কলকাতা স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিন

কলকাতা স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিন  ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল সার্ভিসের কর্মকর্তা ও কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের প্যাথলজি বিভাগের অধ্যাপক লিওনার্ড রজার্সের (Leonard Rogers ১৮৬৮-১৯৬২) উদ্যোগে ১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।

বিশ্ব পরিসরে এ ধরনের প্রতিষ্ঠান স্থাপনের সূচনা ঘটে উনিশ শতকের শেষ দিকে। ঔপনিবেশিক কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে লিভারপুলে এবং লন্ডনে স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিন প্রতিষ্ঠিত হয় যথাক্রমে ১৮৯৮ ও ১৮৯৯ সালে। ট্রপিক্যাল ডিজিজেস রিসার্চ ফান্ড স্থাপিত হয় ১৯০৪ সালে। এসব প্রতিষ্ঠান স্থাপনের লক্ষ্য ছিল জোসেফ চেম্বারলেন (Joseph Chamberlain) সমর্থিত ‘গঠনমূলক সাম্রাজ্যবাদের’ যুগে উপনিবেশসমূহের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা বাস্তবায়ন এবং ভারতে প্লেগ,কলেরা ও অন্যান্য রোগব্যাধি সম্পর্কে গবেষণার ব্যবস্থা করা। কলকাতা স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিন-এর গবেষণাগারের কর্মকান্ড শুরু হয় ১৯২০ সালে এবং সেখানে শিক্ষার্থী ভর্তি শুরু হয় ১৯২১ সালে। ভারতীয় উপমহাদেশে সর্বপ্রথম গ্রীষ্ণমন্ডলীয় চিকিৎসাবিদ্যায় স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমা প্রদান করে এ প্রতিষ্ঠান। ১৯২১ থেকে ১৯৩৫ সাল পর্যন্ত কতিপয় ইউরোপীয় ব্যক্তি এ প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এদের মধ্যে রয়েছেন JWD Megaw (১৯২১-১৯২৮), HW Acton (১৯২৮-১৯৩৩), R Knowles (১৯৩৩-১৯৩৫) প্রমুখ। প্রথম ভারতীয় পরিচালক ছিলেন স্যার আর.এন চোপরা (১৯৩৫-১৯৪১)। তারপর পরিচালক হন এল.ই ন্যাপিয়ের (LE Napier) এবং পরবর্তী সময়ে আরও একজন ভারতীয় সে পদে নিয়োজিত হন। তারপর ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল সার্ভিসের ডিরেক্টর নন এমন একজন সর্বপ্রথম কলকাতা স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিন-এর পরিচালক হন, তিনি বিরাজমোহন দাশগুপ্ত। নলেস (Knowles)-এর আমন্ত্রণে দাশগুপ্ত কলকাতা স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিন-এর প্রোটোজুলজি বিভাগে সহ-অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন ১৯২১ সালে। প্রোটোজুলজি গবেষণায় তাঁর মৌলিক অবদান রয়েছে, খনি শ্রমিকদের মধ্যে দৃষ্ট লেপটোস্পাইরোসিস রোগেরও তিনি আবিষ্কর্তা। আরও একজন খ্যাতিমান ভারতীয় গবেষক জ্যোতিভূষণ চট্টোপাধ্যায় ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ-এর গবেষণা কর্মকর্তা হিসেবে স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনের হিমাটোলজি বিভাগে যোগ দেন। ঔপনিবেশিক আমলে শুরু হলেও কলকাতা স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিন সেসব ভারতীয় বিজ্ঞানীদের এক গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে পরিণত হয়, যারা জ্ঞান অর্জন ও গবেষণার ক্ষেত্রে মূল্যবান অবদান রেখেছেন। [সুজাতা মুখার্জী]