কানাইঘাট উপজেলা

কানাইঘাট উপজেলা (সিলেট জেলা)  আয়তন: ৩৯১.৭৯ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°৫৩´ থেকে ২৫°০৬´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯২°০১´ থেকে ৯২°২৬´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে জৈন্তাপুর উপজেলা ও ভারতের মেঘালয় রাজ্য, দক্ষিণে বিয়ানীবাজার ও জকিগঞ্জ উপজেলা, পূর্বে ভারতের আসাম রাজ্য, পশ্চিমে গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর ও সিলেট সদর উপজেলা।

জনসংখ্যা ২৬৩৯৬৯; পুরুষ ১২৯৩১৯, মহিলা ১৩৪৬৫০। মুসলিম ২৫৪৯৪০, হিন্দু ৮৭৩০, বৌদ্ধ ৬, খ্রিস্টান ২৪৮ এবং অন্যান্য ৪৫। এ উপজেলায় মনিপুরী, খাসিয়া প্রভৃতি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে।

জলাশয় প্রধান নদী: সুরমা; চাতল বিল উল্লে্খযোগ্য।

প্রশাসন কানাইঘাট থানা গঠিত হয় ১৯৩২ সালে এবং উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব(প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
২০৩ ২৬৪ ২৭০৭৮ ২৩৬৮৯১ ৬৭৪ ৬০.১ ৪১.৬
পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
২২.১৬ ২৬ ২৭০৭৮ ১২২২ ৬০.১
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
কানাইঘাট ৪৭ ৭২৯৯ ১১৫১৬ ১১৮৬৫ ৬৪.৪
ঝিংরাবাড়ী ৩৮ ১৫২৭০ ১৬২৫৮ ১৭৯০৩ ৪২.০
দক্ষিণ বণীগ্রাম ১৯ ৮৬৫২ ১৩৯০০ ১৫৫৮৬ ৪৭.১
পশ্চিম দিঘীরপাড় ৭০ ৫০০৫ ৭১২৯ ৭৩৯০ ৪৪.২
পশ্চিম লক্ষ্মীপ্রাসাদ ৬৬ ৯৮০৫ ১২১৫০ ১২৪৪৬ ২৭.৭
পূর্ব দিঘীরপাড় ৭৬ ৮৩৭২ ১১৩৮৩ ১১০৪৫ ৪৬.৪
পূর্ব লক্ষ্মীপ্রাসাদ ৭২ ১৫৪৫৪ ১৬০৩২ ১৫৮৮০ ৩৪.০
বড় চতুল ০৯ ১১৪১৭ ১১৪৬৯ ১১৮৮৮ ৩৬.৪
রাজাগঞ্জ ৮৫ ১০৮৮৫ ১৫৯৩০ ১৭১২১ ৩৬.৭

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

ঐতিহাসিক ঘটনা ১৯২২ সালের ২৩ মার্চ কানাইঘাট মাদ্রাসার বার্ষিক জলসা চলাকালে তৎকালীন সরকার ১৪৪ ধারা জারি করে সমাবেশ নিষিদ্ধ করলে উদ্যোক্তারা ১৪৪ ধারা ভঙ্গের সিদ্ধান্ত নেয় এবং কমিশনারকে আক্রমণ করে। এ ঘটনায় পুলিশের গুলিতে ৬ জন নিহত এবং প্রায় ৩৮ জন আহত হয়। এটি ‘কানাইঘাটের লড়াই’ নামে পরিচিত।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকবাহিনী ও রাজাকারেরা উপজেলার মালিগ্রাম, গৌরিপুর সহ বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক অগ্নিসংযোগ, লুণ্ঠন, নির্যাতন ও নিরীহ লোকদের হত্যা করে। উপজেলার মালিগ্রামে মুক্তিযোদ্ধারা রাজাকাদের ঘাঁটি অপারেশন পরিচালনা করে এবং ভাড়ারীমাটি গ্রামে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাকবাহিনীর যুদ্ধ হয়। উপজেলার বিষ্ণুপুর এলাকায় ১টি বধ্যভূমি ও ১টি গণকবর রয়েছে এবং মমতাজগঞ্জে ১টি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হয়েছে।

বিস্তারিত দেখুন কানাইঘাট উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি,ঢাকা ২০২০, খণ্ড ২।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৪৯১, মন্দির ৩০, গির্জা ১। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: কানাইঘাট জামে মসজিদ, মঙ্গলপুর প্রেসবিটারিয়ান চার্চ।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪৩.৫%; পুরুষ ৪৫.৮%, মহিলা ৪১.৪%। কলেজ ৩, কারিগরি কলেজ ১, প্রাইমারি ট্রেনিং ইন্সটিটিউট ১, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ২০, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১১৩, কমিউনিটি বিদ্যালয় ৮, কিন্ডার গার্টেন ১৪, মাদ্রাসা ১৫। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: দুর্গাপুর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৫), ঝিংরাবাড়ী সিনিয়র মাদ্রাসা (১৮৮২), কানাইঘাট মনসুরিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা (১৮৮৯), গাছবাড়ি জামিউল উলুম আলিয়া মাদ্রাসা (১৯০১), সড়কের বাজার আহমদিয়া আলিম মাদ্রাসা (১৯১৪)।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী মাসিক সীমান্তের ডাক, কানাইঘাট বার্তা।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ১, ক্লাব ৬, সাংস্কৃতিক সংগঠন ১, মহিলা সংগঠন ৭, অডিটোরিয়াম ২, কমিউনিটি সেন্টার ১২, খেলার মাঠ ৪।

দর্শনীয় স্থান বা গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা চা বাগান, পাথরকোয়ারী, তামাবিল স্থলবন্দর।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৪৮.০৩%, অকৃষি শ্রমিক ১১.৪৯%, শিল্প ০.৪২%, ব্যবসা ৮.৯০%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ০.৯৫%, চাকরি ৪.৩০%, নির্মাণ ১.২৬%, ধর্মীয় সেবা ১.২০%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ১২.৬১% এবং অন্যান্য ১০.৮৪%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৫৬.১৫%, ভূমিহীন ৪৩.৮৫%। শহরে ৫৩.৯৬% এবং গ্রামে ৫৬.২০% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, চা, আলু, তেজপাতা, পান, সুপারি, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি তামাক, পাট, গম।

প্রধান ফল-ফলাদিব কাঁঠাল, আনারস, কমলা, লেবু, বাতাবিলেবু, লটকন।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার  এ উপজেলায় মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার রয়েছে।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ১২৯ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ৫০০ কিমি, কাঁচারাস্তা ৬৫৬ কিমি; নৌপথ ২০ কিমি; কালভার্ট ৩০, সেতু ১।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, গরু ও ঘোড়ার গাড়ি।

কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, বেতশিল্প।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ২১। উল্লেখযোগ্য বাজার: কানাইঘাট বাজার, ঝিংরাবাড়ী বাজার।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য   চা, পান, পাথর, বালু, তেজপাতা।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। ৪৩.৫% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ২৪.৫%, ট্যাপ ০.৯% এবং অন্যান্য ৭৪.৬% । এ উপজেলায় অগভীর নলকূপের পানিতে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক পাওয়া গেছে এবং এর পরিমাণ ২৭.৪৬ শতাংশ।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা উপজেলার ৪১.৮% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৪৮.২% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে । ১০.০% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৮, কমিউনিটি ক্লিনিক ২৬, দাতব্য চিকিৎসালয় ২, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ২, পশু চিকিৎসা কেন্দ্র ৫।

এনজিও ব্র্যাক, আশা, ঠেঙ্গামারা মহিলা সমবায় সমিতি।  [জয়ন্ত সিংহ রায়]

তথ্যসূত্র  আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; কানাইঘাট উপজেলা মাঠ পর্যায়ের প্রতিবেদন ২০১০।