কবি কংক
কবি কংক (আনু. ১৫শ-১৬শ শতক) মধ্যযুগের একজন কবি এবং সত্যপীরের পাঁচালি কাব্যের আদি রচয়িতা। তিনি চৈতন্যদেবের সমসাময়িক ছিলেন বলে মনে করা হয়। নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার বিপ্রগ্রামে এক ব্রাহ্মণ পরিবারে তাঁর জন্ম। ছয়মাস বয়সে পিতৃমাতৃহীন হয়ে তিনি মুরারি ও কৌশল্যা নামক এক চন্ডাল দম্পতির ঘরে লালিতপালিত হন এবং তাদেরই প্রদত্ত কংকধর বা কংক নামে তিনি পরিচিত হন। কয়েক বছর পরে পালক পিতা-মাতার মৃত্যু হলে তিনি গর্গ পন্ডিত ও গায়ত্রী দেবী নামে এক ব্রাহ্মণ দম্পতির গৃহে আশ্রয় নেন এবং সেখানে তিনি গো-পালকের কাজ করতেন।
বাল্যকাল থেকেই কংকের মধ্যে কবিপ্রতিভার প্রকাশ ঘটে। তিনি চমৎকার বাঁশি বাজাতেন এবং মুখে মুখে শ্লোক রচনা করতেন। গর্গ তাঁর প্রতিভার পরিচয় পেয়ে লেখাপড়া করার সুযোগ করে দেন। গর্গের কন্যা লীলা ও কংক এক সঙ্গে বড় হন এবং এর ফলে উভয়ের মধ্যে অনুরাগের সৃষ্টি হয়। এমন সময় আকস্মিকভাবে কংক এক মুসলমান ফকিরের সংস্পর্শে আসেন এবং তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। এ ফকিরের আদেশেই তিনি সত্যপীরের পাঁচালি রচনা করে ‘কবি কংক’ নামে পরিচিত হন।
এদিকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণের কারণে ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়, এমনকি তাঁর আশ্রয়দাতা গর্গও তাঁর প্রতি ক্ষুব্ধ হন; তাঁকে মেরে ফেলারও ষড়যন্ত্র করা হয়। অগত্যা তিনি সেখান থেকে পালিয়ে যান এবং দেশে দেশে ঘুরে ঘুরে সত্যপীরের পাঁচালি কীর্তন করেন। তাঁর সত্যপীরের পাঁচালি বাংলা সাহিত্যের এক অমূল্য সম্পদ। ময়মনসিংহ অঞ্চলে এ গ্রন্থ যুগ যুগ ধরে খুবই জনপ্রিয় ছিল। কংকের আরেকখানি কাব্যের নাম মলয়ার বারমাসী।
শেষ জীবনে কংক পুরীধামে গিয়েছিলেন বলে মনে করা হয়। উড়িয়া হরফে বাংলা ভাষায় লেখা কবি কর্ণের সত্যপীরের পাঁচালি নামে একখানি পুথি পাওয়া যায়। এ কবি কর্ণ ও কবি কংক একই ব্যক্তি বলে অনেকে মনে করেন। [আলি নওয়াজ]