কলাপব্যাকরণ
কলাপব্যাকরণ সংস্কৃত ব্যাকরণ। খ্রিস্টীয় ১ম বা ৩য় শতকে শর্ববর্মা রচিত এই ব্যাকরণগ্রন্থটি ‘কাতন্ত্র’ ও ‘কৌমার’ নামেও অভিহিত হয়। একটি সহজবোধ্য ব্যাকরণ রচনার উদ্দেশ্যেই সম্ভবত এতে বৈদিক ব্যাকরণ ও স্বরপ্রক্রিয়া আলোচিত হয়নি।
গ্রন্থটি প্রধানত চার ভাগে বিভক্ত: সন্ধি (সংজ্ঞা ও নিপাতপাদ এর অন্তর্ভুক্ত), নাম (শব্দরূপ, কারক, সমাস, তদ্ধিত, স্ত্রীপ্রত্যয়), আখ্যাত ও কৃৎ (উণাদিও এর অন্তর্গত)। খ্রিস্টীয় ৮ম-১০ম শতকের মধ্যে দুর্গসিংহ রচিত এর একটি বৃত্তি (দৌর্গসিংহ বৃত্তি) খুবই প্রসিদ্ধি অর্জন করে। বঙ্গদেশ ও কাশ্মীরে এর দুটি রূপ প্রচলিত। নিপাতপাদ, স্ত্রীপ্রত্যয়পাদ ও উণাদিপাদের ওপর দুর্গসিংহের বৃত্তি নেই। এই পাদগুলি সম্ভবত পরবর্তীকালে কাশ্মীরি সংস্করণে প্রক্ষিপ্ত হয়েছে। পন্ডিত বার্নেলের মতে এই ব্যাকরণ গ্রন্থটি ১২শ থেকে ১৬শ শতক পর্যন্ত কাশ্মীরে প্রচলিত ছিল।
পাণিনির প্রায় ৪,০০০ সূত্রের স্থলে কাতন্ত্রে আছে মাত্র ৮৫৫টি (কৃৎপ্রকরণ নিয়ে ১,৪০০টি) সূত্র। কাতন্ত্রের বেশ কয়েকটি টীকা, টীকার টীকা এর জনপ্রিয়তার সূচক। এর অধ্যয়ন-অধ্যাপনা পূর্ববঙ্গেই সীমিত ছিল। বাংলাদেশের সংস্কৃত কলেজগুলিতে কলাপব্যাকরণ এখনও পাঠ্য। চন্দ্রকান্ত তর্কালঙ্কার (১৮৩৬-১৯১০) কাতন্ত্রছন্দঃপ্রক্রিয়া (১৮৯৬) নামে এই ব্যাকরণের একটি পরিচিতি রচনা করেন। জার্মান ও তিববতীয় ভাষায় কাতন্ত্রের অনুবাদ হয়েছে। [সুরেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়]