করিম, শেখ ফজলল: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

(Added Ennglish article link)
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
২৪ নং লাইন: ২৪ নং লাইন:
স্বর্গ আসিয়া দাঁড়ায় তখন আমাদেরই কুঁড়ে ঘরে।
স্বর্গ আসিয়া দাঁড়ায় তখন আমাদেরই কুঁড়ে ঘরে।


সাহিত্য ক্ষেত্রে অবদানের জন্য নদীয়া সাহিত্য সভা তাঁকে সাহিত্যবিশারদ (১৯১৬) এবং কাব্যরত্নাকর (১৯১৭) উপাধি দিয়ে সম্মানিত করে। তাঁর মৃত্যু ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৩৬।
সাহিত্য ক্ষেত্রে অবদানের জন্য নদীয়া সাহিত্য সভা তাঁকে সাহিত্যবিশারদ (১৯১৬) এবং কাব্যরত্নাকর (১৯১৭) উপাধি দিয়ে সম্মানিত করে। তাঁর মৃত্যু ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৩৬। [ওয়াকিল আহমদ]
 
[ওয়াকিল আহমদ]


[[en:Karim, Sheikh Fazlul]]
[[en:Karim, Sheikh Fazlul]]

০৮:৩১, ৩ আগস্ট ২০১৪ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

করিম, শেখ ফজলল (১৮৮২-১৯৩৬)  কবি, সাহিত্যিক, সম্পাদক। জন্ম রংপুর জেলার কাকিনা গ্রামে, ৯ এপ্রিল ১৮৮২। পিতা আমীরউল্লা এবং মাতা কোকিলা বিবি।

গৃহশিক্ষকের কাছে তাঁর বাল্যশিক্ষা শুরু হয়। রঙ্গপুর দিক্প্রকাশ পত্রিকার সম্পাদক হরশঙ্কর মৈত্রেয় তাঁর শিক্ষক ছিলেন। পরে উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করলেও পাঠ অসমাপ্ত রেখে ১৯০১ সালে স্থানীয় একটি জুট ফার্মে চাকরি গ্রহণ করেন। সাত বছর পর তিনি ওই চাকরি ছেড়ে কাকিনায় ‘শাহাবিয়া প্রিন্টিং ওয়ার্কস’ নামে একটি ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেন।

শেখ ফজলল করিমের অল্প বয়সের রচনা সরল পদ্য বিকাশ (১৮৯৪)। তিনি উর্দু গজলের ভাবাবলম্বনে রচনা করেন তৃষ্ণা (১৯০০)। তাঁর পরিত্রাণ (১৯০৩) কাব্য হজরত মুহাম্মদ (স.)-এর চারিত্র্য-মাহাত্ম্য ও ধর্মজীবন নিয়ে রচিত। এ কাব্য তাঁকে সাহিত্যিক মহলে পরিচিত করে তোলে। পরে তিনি রচনা করেন ভগ্নবীণা (১৯০৪), প্রেমের স্মৃতি (১৯০৫), ভক্তি পুষ্পাঞ্জলি (১৯১১), পথ ও পাথেয় (১৯১৩), গাথা (১৯২০), উচ্ছ্বাস প্রভৃতি খন্ড কবিতা ও আখ্যানমূলক কাব্য। লায়লী-মজনু ও হারুন-অর-রশিদ (১৯১৩) নামে আখ্যানধর্মী উপন্যাস রচনা করেন।

তিনি গদ্য রচনাতেও কৃতিত্বের পরিচয় দেন। তাঁর ব্যক্তি-জীবনী ও ইতিহাসাশ্রিত গ্রন্থগুলির মধ্যে হজরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী, আফগানিস্তানের ইতিহাস (১৯০৯), বিবি রহিমা (১৯১৮), রাজর্ষি ইবরাহিম (১৯২৪), বিবি খদিজা (১৯২৭), বিবি ফাতেমা (ওই) প্রভৃতি প্রধান। তাঁর গদ্যভাষা অত্যন্ত প্রাঞ্জল ও বিশুদ্ধ। গদ্য ও পদ্য মিলে তাঁর গ্রন্থসংখ্যা চল্লিশ।

সাহিত্যসাধনা ছিল তাঁর জীবনের ব্রত। তাঁর কাব্যভাবনা ও সাহিত্যসাধনা প্রধানত ধর্মীয় বোধ ও নীতি-চিন্তা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। তিনি ইসলাম ধর্মের আলোকে মুসলমানদের মধ্যে আদর্শ জীবনযাত্রা এবং নীতি-উপদেশ শিক্ষা দিতে চেয়েছেন। তিনি চিশতীয়া সুফিমতের সমর্থক ছিলেন। তাঁর রচনায় ওই মতের প্রভাব বিশেষভাবে লক্ষণীয়। তবে তিনি সমকালের জীবন-যন্ত্রণা ও সমাজ-সমস্যার কথা উপেক্ষা করেননি। বিশেষত মুসলিম সমাজের নানা দুঃখ-দুর্দশা তাঁর মনকে গভীরভাবে স্পর্শ করেছিল। এ সমাজের জাগরণ তিনি কামনা করতেন। কিন্তু সে সঙ্গে মানববাদী চিন্তাও তাঁর মধ্যে লক্ষ করা যায়। এ লক্ষ্যে তিনি বাসনা (বৈশাখ ১৩৩৫) পত্রিকা সম্পাদনা করেন। পত্রিকাটি দু-বছর স্থায়ী হলেও তাতে সমকালের সমাজভাবনার কিছু মূল্যবান উপাদান পাওয়া যায়, যাতে রয়েছে বাংলা ভাষার পক্ষে সম্পাদকের স্বচ্ছ দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয়।

বাঙালি মুসলমানের ভাষা নিয়ে সঙ্কটের সময় বাসনা পত্রিকা বাংলা ভাষার স্বপক্ষে দাঁড়িয়েছিল। হিন্দু-মুসলমান মিলনাকাঙ্ক্ষা ছিল এ পত্রিকার প্রধান লক্ষ্য। হিন্দু-মুসলমান সঙ্কটের সময় শেখ ফজলল করিম রচনা করেন:

কোথায় স্বর্গ কোথায় নরক, কে বলে তা বহু দূর,

মানুষের মাঝে স্বর্গ-নরক, মানুষেতে সুরা-সুর।

রিপুর তাড়নে যখনই মোদের বিবেক পায় গো লয়,

আত্মগ্লানির নরক অনলে তখনি পুড়িতে হয়।

প্রীতি-প্রেমের পুণ্য বাঁধনে যবে মিলি পরস্পরে,

স্বর্গ আসিয়া দাঁড়ায় তখন আমাদেরই কুঁড়ে ঘরে।

সাহিত্য ক্ষেত্রে অবদানের জন্য নদীয়া সাহিত্য সভা তাঁকে সাহিত্যবিশারদ (১৯১৬) এবং কাব্যরত্নাকর (১৯১৭) উপাধি দিয়ে সম্মানিত করে। তাঁর মৃত্যু ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৩৬। [ওয়াকিল আহমদ]