কপোতাক্ষ নদ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

(Added Ennglish article link)
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
৪ নং লাইন: ৪ নং লাইন:
প্রকৃতপক্ষে, কপোতাক্ষের উৎপত্তি মাথাভাঙ্গা নদী থেকে। এ উৎপত্তি স্থলে মাথাভাঙ্গার একটি বিরাট বাঁক ছিল। নদীর পথ সংক্ষিপ্ত করার জন্য একটি [[খাল|খাল]] খনন করে মাথাভাঙ্গার মূল স্রোতের গতিপথ পরিবর্তন করা হলে মাথাভাঙ্গার সঙ্গে কপোতাক্ষের সংযোগ প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে এবং পরবর্তী সময়ে ভৈরব থেকে মূল স্রোতধারা পেয়ে থাকে।  [[গঙ্গা নদী|গঙ্গা]] নদীর সঙ্গে মাথাভাঙ্গা এবং মাথাভাঙ্গার সঙ্গে কপোতাক্ষের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার ফলে কপোতাক্ষের স্রোতধারা ক্ষীণ হয়ে পড়ে। বর্ষাকাল ছাড়া অন্যান্য সময় স্থানীয় বৃষ্টি এবং চোয়ানো পানিই এর প্রধান উৎস হয়ে দাঁড়ায় এবং নদীটি অধিকাংশ স্থানেই নাব্যতা হারায়। গ্রীষ্মকালে ঝিকরগাছা উপজেলার কাছে নদীটি প্রায় শুকিয়েই যায়। তালা উপজেলার কাছে উঁচু পাড় দেখে অনুমান করা হয় যে, এখানে নদী একসময় ৭৫০ মিটার প্রশস্ত ছিল; বর্তমানে প্রায় ১৭০ মিটার। চাঁদখালীর কাছে নদীটি প্রায় ৩০০ মিটার চওড়া। নদীটি প্রায় শুকিয়ে গিয়েছিল, কিন্তু  [[বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড|বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড]] গঙ্গা থেকে পানি পাম্প করে এ নদীর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত করে এলাকায় জলসেচের ব্যবস্থা করেছে। এ প্রকল্পর নাম  [[গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্প|গঙ্গা]][[গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্প|-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্প]]। কপোতাক্ষের পানি যশোর জেলাতেও কোথাও কোথাও পাম্প করে সেচের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। বর্তমানে পানি প্রবাহ [[সেচ|সেচ]] কাজের জন্য যথেষ্ট নয়। কপোতাক্ষ নদ এবং এর শাখা-প্রশাখা দিয়ে কুষ্টিয়া, যশোর ও খুলনার প্রায় ৩,৩১৫ বর্গ কিমি এলাকার জল নিষ্কাশিত হয়। নদীটি খুলনা জেলার প্রায় সর্বত্রই নাব্য এবং লঞ্চ চলাচলের ব্যবস্থা আছে। নদীর মোট দৈর্ঘ্য প্রায় ২৬০ কিমি।
প্রকৃতপক্ষে, কপোতাক্ষের উৎপত্তি মাথাভাঙ্গা নদী থেকে। এ উৎপত্তি স্থলে মাথাভাঙ্গার একটি বিরাট বাঁক ছিল। নদীর পথ সংক্ষিপ্ত করার জন্য একটি [[খাল|খাল]] খনন করে মাথাভাঙ্গার মূল স্রোতের গতিপথ পরিবর্তন করা হলে মাথাভাঙ্গার সঙ্গে কপোতাক্ষের সংযোগ প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে এবং পরবর্তী সময়ে ভৈরব থেকে মূল স্রোতধারা পেয়ে থাকে।  [[গঙ্গা নদী|গঙ্গা]] নদীর সঙ্গে মাথাভাঙ্গা এবং মাথাভাঙ্গার সঙ্গে কপোতাক্ষের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার ফলে কপোতাক্ষের স্রোতধারা ক্ষীণ হয়ে পড়ে। বর্ষাকাল ছাড়া অন্যান্য সময় স্থানীয় বৃষ্টি এবং চোয়ানো পানিই এর প্রধান উৎস হয়ে দাঁড়ায় এবং নদীটি অধিকাংশ স্থানেই নাব্যতা হারায়। গ্রীষ্মকালে ঝিকরগাছা উপজেলার কাছে নদীটি প্রায় শুকিয়েই যায়। তালা উপজেলার কাছে উঁচু পাড় দেখে অনুমান করা হয় যে, এখানে নদী একসময় ৭৫০ মিটার প্রশস্ত ছিল; বর্তমানে প্রায় ১৭০ মিটার। চাঁদখালীর কাছে নদীটি প্রায় ৩০০ মিটার চওড়া। নদীটি প্রায় শুকিয়ে গিয়েছিল, কিন্তু  [[বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড|বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড]] গঙ্গা থেকে পানি পাম্প করে এ নদীর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত করে এলাকায় জলসেচের ব্যবস্থা করেছে। এ প্রকল্পর নাম  [[গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্প|গঙ্গা]][[গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্প|-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্প]]। কপোতাক্ষের পানি যশোর জেলাতেও কোথাও কোথাও পাম্প করে সেচের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। বর্তমানে পানি প্রবাহ [[সেচ|সেচ]] কাজের জন্য যথেষ্ট নয়। কপোতাক্ষ নদ এবং এর শাখা-প্রশাখা দিয়ে কুষ্টিয়া, যশোর ও খুলনার প্রায় ৩,৩১৫ বর্গ কিমি এলাকার জল নিষ্কাশিত হয়। নদীটি খুলনা জেলার প্রায় সর্বত্রই নাব্য এবং লঞ্চ চলাচলের ব্যবস্থা আছে। নদীর মোট দৈর্ঘ্য প্রায় ২৬০ কিমি।


কপোতাক্ষ নদ [[জোয়ারভাটা|জোয়ারভাটা]] দ্বারা প্রভাবিত; তবে উৎপত্তি স্থল থেকে ঝিকরগাছা পর্যন্ত জোয়ারভাটার প্রভাবমুক্ত। লবণাক্ত পানি প্রতিরোধের জন্য নদীর তীরবর্তী দীর্ঘ এলাকায় [[বাঁধ|বাঁধ]] দেওয়া হয়েছে। লবণাক্ততার কারণে খুলনা জেলার অংশে সেচকার্য সুবিধাজনক নয়; তবে  [[চিংড়ি|চিংড়ি]] চাষের জন্য খুবই উপযোগী। কপোতাক্ষ নদ চৌগাছা, ঝিকরগাছা, চাকলা ত্রিমোহনী, জীবননগর, কোটচাঁদপুর, সাগরদাঁড়ি, তালা, কুপিলমনি, বারুলী, চাঁদখালী, বড়দল, আমাদী, বেদকাশী প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য স্থানের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। কপোতাক্ষের তীরেই [[দত্ত, মাইকেল মধুসূদন|মাইকেল মধুসূদন দত্ত]]-এর জন্মস্থান সাগরদাঁড়ি অবস্থিত।
কপোতাক্ষ নদ [[জোয়ারভাটা|জোয়ারভাটা]] দ্বারা প্রভাবিত; তবে উৎপত্তি স্থল থেকে ঝিকরগাছা পর্যন্ত জোয়ারভাটার প্রভাবমুক্ত। লবণাক্ত পানি প্রতিরোধের জন্য নদীর তীরবর্তী দীর্ঘ এলাকায় [[বাঁধ|বাঁধ]] দেওয়া হয়েছে। লবণাক্ততার কারণে খুলনা জেলার অংশে সেচকার্য সুবিধাজনক নয়; তবে  [[চিংড়ি|চিংড়ি]] চাষের জন্য খুবই উপযোগী। কপোতাক্ষ নদ চৌগাছা, ঝিকরগাছা, চাকলা ত্রিমোহনী, জীবননগর, কোটচাঁদপুর, সাগরদাঁড়ি, তালা, কুপিলমনি, বারুলী, চাঁদখালী, বড়দল, আমাদী, বেদকাশী প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য স্থানের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। কপোতাক্ষের তীরেই [[দত্ত, মাইকেল মধুসূদন|মাইকেল মধুসূদন দত্ত]]-এর জন্মস্থান সাগরদাঁড়ি অবস্থিত। [তাহমিনা আহমেদ]


[তাহ্মিনা আহ্মেদ]
''মানচিত্রের জন্য দেখুন'' [[গঙ্গা-পদ্মা নদীপ্রণালী|গঙ্গা-পদ্মা নদীপ্রণালী]]।
 
''মানচিত্রের জন্য দেখুন'' [[গঙ্গা-পদ্মা নদীপ্রণালী|গঙ্গা]][[গঙ্গা-পদ্মা নদীপ্রণালী|-পদ্মা নদীপ্রণালী]]।


[[en:Kobadak River]]
[[en:Kobadak River]]

০৪:৫৯, ২২ জুলাই ২০১৪ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

কপোতাক্ষ নদ (Kobadak River)  ভৈরব নদীর একটি শাখা নদী। দ্রাবিড়পূর্ব জনগোষ্ঠীর ‘কবদাক’ সংস্কৃত ভাষায় ‘কপোতাক্ষ’-তে রূপান্তরিত হয়েছে।  ইছামতী নদী কুষ্টিয়া জেলার দর্শনার কাছে দুটি শাখায় বিভক্ত হয়ে একটি শাখা দক্ষিণ-পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়েছে যা ভৈরব নামে পরিচিত। কোটচাঁদপুরের দক্ষিণে ভৈরব থেকে একটি শাখা বের হয়ে দক্ষিণে প্রবাহিত হয়ে খুলনা জেলার পাইকগাছার কাছে  শিবসা নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে। ভৈরবের এ শাখাই কপোতাক্ষ। এ নদীর পানি কপোত বা পাখির অক্ষির (চোখ) মতো স্বচ্ছ ছিল বলে নদীটির নাম হয় কপোতাক্ষ।

প্রকৃতপক্ষে, কপোতাক্ষের উৎপত্তি মাথাভাঙ্গা নদী থেকে। এ উৎপত্তি স্থলে মাথাভাঙ্গার একটি বিরাট বাঁক ছিল। নদীর পথ সংক্ষিপ্ত করার জন্য একটি খাল খনন করে মাথাভাঙ্গার মূল স্রোতের গতিপথ পরিবর্তন করা হলে মাথাভাঙ্গার সঙ্গে কপোতাক্ষের সংযোগ প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে এবং পরবর্তী সময়ে ভৈরব থেকে মূল স্রোতধারা পেয়ে থাকে।  গঙ্গা নদীর সঙ্গে মাথাভাঙ্গা এবং মাথাভাঙ্গার সঙ্গে কপোতাক্ষের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার ফলে কপোতাক্ষের স্রোতধারা ক্ষীণ হয়ে পড়ে। বর্ষাকাল ছাড়া অন্যান্য সময় স্থানীয় বৃষ্টি এবং চোয়ানো পানিই এর প্রধান উৎস হয়ে দাঁড়ায় এবং নদীটি অধিকাংশ স্থানেই নাব্যতা হারায়। গ্রীষ্মকালে ঝিকরগাছা উপজেলার কাছে নদীটি প্রায় শুকিয়েই যায়। তালা উপজেলার কাছে উঁচু পাড় দেখে অনুমান করা হয় যে, এখানে নদী একসময় ৭৫০ মিটার প্রশস্ত ছিল; বর্তমানে প্রায় ১৭০ মিটার। চাঁদখালীর কাছে নদীটি প্রায় ৩০০ মিটার চওড়া। নদীটি প্রায় শুকিয়ে গিয়েছিল, কিন্তু  বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড গঙ্গা থেকে পানি পাম্প করে এ নদীর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত করে এলাকায় জলসেচের ব্যবস্থা করেছে। এ প্রকল্পর নাম  গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্প। কপোতাক্ষের পানি যশোর জেলাতেও কোথাও কোথাও পাম্প করে সেচের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। বর্তমানে পানি প্রবাহ সেচ কাজের জন্য যথেষ্ট নয়। কপোতাক্ষ নদ এবং এর শাখা-প্রশাখা দিয়ে কুষ্টিয়া, যশোর ও খুলনার প্রায় ৩,৩১৫ বর্গ কিমি এলাকার জল নিষ্কাশিত হয়। নদীটি খুলনা জেলার প্রায় সর্বত্রই নাব্য এবং লঞ্চ চলাচলের ব্যবস্থা আছে। নদীর মোট দৈর্ঘ্য প্রায় ২৬০ কিমি।

কপোতাক্ষ নদ জোয়ারভাটা দ্বারা প্রভাবিত; তবে উৎপত্তি স্থল থেকে ঝিকরগাছা পর্যন্ত জোয়ারভাটার প্রভাবমুক্ত। লবণাক্ত পানি প্রতিরোধের জন্য নদীর তীরবর্তী দীর্ঘ এলাকায় বাঁধ দেওয়া হয়েছে। লবণাক্ততার কারণে খুলনা জেলার অংশে সেচকার্য সুবিধাজনক নয়; তবে  চিংড়ি চাষের জন্য খুবই উপযোগী। কপোতাক্ষ নদ চৌগাছা, ঝিকরগাছা, চাকলা ত্রিমোহনী, জীবননগর, কোটচাঁদপুর, সাগরদাঁড়ি, তালা, কুপিলমনি, বারুলী, চাঁদখালী, বড়দল, আমাদী, বেদকাশী প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য স্থানের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। কপোতাক্ষের তীরেই মাইকেল মধুসূদন দত্ত-এর জন্মস্থান সাগরদাঁড়ি অবস্থিত। [তাহমিনা আহমেদ]

মানচিত্রের জন্য দেখুন গঙ্গা-পদ্মা নদীপ্রণালী