করাতি
করাতি একটি সনাতন পেশাদার শ্রেণি। সাধারণত গাছ কেটে বিভিন্ন নির্মাণ কাজের চাহিদা অনুযায়ী কাঠ প্রস্ত্তত করেন। কাঠ চেরাই-এর ‘করাত’ থেকে করাতি নামের উৎপত্তি। করাতিরা কুড়াল, দড়ি, হাতুড়ি, বাটাল, বাইশ, রান্দা এবং খিল জাতীয় যন্ত্রপাতি ব্যবহার করেন। করাতিরাও অন্যান্য পেশাজীবীর মতো কাজের ধরন অনুযায়ী গড়ে উঠেছে। এদের কাজ গাছকে কাঠে রূপান্তর করা। তারা কাঠ ফেড়ে প্রয়োজন অনুসারে বিভিন্ন জিনিসপত্র বা আসবাবপত্র বানানোর উপযোগী করেন। করাতিরা কাজের উপযোগী করে কাঠ তৈরি করার পরই কাঠমিস্ত্রিরা সে কাঠ দিয়ে ঘরের কাজ, আসবাবপত্রের কাজ এবং অন্যান্য কাজ করেন। আগেকার দিনে হিন্দু সস্প্রদায়ের লোকজন এ পেশায় সম্পৃক্ত ছিলেন। করাতির কাজের ধরন ও পরিসর বিস্তৃত হওয়ায় এখন অন্যান্য ধর্ম, বর্ণ ও সংস্কৃতির লোকজনও এ পেশা গ্রহণ করছে।
বাংলাদেশের সর্বত্রই করাতিদের দেখতে পাওয়া যায়। সাধারণত যশোর, ফরিদপুর, ময়মনসিংহ, বরিশাল, খুলনা ও চট্টগ্রাম-এ এদের সংখ্যা অধিক। এদের কাজের সুযোগ ঘটে বিশেষ বিশেষ মৌসুমে। যেসব অঞ্চলে বেশি বৃষ্টিপাত হয় সেখান থেকে কাজের সন্ধানে তারা চলে আসেন অপেক্ষাকৃত কম বৃষ্টিপাতের এলাকায়। তাদের কাজের বড় ধরনের সুযোগ ঘটে পাহাড়ি অঞ্চলে, বনাঞ্চলে ও সুন্দরবন এলাকায়। কাজের ধরন ও পরিবেশের কারণে অধিকাংশ করাতিই ম্যালেরিয়া, জন্ডিস, বসন্ত প্রভৃতি সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হয়।
আজকাল আধুনিক করাত কল বা কাঠ চেরাই কারখানার উন্নয়ন ঘটতে থাকায় করাতিদের পেশা সঙ্কুচিত হয়ে আসছে। তাদের অধিকাংশই আজ বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে পড়ছেন এবং মৌসুমি কাজের দিকে ঝুঁকছেন। কিছুসংখ্যক করাতি জীবনযাপনের দ্বিতীয় সুযোগ হিসেবে কাঠমিস্ত্রির কাজ করছেন, আবার অনেক করাতি জীবিকার জন্য চাষবাসের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন। [গোফরান ফারুকী]