দরদরিয়া দূর্গ, টোক দুর্গ, কর্ণপুর দুর্গ ও জোড়া দীঘি, দরগাপাড়া শাহী জামে মসজিদ (টোক), বংশী বাবাজির আশ্রম (সাফাইশ্রী), রাণীগঞ্জের নীল কুঠি (১৮০০), শিশুপালের রাজধানীর ধ্বংসাবশেষ ও দীঘি, লাখপুর ডাকবাংলো।

ঐতিহাসিক ঘটনাবলি ঈসা খানের নেতৃত্বে বার ভূঁইয়াদের মিলিত বাহিনী সম্রাট আকবরের সেনাপতি মানসিংহের বিরুদ্ধে সামরিক  প্রতিরোধ গড়ে তোলে এবং কয়েকটি খন্ড যুদ্ধ সংঘটিত হয়।


১৯৭১ সালের মে মাসে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকবাহিনী কাপাসিয়া বাজারে অগ্নিসংযোগ করে সমগ্র বাজার পুড়িয়ে দেয় এবং তরগাঁও গ্রামের বিভিন্ন স্থানে গণহত্যা চালায়। পরবর্তী সময়ে মুক্তিযোদ্ধারা কাপাসিয়া থানা আক্রমণ করে অস্ত্র ও গোলাবারুদ হস্তগত করে। এ উপজেলার রানীগঞ্জের নাজাই গ্রামে ও রাওনাট ব্রিজের কাছে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাকবাহিনীর লড়াই হয়। ১৩ আগস্ট মুক্তিযোদ্ধারা সিইও অফিসে গ্রেনেড হামলা চালায়। অক্টোবর মাসে তরগাঁও গ্রামে ও খেয়াঘাটে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাকবাহিনীর লড়াই সংঘটিত হয়।

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন স্মৃতিস্তম্ভ ১ (মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সামনে), তরগাঁও গ্রামে শহীদ সাজ্জাদের সমাধি।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৫৯৪, মন্দির ৪১।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৫৬.৪%; পুরুষ ৫৭.৪%, মহিলা ৫৫.৫%। কলেজ ৬, কারিগরি কলেজ ৩, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৭৯, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৮১, মাদ্রাসা ৬৬। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: তারাগঞ্জ এইচ.এন.উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজ (১৯১৯), কাপাসিয়া ডিগ্রি মহাবিদ্যালয় (১৯৬৫), টোক রনেন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০৮), টোক সরজুবালা উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় (১৯১৪), বেগুনহাটি ফাজিল মাদ্রাসা (১৯৩২), কাপাসিয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৩৮)।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী সাপ্তাহিক: শীতলক্ষ্যা, সাময়িকী: রক্তাক্ত লাশ, আত্মীক, হূদয়ের প্রত্যয়।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ৩৮, পেশাগত সংগঠন ২৩, যুবক্লাব ৩৯, সিনেমা হল ১, নাট্যদল ৩, মহিলা সমিতি ৮, সাংস্কৃতিক সংগঠন ১১। কাপাসিয়া পাবলিক লাইব্রেরি, তাজউদ্দিন আহমেদ পাঠাগার, উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী (১৯৮৩)।

দর্শনীয় স্থান অঙ্গনা বিনোদন কেন্দ্র, শীতলক্ষ্যা-ব্রহ্মপুত্র নদীর মিলনস্থলে ধাধার চর, বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদের বাড়ি (দরদরিয়া), কামড়া ইকো পার্ক, ফকির মজনু শাহ সেতু।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৬৪.৪৮%, অকৃষি শ্রমিক ২.৪৯%, ব্যবসা ১২.১৪%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৪.২৩%, চাকরি ৭.৩০% এবং অন্যান্য ৯.৩৬%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক  ৭৭.৭৭%, ভূমিহীন ২২.২৩%। শহরে ৭২.২৮% এবং গ্রামে ৭৭.৯৫% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, পাট, গম, আলু, আখ, সরিষা।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি পান, আউশ ধান, কাউন।

প্রধান ফল-ফলাদিব কাঁঠাল, পেঁপে, আম, পেয়ারা, কলা, আনারস, খেজুর, তাল, লিচু।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ৯, গবাদিপশু ৯৮, হাঁস-মুরগি ২১৭৬।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ১৭৪.৮১ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ১৪.৬৩ কিমি, কাঁচারাস্তা ৪৩৯.১৮ কিমি, নৌপথ ২৩ নটিক্যাল মাইল।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, ঘোড়া ও গরুর গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা চালকল, তেলকল, বিস্কুট ফ্যাক্টরি, কাঠ চেরাই কল ও বিড়ি ফ্যাক্টরি।

কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, হস্তশিল্প, তাঁতশিল্প, বিড়িশিল্প, নকশি কাঁথা, বাঁশ ও বেতের কাজ, পাটিশিল্প, পাটজাত দ্রব্য।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ৩৯, মেলা ৯। কাপাসিয়া বাজার, দস্যুনারায়ণপুর বাজার, রাইতহাট বাজার, নয়াবাজার, রাণীগঞ্জ বাজার, ঘাটকুড়ি বাজার, উখড়ী বাজার, আড়াল বাজার, দরদরিয়া হাট এবং তরগাঁও বারনী নববর্ষের মেলা, পানবরাউদ কালি বাড়ির মেলা, ঘিঘট অষ্টমী স্নান মেলা, নাশেরা বটতলার মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য   পাট, আখ, সরিষা।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ২৩.০৩% (শহরে ৮৫.৯২% এবং গ্রামে ২০.৯৬%) পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

প্রাকৃতিক সম্পদ  ২০০৪ সালে এ উপজেলার দস্যুনারায়ণপুর গ্রামে শীতলক্ষ্যা নদী সংলগ্ন এলাকায় মাটির নিচে পিট কয়লার সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। এছাড়া রায়েদ ইউনিয়নের বেলাশী গ্রামে, সিংগশ্রী ইউনিয়নের কুড়িয়াদী গ্রামে এবং বারিষাব ইউনিয়নের বাজাপুর গ্রামে গ্যাসের সন্ধান পাওয়া গেছে।  উপজেলায় ১২৩৯ হেক্টর (৩.৫%) বনভূমি রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯১.২৬%, ট্যাপ ০.৫২%, পুকুর ০.৪০% এবং অন্যান্য ৭.৮২%। এ উপজেলার  সানমানিয়া, ঘাগোটিয়া, বারিসাব ইউনিয়নের ১৭৫ টি অগভীর নলকূপের পানিতে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক পাওয়া গেছে।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা ৪২.৪১% (শহরে ৮৫.৩৪% এবং গ্রামে ৪০.৯৯%) পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৩০.৬৮% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ২৬.৯২% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ২, ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র ৩, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৯, এনজিও পরিচালিত স্বাস্থ্যকেন্দ্র ৭, কমিউনিটি ক্লিনিক ২০।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ষোল শতকে সংঘটিত ভূমিকম্পে কাপাসিয়ার পূর্ব সীমানায় ব্রহ্মপুত্র নদীতে চর জেগে উঠে। ২০০৩ সালে কামারগাঁও গ্রামে ঘূর্ণিঝড় হয়। ২০০৪ সালে ২২ ফেব্রুয়ারি সদর ইউনিয়নের দস্যুনারায়ণপুর গ্রামে ভূমিধ্বসে অধিকাংশ এলাকা দেবে যায় এবং বাড়িঘর ও সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হয়।

এনজিও গ্রামীণ সমাজ, আশা।

[মোঃ নজরুল ইসলাম]

তথ্যসূত্র   আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; কাপাসিয়া উপজেলা মাঠ পর্যায়ের প্রতিবেদন ২০০৭।