উষ্ণ প্রস্রবণ
উষ্ণ প্রস্রবণ (Hot Spring) ভূগর্ভ থেকে প্রাকৃতিকভাবে বেরিয়ে আসা এক ধরনের উষ্ণ ঝর্নাধারা যার পানির তাপমাত্রা মানব দেহের তাপমাত্রার চেয়ে বেশি। অধিকাংশ উষ্ণ প্রস্রবণের সৃষ্টি হয় তপ্ত আগ্নেয় শিলা অতিক্রম করে ভূ-পৃষ্ঠে বের হয়ে আসা ভূগর্ভস্থ পানি দ্বারা অথবা তপ্ত আগ্নেয় শিলার নিকটে অবস্থানকারী ভূগর্ভস্থ পানির ভূ-পৃষ্ঠে উত্থিত হওয়ার কারণে। পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার বক্রেশ্বর, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েলোস্টোন পার্ক, নিউজিল্যান্ডের উত্তরাঞ্চলের দ্বীপসমূহ, আইসল্যান্ড, ইটালি ও জাপান উষ্ণ প্রস্রবণের জন্য বিখ্যাত। বর্তমানকালে জীবাশ্ম জ্বালানি দ্রুত হ্রাস পাওয়ার প্রেক্ষিতে উষ্ণ প্রস্রবণে ধারণকৃত ভূ-তাপীয় শক্তির (Geothermal energy) ব্যবহারের ব্যাপারে পুনরায় উংসাহ দেখা যাচ্ছে। ক্যালিফোর্নিয়া, ইটালী ও আইসল্যান্ডে এ ধরনের ভূ-তাপীয় শক্তির ব্যবহার হচ্ছে।
বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল, চট্টগ্রাম জেলা ও সিলেট জেলার পূর্বাঞ্চলে প্রচুর প্রাকৃতিক জলপ্রপাত রয়েছে। প্রতিটি পার্বত্য নদীর উৎস হচ্ছে পর্বতমালার পাদদেশের এক বা একাধিক প্রস্রবণ। প্রকৃতপক্ষে প্রতিটি ছোট পাহাড়ের পাদদেশেই ঝর্না দেখা যায়। নিকটবর্তী গ্রামবাসীরা এগুলি থেকে পানীয় জলের জোগান পায়। ধারণা করা হয় বান্দরবানের বগাকাইন হ্রদ বা বগা লেকের নিচে একটি উষ্ণ প্রস্রবণ আছে এবং লেকটির পানির রং ওই ঝর্নার পানি ক্ষরণের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তিত হয়। মহাভারতের দক্ষ-যজ্ঞ পর্বে বর্ণিত শাক্তপীঠের উৎস সংক্রান্ত কাহিনী অনুসারে বিষ্ণুর চক্রের আঘাতে খন্ড-বিখন্ড সতীর (দুর্গা দেবীর অপর নাম) দেহের দক্ষিণহস্তটি সীতাকুন্ড এলাকার একটি উষ্ণ প্রস্রবণের সন্নিকটে পতিত হয়েছিল। বর্তমানে ঝর্নাটির কোনো অস্তিত্ব না থাকলেও সে স্থানে প্রতিষ্ঠিত চন্দ্রনাথ মন্দিরের ঠিক নিচে শম্ভুনাথের মন্দির উষ্ণ প্রস্রবণটির স্মৃতি বহন করে চলেছে। [সিফাতুল কাদের চৌধুরী]