কটিয়াদি উপজেলা

কটিয়াদি উপজেলা (কিশোরগঞ্জ জেলা)  আয়তন: ২১৯.২১ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°১০´ থেকে ২৪°২২´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°৪৩´ থেকে ৯০°৫৫´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে কিশোরগঞ্জ সদর ও করিমগঞ্জ উপজেলা, দক্ষিণে বেলাবো ও মনোহরদী উপজেলা, পূর্বে নিকলি, বাজিতপুর ও কুলিয়ারচর উপজেলা, পশ্চিমে পাকুন্দিয়া উপজেলা।

জনসংখ্যা ৩১৪৫২৯; পুরুষ ১৫১০১৭, মহিলা ১৬৩৫১২। মুসলিম ৩০৩৪৫৮, হিন্দু ১০৯৫৭, খ্রিস্টান ২১ এবং অন্যান্য ৯৩ জন।

জলাশয় প্রধান নদী: পুরাতন ব্রহ্মপুত্র ও মঙ্গলহাট। ডোবা বিল এবং মানিকখাল উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন কটিয়াদি থানা গঠিত হয় ১৮৯৭ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব(প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
৮১ ১৫৬ ৪০৭২৫ ২৭৩৮০৪ ১৪৩৫ ৪৮.২ ৩৯.৫
পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
১৯.৩২ ২০ ৪০৭২৫ ২১০৮ ৪৮.২
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
আচমিতা ০৯ ৫৩৫১ ১৭৪২১ ১৮৮০২ ৩৭.৯
কারগাঁও ৪৭ ৮২০০ ১৫২৩৭ ১৬২৫৪ ৩৪.৭
চাঁদপুর ২৮ ৬১৫২ ১৪৪৭৬ ১৬০৫৩ ৩২.৭
জালালপুর ৩৮ ৩২৩৬ ১১৬২৪ ১২৬৮৫ ৪০.৯
বনগ্রাম ১৯ ৬২৯৭ ১৭০৩৫ ১৮৩১৩ ৩৭.৭
মাসুয়া ৭৬ ৪৯৩০ ১৬০৮৪ ১৭৩৪৮ ৪৮.৯
মুমুরদিয়া ৮৫ ৫৪৩২ ১৩১২৫ ১৪৩৪০ ৩৬.৯
লোহাজুরি ৬৬ ৩২৪৭ ১০৮৩১ ১১৬৪০ ৪১.৭
শাহআশ্রম ধুলদিয়া ৯৫ ৬৫৯৭ ১৫৫২৪ ১৭০১২ ৪৩.৬

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ কুড়িখাই গ্রামে হযরত শাহ্জালাল (রঃ)-এর সংগী হযরত শামসুদ্দিন (রঃ)-এর মাযার, গোপীনাথ জিউর মন্দির, লক্ষ্মীনারায়ণ, জিউর মন্দির (রাজা নববঙ্গ রায়ের সময় নির্মিত)।

মুক্তিযুদ্ধ উপজেলার ৩৬ জন মুক্তিযোদ্ধা ভারতের আগরতলার বিভিন্ন ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে প্রথম প্রশিক্ষিত মুক্তিযোদ্ধার দল হিসেবে কটিয়াদি ফিরে আসে এবং মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের হাতে এ উপজেলার বহু মানুষের প্রাণহানি ঘটে। এলাকায় বিভিন্ন বাড়ি ও দোকানে আগুন দেয়া হয়।

বিস্তারিত দেখুন কটিয়াদী উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ২।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৩২৯, মাযার ২, মন্দির ২, আখড়া ২। কলামহল জামে মসজিদ, কুড়িগাই দরগাহ জামে মসজিদ, কটিয়াদি পুরাতন বাজার জামে মসজিদ, বেথইর জামে মসজিদ উল্লেখযোগ্য।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪০.৬%; পুরুষ ৪০.৬%, মহিলা ৪০.৬%। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: কটিয়াদি ডিগ্রি কলেজ, ড. আব্দুল মান্নান মহিলা কলেজ, আচমিতা জর্জ ইনস্টিটিউশন (১৯১২), নবগ্রাম আনন্দ কিশোর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২২), বনগ্রাম আনন্দ কিশোর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১২), কটিয়াদি পাইলট  বালক উচ্চ বিদ্যালয়, কটিয়াদি পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৬৩.৩৩%, অকৃষি শ্রমিক ৩.৪৮%, শিল্প ০.৯৪%, ব্যবসা ১৪.৪১%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ২.২৮%, চাকরি ৪.৬১%, নির্মাণ ০.৮৯%, ধর্মীয় সেবা ০.২০%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ১.৪১% এবং অন্যান্য ৮.৪৫%।

"কৃষিভূুমির মালিকানা"  ভূমিমালিক ৫৩.৯৭%, ভূমিহীন ৪৬.০৩%। শহরে ৩৪.২১% এবং গ্রামে ৫৪.৮৫% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, গম, আলু, আখ, পাট, চিনাবাদাম, সরিষা, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি তুলা, যব, তিল, কাউন, তিসি, মৌরি, কালিজিরা।

প্রধান ফল-ফলাদিব আম, কাঁঠাল, লিচু, কলা, পেঁপে।

"মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার"   এ উপজেলায় মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার রয়েছে।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকা রাস্তা ১১৯ কিমি, আধাপাকা রাস্তা ১১ কিমি, কাঁচা রাস্তা ৩৯৫ কিমি, রেলপথ ১৯ কিমি; নৌপথ ৫ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পালকি, ঘোড়া ও গরুর গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা বিড়ি শিল্প ২, সরিষা তৈল শিল্প ৪, আগরবাতি ৩, ইটভাটা ১।

কুটিরশিল্প তাঁতশিল্প, লৌহশিল্প, বাঁশশিল্প, মৃৎশিল্প, কাঠের কাজ।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ২০, মেলা ৮। কটিয়াদি, ধুলদিয়া ও কারগাঁও বাজার, গোপীনাথ জিউর মন্দিরে রথের মেলা, শীতলা মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য   পাট।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৩৭.৮% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৪.৬%, ট্যাপ ০.৭% এবং অন্যান্য ৪.৭%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৩৪.৩% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৫০.৯% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ১৪.৮% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৮, পল্লী স্বাস্থ্যকেন্দ্র ২।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ১৯১৮ সালের ভূমিকম্পে এ উপজেলার ঘরবাড়ি ও সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এছাড়া ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষে এ উপজেলার অনেক মানুষ প্রাণ হারায়।

"এনজিও" ১৮। ব্র্যাক, আশা, প্রত্যাশা, আহসানিয়া মিশন, পল্লী বিকাশ, প্রশিকা।  [সৈয়দ মোঃ সালেহ উদ্দিন]

তথ্যসূত্র   আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; কটিয়াদি উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।